ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের কাছে প্রত্যাশা

যানজট সন্ত্রাস মাদকমুক্ত নগর চান নারায়ণগঞ্জের মানুষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

যানজট সন্ত্রাস মাদকমুক্ত নগর চান নারায়ণগঞ্জের মানুষ

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের কাছে সুশীল সমাজ ও নগরবাসী শীতলক্ষ্যা ব্রিজ নির্মাণ, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা, যানজট, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নগরী গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। শনিবার নারায়ণগঞ্জের সুশীল সমাজ, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ নানা পেশার লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা এ দাবি জানান। ২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ, কদমরসুল (শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত) ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার বিলুপ্ত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়। এর ওয়ার্ডের সংখ্যা ২৭টি ও সংরক্ষিত ৯টি। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর সিটি নির্বাচনে ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী একেএম শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত করে নাগরিক কমিটি থেকে প্রথমবারের মতো নারী মেয়র নির্বাচিত হন। এবার ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সাধারণ ভোটার, সুশীল সমাজ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক ও নারায়ণগঞ্জবাসীসহ সকল শ্রেণীর চোখেই নির্বাচনটি হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপির মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের চেয়ে ৭৯ হাজার ৫শ’ ৬৭ ভোট বেশি পেয়েছেন। এছাড়াও ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৭ জন ও ৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৯ জনসহ ৩৬ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে এবার অনেকেই নতুন মুখ রয়েছেন। নবনির্বাচিত মেয়র ও ৩৬ জন কাউন্সিলরের কাছে নগরবাসী শীতলক্ষ্যা ব্রিজ নির্মাণ, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা, যানজট, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নগরী গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। নগরীর দেওভোগ নাগবাড়ির বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের সবার যে প্রত্যাশা আমারও সেই একই প্রত্যাশা। তিনি যেন ভাল কাজ করে ও আমাদের ভাল সেবা করতে পারেন। সরকারী মহিলা কলেজের অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মৌসুমী আক্তার জানান, নগরীর রাস্তায় প্রায় সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়। মেয়রের কাছে আমার প্রত্যাশা থাকবে আমরা যেন যানজট মুক্ত রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারি। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোক্তার হোসেন জানান, নতুন মেয়রের কাছে প্রথমে আমাদের একটাই প্রত্যাশা। আগে আমাদের শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর একটি পাকা ব্রিজটি নির্মাণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মানবাধিকার কর্মী কবি লুৎফর রহমান বলেন, আগে অসমাপ্ত রাস্তাঘাট ও ড্রেন নির্মাণ করার দাবি জানাই। তিনি যেন উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রাশেদুল মতিন বলেন, প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জকে সকলে মিলে এগিয়ে নেয়া এবং মাদকমুক্ত নারায়ণগঞ্জকে একটি শিল্পবান্ধব স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। ১ নম্বর ওয়ার্ডের মিজমিজি পাইনাদী রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এমএ মতিন বলেন, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সিটি কর্পোরেশন চাই। আবারও নির্বাচিত মেয়র ডাঃ আইভী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিলে সিটি কর্পোরেশনে উন্নয়ন করবেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলরা যাতে মাদক ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় না দেন এবং নিজেরাও যাতে এগুলোতে জড়িয়ে না পড়েন সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, উন্নয়নের নগরী চাই, সন্ত্রাসমুক্ত নগরী চাই, চাঁদাবাজি ও মাদকমুক্ত নগরী চাই। নগরীর যানজট নিরসন চাই। পরিকল্পিত নগরী চাই। এটা গড়তে সকল মহলের সহযোগিতা চাই। কাউন্সিলদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নগরীর প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে যাতে ভাল কাজ হয়। নগর জীবন যাতে উন্নত হয়। মাদকমুক্ত হয়। সন্ত্রাসীরা যাতে প্রশ্রয় না পায় সেই দিকে কাউন্সিলরদের খেয়াল রাখতে হবে। যে কাউন্সিলররা এ সকল কর্মকা-ে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তারা যেন সংশোধন হয়ে যান। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক বলেন, নবনির্বাচিত মেয়রের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমরা তো মেয়রের দিকে তাকিয়ে থাকি। প্রথম কথা হলো এ পর্যন্ত মেয়র ডাঃ আইভী অনেক ভাল কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান (শেখ হাসিনা) তাকে (ডা. আইভীকে) মনোনয়ন দিয়েছেন এবং তিনি (আইভী) বিপুল ভোটে এবারও পাস করেছেন। সেহেতু তার বারগ্রেডিং ক্ষমতা বেশি। নবনির্বাচিত মেয়রের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হলো- প্রথমত. শীতলক্ষ্যা ব্রিজ নির্মাণ করা। তিনি চেষ্টা করলে সহজেই নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা ব্রিজ নির্মাণ করতে পারে। কারণ তিনি আগের মেয়রের চেয়ে এখনকার মেয়রের মধ্য আকাশ-পাতাল পার্থক্য। দ্বিতীয়ত, সমস্যা হলো- নগরীকে যানজট মুক্ত করা। যানজট সে একা নিরসন করতে পারবে না। এর সঙ্গে আরও তিনটি সংস্থা ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ ও প্রশাসন রয়েছে। এদের সঙ্গে সমন্বয় করে রুটগুলো নির্ধারণ করে কাজ করলে তবে যানজট অনেকটা কমে আসবে। সেই সঙ্গে চাষাঢ়ার পুলিশ ফাঁড়ি ও ডাকবাংলো অপসারণ করে রাস্তার সম্প্রসারণ করলে একদিকে ফতুল্লা ও লিঙ্ক রোড অন্যদিকে সলিমউল্লাহ রোড ও বঙ্গবন্ধু সড়কের যানজটের প্রভাব অনেকটা কমে আসবে। আরেকটি সমস্যা হলো- মাদকমুক্ত করা। মাদকমুক্ত করতে হলে ত্রিমুখী সহাতায় লাগবে। প্রশাসন, পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশন এক সঙ্গে সমন্বয় করে সিটি এলাকা থেকে মাদকমুক্ত করা যাবে। সর্বশেষ তিনি যেহেতু সিটি মাতা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটিকে শীতলক্ষ্যা দ্বারা বিভক্ত করা হয়েছে। শীতলক্ষ্যার পানির যে অতীত ইতিহাস, গৌরব রক্ষার্থে দূর্ষণ মুক্ত রেখে এটাকে বিভিন্ন জায়গায় ড্রেজিং করে শীতলক্ষ্যার অতীতের যে গৌরব সেই গৌরব ফিরে আনতে না পারলেও অন্তত তিনি ব্যবহারযোগ্য করতে পারবে। এই চারটি দাবি প্রত্যাশা করি তার কাছে। তিনি আরও বলেন, যে সকল ওয়ার্ডে মাদকের ছড়াছড়ি এবং যানজটের প্রচ- চাপ সেখানে কাউন্সিলররা মেয়রকে সহায়তা করলে মেয়র ও কাউন্সিলররা আরও জনপ্রিয় হবে এবং নারায়ণগঞ্জবাসী অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।
×