ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বছরের পর বছর ঝুলছে বাস ট্যাক্সি অটোরিক্সা নামানোর সিদ্ধান্ত ;###;চলছে ৪ হাজার বাস, ছয় হাজার অটোরিক্সা, শতাধিক ট্যাক্সি;###;বন্ধ হওয়ার পথে নতুন ট্যাক্সি সার্ভিস;###;আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনের দাবি

দুই কোটি মানুষের রাজধানীতে অপর্যাপ্ত গণপরিবহন ॥ ১৭ হাজারের কম

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

দুই কোটি মানুষের রাজধানীতে অপর্যাপ্ত গণপরিবহন ॥ ১৭ হাজারের কম

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে রাজধানীতে গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ। প্রায় দুই কোটি মানুষের এই শহরে চলছে ১৭ হাজারের কম গণপরিবহন! যা আন্তর্জাতিক কোন মানদ-ের মধ্যেই পড়ে না। সঙ্কট সমাধানে সরকারের উদ্যোগ আছে। কিন্তু গতি নেই। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালিতে যাচ্ছে সময়। ঢাকার রাস্তায় বর্তমানে বাস চলছে মাত্র চার হাজার। অটোরিক্সা ৫-৬ হাজার। ট্যাক্সিক্যাব শতাধিক। যদিও কাগজপত্রে ১৪ হাজারের বেশি অটোরিক্সা চলাচলের কথা বলা হচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, জনসংখ্যার অনুপাতে রাজধানীতে কমপক্ষে ২০ হাজার বাস প্রয়োজন। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ট্যাক্সি ও অটোরিক্সার বিকল্প নেই। যানজট, অব্যাহত লোকসান, যন্ত্রপাতিতে মাত্রাতিরিক্ত শুল্কসহ নানা কারণে বাস নামাতে আগ্রহ হারাচ্ছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, নতুন করে বাস নামানো একেবারেই অনিশ্চিত। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে নগরীতে চলা এসি বাস সার্ভিসগুলোও। এদিকে তিন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রায় আট হাজার অটোরিক্সা নামানো প্রক্রিয়া ঝুলে আছে বছরের পর বছর। ভাড়া বেশি, যানজটসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় নতুন করে প্রায় এক হাজার ট্যাক্সিক্যাব নামানো হচ্ছে না। লোকসানের কারণে যাও নেমেছিল সেগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। সিদ্ধান্তহীনতায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রায় ৪০০ বিআরটিসি বাস কেনার প্রক্রিয়াও এগুচ্ছে না। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও মালিক সমিতির উদ্যোগে নতুন করে তিন হাজার বাস নামানোর নতুন একটি প্রক্রিয়া শুরু হলেও অন্তত ছয় মাস ধরে এ নিয়ে কোন আলোচনা নেই। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, ইতোমধ্যে বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হলে নির্ধারিত কোম্পানির পরিচালনায় হাজারের বেশি বাস নামবে ঢাকার রাস্তায়। মেট্রো রেলের কাজ শেষ হলে ঘণ্টায় যাত্রী পরিবহন হবে প্রায় ৬০ হাজার। তবে এসব সুবিধা নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে ৬ থেকে আট বছর পর্যন্ত। সেই সঙ্গে বাস, ট্যাক্সিসহ অটোরিক্সা নামানোর বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। নতুন বাস নামানোর প্রক্রিয়ায় গতি নেই ॥ ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকা শহরে মানুষের সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখ। আশপাশের মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি মানুষের চলাচল নগরীতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহন সমস্যা নিরসনে সরকারের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ না থাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বছর দশেক আগে ঢাকার সড়কে বেসরকারী উদ্যোগে প্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সার্ভিস নিয়ে এসেছিল ট্রান্স সিলভা লিমিটেড। এখন এসি সার্ভিসগুলো বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি সড়ক পরিবহনমন্ত্রী রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট সমাধানে করণীয় প্রসঙ্গে বলেন, ১০০টি এসি বাস ও ২০০টি দোতলা বাস নামানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি কোম্পানিকে বাস নামানোর অনুমতি দেয়ার কথা জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বিআরটিসির আরও ১০০ জোড়া বাস ও ২০০ দোতলা বাস আনতে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমতি পেয়েছি। এসব পরিবহন রাস্তায় নামলে গণপরিবহন সংকট অনেকটাই কমে আসবে। মানুষ সাচ্ছন্দ্যে রাজধানীতে চলাফেরা করতে পারবেন বলে জানান তিনি। এসব বিষয়ে সড়ক সচিব এম এ এন সিদ্দিক গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারীভাবে ৯৮০টি গাড়ি কেনা হয়েছে। আরও ৫০০টির প্রকিউরমেন্ট দেয়া আছে। আর বেসরকারী উদ্যোক্তারা যতো ইচ্ছা গাড়ি নামাতে পারেন, এ অনুমতি তাদের দেয়া আছে। এছাড়া গণপরিবহন সমস্যা নিরসনে আমরা মেট্রোরেল করছি। সর্বশেষ সড়ক পরিবহনমন্ত্রী জানিয়েছেন, অল্প সময়ের মধ্যে ভারত থেকে বিআরটিসির এক হাজার গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সহাসচিব আবুল কালাম জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীতে নতুন নতুন বাস নামাতে সরকারীভাবে কোন বাধা নেই। মূল সমস্যা হলো যানজট। যানজটের কারণে অব্যাহত লোকসানের মুখে পরিবহন ব্যবসায়ীরা। অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। বিগত ৩-৪ বছরে অন্তত ৫০টি পরিবহন কোম্পানি বন্ধ হয়ে হবার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, পুরনো কেউ কেউ কিছু বাস নিয়ে আবারও নামার চেষ্টা করলেও শুরুতেই হোছট খাচ্ছেন। প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ, রাস্তা ও ফুটপাথ দখলমুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে এই পরিবহন নেতা বলেন, নগরীর বেশিরভাগ রাস্তা এখন প্রাইভেটকারের দখলে। সঙ্গত কারণে যানজট লেগেই থাকে। বর্তমান অবস্থায় প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ ও রাস্তা দখলমুক্ত করা না গেলে দিন দিন রাজধানীতে চলা বাসগুলো আরও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজন ২০ হাজার বাস ॥ রাজধানীতে মাত্রাতিরিক্ত যানজট, রাস্তা ও ফুটপাথ দখল, গাড়ি-যন্ত্রাংশ আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক ও প্রাইভেটকারের কারণেই নতুন নতুন বাস নামাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন বেসরকারী খাতের পরিবহন মালিকরা। তারা বলছেন, উন্নত দেশগুলোতে নগর সুরক্ষা ও জনস্বার্থে কঠিন কঠিন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনৈতিক বিবেচনায় উদ্যোগ নেয়া হয়। তারা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে যে এলাকায় বসবাস করেন সে এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের পড়াশোনা করানো বাধ্যতামূলক। ঢাকায় সব ব্যতিক্রম। নামিদামি স্কুলগুলোতে ভর্তির প্রতিযোগিতা। প্রতিটি বিত্তবান শিক্ষার্থীর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে একটি প্রাইভেটকার। এক ভিকারুননিসা স্কুলের তিন ক্যাম্পাসে ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য প্রতিদিন রাজধানীতে নামছে অন্তত ১০ হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ জনকণ্ঠকে বলেন, যানজটের কারণে বাস মালিকরা এখন আর গাড়ি চালাতে পারছেন না। নগরীতে প্রাই ২০ হাজার বাসের প্রয়োজন থাকলেও আছে মাত্র চার হাজার। অথচ বিআরটিএ থেকে অনুমোদন নেয়া আছে সাত হাজারের। তবে গেল দুই বছরে অনুমোদিত প্রায় ৮০০ নতুন বাস রাস্তায় নেমেছে। বাস নামানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কাউন্টারের জন্য কোন অনুমোদন নেই, পার্কিং সুবিধা নেই, যানজট, পুরনো গাড়ির রুট পারমিট দেয়া বন্ধ, মাত্রাতিরক্ত শুল্ক ধরা হয়েছে। তাই অব্যাহত লোকসানের মুখে গাড়ি ব্যবসা এখন আর ভাল যাচ্ছে না। জনস্বার্থে গণপরিবহন বাড়াতে হলে, পার্কিং বে করার পাশাপাশি প্রাইভেটকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঢাকা মহানগরীতে প্রাইভেটকারে সিএনজি সরবরাহ একেবারে বন্ধের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ট্যাক্সি নামানোর সময় মালিকদের শুলকমুক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে। নতুন বাস নামানো ও পার্টস আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে দিন দিন রাজধানীতে চলা বাসের সংখ্যা আরও কমবে। বাড়তে সঙ্কট। বেড়েছে মানুষ-কমেছে গাড়ি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ’র ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ১৬৮টি রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা ৫ হাজার ৪০৭টি। এর মধ্যে- মিনিবাস ৩ হাজার ১২৬টি আর বাস আছে ২ হাজার ২৮১টি। বিআরটিএ এ হিসাব দিলেও পরিবহন মালিকদের হিসাবে, রাজধানীতে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা চার হাজারেরও কম। গণপরিবহন সংকট নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক সারোয়ার জাহান বলেন, দেড় কোটির বেশি জনসংখ্যার এ শহরে বাস প্রয়োজন অন্তত ১২ থেকে ১৩ হাজার। এ সংখ্যা বর্তমানে তিন হাজারের মতো। এর প্রধান কারণ সরকার গণপরিবহন নিয়ে মাথা ঘামায় না। ঢাকায় যানজটের কারণে বাস মালিকরাও কাক্সিক্ষত সংখ্যায় ট্রিপ পান না। আর এ কারণে তারাও এ সেবা নিয়ে খুব বেশি উৎসাহী নন। সড়কে গণপরিবহন হিসেবে বাসের সংখ্যা কমায় ক্রমশ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে বলেও মনে করেন এ নগর পরিকল্পনাবিদ। এটা খুবই স্বাভাবিক। মানুষ চলাচল করবে কিভাবে? গণপরিবহন না থাকলে প্রাইভেট গাড়ি তো বাড়বেই, এতে রাস্তায় যানজট বাড়বে বলেন তিনি। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুসারে, এক হাজার ৫২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঢাকায় সড়ক রয়েছে দুই হাজার ৫৫০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে প্রধান সড়ক ৮৮ কিলোমিটার, যার বেশিরভাগই দখল করে নেয় ব্যক্তিগত যানবাহন। দুই বছর আগের এক হিসাবে দেখা যায়, মোট যানবাহনের মধ্যে ঢাকায় চলাচলকারী মানুষের মাত্র ছয় শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। অথচ এই গাড়িগুলোই সড়কের ৮০ শতাংশ জায়গা জুড়ে থাকে। নতুন ট্যাক্সি নামানো হচ্ছে না ॥ ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল উদ্বোধন করা হয় নতুন ট্যাক্সি সার্ভিস। ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসেস ও অপর বেসরকারী সংস্থা তমা গ্রুপ একই ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনা শুরু করে। পর্যায়ক্রমে ঢাকা ও চট্টগ্রামে হাজারেরও বেশি গাড়ি পরিচালনা করার কথা ছিল দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামে গিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন যাত্রীদের চাহিদা ও পরিবেশগত দিক বিবেচনা করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৬৫০টি ট্যাক্সিক্যাব নামানো হবে। তবে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ এক হাজার ট্যাক্সি নামানোর। এ নিয়ে বছরের পর বছর চলছে চিঠি চালাচালি। কিন্তু গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে গতি নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন কোম্পানি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু যাদের অনুমতি দেয়া হয়েছিল তারা এখন পিছ পা হওয়ায় নতুন করে জটিলতা শুরু হয়েছে। অনেকটা রাজনৈতিক বিবেচনায় বিষয়টি চলে যাওয়ায় সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলেও জানান তিনি। নতুন আরও ট্যাক্সি নামানো প্রসঙ্গে তমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান ভর্ঁূইয়া মানিক জনকণ্ঠকে বলেন, অব্যাহত লোকসানের মুখে নতুন ট্যাক্সিক্যাবগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। চুক্তি থাকলেও নতুন করে ট্যাক্সিক্যাব নামানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে ট্যাক্সি নামানো প্রক্রিয়া বন্ধ। এর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন দেশে এয়ারপোর্টে ট্যাক্সি ঢুকতে দেয়া হয় না এমন নজির নেই। গণপরিবহন বলতে ট্যাক্সির গুরুত্ব অপরিসীম। ২০০২ সালে প্রথমে ৮ বছর এবং পরবর্তীতে ২ বছর বাড়িয়ে দশ বছর মেয়াদী কালো এবং হলুদ টেক্সিক্যাব মিলিয়ে রাজধানীতে দশ হাজার এবং রাজধানীর বাহিরে ২ হাজার ট্যাক্সিক্যাবের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। উভয় ধরনের ট্যাক্সিক্যাবের মেয়াদ গত ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। চালকদের প্রবল আন্দোলনের মুখে পুরনো ট্যাক্সি তুলে দেয় সরকার। নতুন ট্যাক্সি নামানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রেক্ষাপটে রাজধানী এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামে নতুন এক হাজার ট্যাক্সিক্যাব নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর মধ্যে অর্ধেক নামানো হবে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এবং বাকি অর্ধেক ‘তমা’ নামের একটি পরিবহন কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আরেকটি সূত্র জানায়, অন্তত তিন বছর আগে রাজধানীতে ট্যাক্সি সার্ভিস নামানোর জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিআরটিএ। এতে ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। যাচাই বাছাই শেষে কয়েকটি যোগ্য হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হলেও এখন দুটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তাও নামমাত্র। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত ট্যাক্সি নামানোর অনুমতি দেয়ার বিষয়টি নানা কারণে ঝুলে আছে বলে জানান তিনি। অটোরিক্সা নামানোর প্রক্রিয়ায় গতি নেই ॥ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে রাজধানীতে পাঁচ হাজার অটোরিক্সা নামানোর প্রক্রিয়া। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে নতুন ৯ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা নামানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৫ হাজার এবং চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৪ হাজার। বিআরটিএ সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের ৬ নবেম্বর চালকদের গণপরিবহন হিসেবে পাঁচ হাজার সিএনজি চালিত অটোরিক্সার নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সে সময় যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স আছে এমন ৩ হাজার ১৯৬ জনকে অটোরিক্সার নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু গণপরিবহন হিসেবে নিবন্ধন নেয়া সিএনজি অটোরিক্সা ব্যবসায়ী মালিক সমিতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন। বিআরটিএ ওই মামলা পরিচালনা না করায় বাধ্য হয়ে ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন সরকারের পক্ষ হয়ে মামলা পরিচালনা করে। ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটি খারিজ করে দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করে সিএনজি অটোরিক্সা ব্যবসায়ী মালিক সমিতি। আপীল নিষ্পত্তি হলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইনী জটিলতা শেষে অটোরিক্সা নামানোর জন্য আবেদন আহ্বান করে বিআরটিএ। এতে তিন হাজার ১৯৩টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। এক হাজার ৮০০ বেশি আবেদন জমা না পাড়ায় প্রাথমিকভাবে বিষয়টি ঝুলে যায়। ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ফের সিএনজি নামানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে। কিন্তু ‘অটোরিক্সা চালক সমবায় ফেডারেশন লিমিটেড’-এর কাছে ১৯৯১-৯৪ সালের মেয়াদে ৩২ কোটি টাকা ব্যাংক লোন নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকা না দেয়ায় পুরো প্রক্রিয়াটি স্থগিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংকট সমাধানে অটোরিক্সা মালিক শ্রমিকদের পক্ষ থেকে লোন খেলাপীদের বাদ দিয়ে বাকি অটোরিক্সা রেজিস্ট্রেশনের জন্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি ঝুলে থাকায় পুরো প্রক্রিয়াটি থামকে আছে। জানতে চাইলে ঢাকা জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন করে অটোরিক্সা নামানো হলে রাজধানীতে পরিবহন সংকট কমে আসত। মালিকরা ইচ্ছামতো চালকদের কাছ থেকে জমা আদায় করতে পারত না। ঢাকা মহানগর সিএনজি অট্রোরিক্সা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বরকতউল্ল্যাহ বুলু জনকণ্ঠ বলেন, ২০০৮ সালে চালকদের অটোরিক্সা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে ২ হাজার ৬৯৬টি মিশুকের পরিবর্তে অটোরিক্সা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। ইতোমধ্যে ৪০০ নতুন অটোরিক্সা রাস্তায় নেমেছে। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর সিএনজি অট্রোরিক্সা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম খসরু জনকণ্ঠকে বলেন, চালকদের অটোরিক্সা দেয়ার বিষয়টি সরকারের সদিচ্ছার অভাবে আটকে আছে। মন্ত্রণালয় বিআরটিএকে নির্দেশ দিলেই নতুন অটোরিক্সা রাস্তায় নামতে পারে বলে জানান তিনি।
×