ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীবাসীকে বিজয় দিবসের উপহার

হাতিরঝিলে চালু হলো ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ সার্ভিস

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬

হাতিরঝিলে চালু হলো ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ সার্ভিস

মশিউর রহমান খান ॥ সৌন্দর্য ভোগ করার পাশাপাশি সহজে যাতায়াত করতে সড়ক পথে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালুর পর রাজধানীর ফুসফুস খ্যাত হাতিরঝিল লেকে এবার চালু করা হয়েছে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ সার্ভিস। সড়ক পথের পাশাপাশি জলপথে যাত্রী সাধারণের সহজে চলাচল নিশ্চিত করতে ও হাতিরঝিলকে রাজধানীর বিনোদনের অন্যতম স্থান হিসেবে পরিণত করতে এই সার্ভিস চালু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই ট্যাক্সি চলবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজউকের বিশেষায়িত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এদিকে আগামী ৩ মাসের মধ্যে হাতিরঝিলে আরও ২টি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ওয়াটার ট্যাক্সি চালুর ঘোষণা দিয়েছে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওয়াহিদ এন্টারপ্রাইজ। শুক্রবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হাতিরঝিলের মেরুল বাড্ডা অংশে ওয়াটার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এ সার্ভিসটির শুভ উদ্বোধন করেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীবাসীকে এ সার্ভিস উপহার দেয়া হয়েছে। অপরদিকে হাতিরঝিলে চলাচলকারী নাগরিকগণ ও এই এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে শীঘ্রই নতুন একটি থানা উদ্বোধন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। সূত্র জানায়, নতুন এ সার্ভিসের অর্জিত আয় হাতিরঝিলের সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি বিদ্যুত, পানি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যয় করা হবে বলে জানা গেছে। উদ্বোধনের সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার, রাজউক চেয়ারম্যান বজলুল করিম চৌধুরী, রাজউক সদস্য (উন্নয়ন) আব্দুর রহমান, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী রায়হানুল ফেরদৌস, হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক জামাল আখতার ভুইয়া, অতিরিক্ত উপ-প্রকল্প পরিচালক (সেনাবাহিনী অংশ) লেফটেনেন্ট কর্নেল নিজাম উদ্দীন, গুলশান জোনের পুলিশের উপ-কমিশনার মোশতাক আহমেদ খান,অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আহাদ হোসেন, প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর কাজী শাকিল হোসেনসহ রাজউক ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হাতিরঝিলে চলাচলকারী ও বসবাসকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও একটি থানার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। থানাটির কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করতে কাজ চলছে। শীঘ্রই থানাটির উদ্বোধন করা হবে। এছাড়া এ ট্যাক্সি সার্ভিসটি চালুর মাধ্যমে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য পিপাসুগণ আরও সুন্দরভাবে তা দেখার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি কোন প্রকার ট্রাফিক জ্যাম ছাড়াই নির্বিঘেœ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবেন। তিনি এটিকে রাজধানীবাসীর বিনোদনে নতুন দিগন্ত বলে উল্লেখ করেন। জানা গেছে, এসব ট্যাক্সিতে চড়তে বাড্ডা লিংক রোডের পথে ভাড়া হবে ২৫ টাকা, রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত ৩০ টাকা। প্রাথমিকভাবে তিন মাস এই নিয়মে পরিচালিত হবে। পরে তা যাত্রী ও আয়ব্যয়ের ওপর নির্ভর করে কম বেশি হতে পারে। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ২৫ মিনিট। রাস্তায় কোন প্রকার স্ট্যান্ড না থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যেই যাত্রীরা চলাচল করতে পারবেন। এটি চালু হলে বাড্ডা, গুলশান, রামপুরা, খিলগাঁওসহ নগরীর পূর্বাংশের মানুষ কাওরান বাজার, মগবাজার, দিলু রোড, ইস্কাটন, বাংলামোটর, তেজগাঁও এলাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্বোধনের পর নতুন এ সার্ভিস দিয়ে বিনামূল্যে কয়েকদফা দেশী বিদেশী আগ্রহী যাত্রীগণকে নিয়ে ৪টি ওয়াটার ট্যাক্সি এক প্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তে নিয়ে আসা যাওয়া করে। পরে অতিরিক্ত যাত্রী হওয়ায় সামলাতে না পেরে বিনামূল্যে যাত্রী চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সাজিদা পারুল নামের এক যাত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন এ সার্ভিসটি হাতিরঝিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে চলাচলের জন্য বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পরিবেশবান্ধব এ ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো দিয়ে চলাচল করলে হাতিরঝিলের প্রকৃত নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে ও সময়ও বাঁচবে। ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়ে দেখা গেছে, এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে নির্দিষ্ট গতিসীমায় প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে। তবে রাস্তায় কোন স্টপিজ নেই। অপরদিকে সার্ভিসটি চালু করা হলেও হাতিরঝিল লেকের পানি এখনও পরিষ্কার করা হয়নি। এ নিয়ে কাউকে কাউকে সার্ভিসটি চালু ও স্থায়ীত্ব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কোন কোন স্থানের পানিতে গন্ধ রয়েছে। দুই প্রান্তের দুটি স্টেশনে স্ন্যাকস শপ করার কথা থাকলেও এখনও তা চালু করা হয়নি। এছাড়া রোদ বা বৃষ্টিতে যাত্রীদের বসার জন্য কোন ছাউনি তৈরি করা হয়নি। বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে ট্যাক্সিগুলোতে ৩০টি আসনের মধ্যে নারী শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৮টি আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। রাজউক সূত্র জানায়, বেগুনবাড়ী মোড় থেকে দুটি রুটে এ সার্ভিসটি চালু করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে বেগুনবাড়ী মোড় থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত ট্যাক্সি সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। এজন্য বেগুনবাড়ী অংশে ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় দুটি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড নির্মাণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে হাতিরঝিলের গুলশান এলাকায় নতুন দুটি ব্রিজ তৈরির পর গুলশান লেক হয়ে বারিধারা ও বনানী লেক পর্যন্ত নতুন রোড চালু করা হবে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক জামাল আখতার। তিনি জানান, প্রতিটি ট্যাক্সিতে ৪০ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন থাকছে। শক্তি থাকা সত্ত্বেও বেশি গতিতে চললে হাতিরঝিলের পাড় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এসব বিবেচনায় ওয়াটার ট্যাক্সির গতি সীমিত রাখা হবে। সার্ভিসটি রাজধানীর সম্পূর্ণ নতুন ও ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগ। তবে এফডিসি মোড় থেকে গুলশান লেক হয়ে বারিধারা পর্যন্ত এ সেবা পৌঁছে দিতে হলে লেকের ওপর দিয়ে চলা বাড্ডা লিংক রোড ও গুলশান-বারিধারা সড়কে দুটি ব্রিজ করতে হবে। এরপর ও রুটেও এটি চালু করা হবে। রাজউক সূত্র জানায়, সার্ভিসটিতে নগরবাসীর সাড়া পেলে এ ট্যাক্সি সার্ভিস পরে গুলশান লেক হয়ে বারিধারাতেও সম্প্রসারিত করা হবে। লিজ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান আগামী ২০ বছর এই ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা সার্ভিস পরিচালনা করবে। প্রতিটি ওয়াটার ট্যাক্সি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। ইঞ্জিন আনা হয়েছে চীন থেকে। তবে চট্টগ্রামের একটি কারখানায় এসব ওয়াটার ট্যাক্সির কাঠামো তৈরি হয়েছে। চারটি ট্যাক্সির নির্মাণকাজ আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় হাতিরঝিলে নিয়ে আসা হয়েছে।
×