ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে

নিষিদ্ধ ওষুধ সম্পর্কে জানেন না ক্রেতা, বিক্রেতা ও চিকিৎসকরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬

নিষিদ্ধ ওষুধ সম্পর্কে জানেন না ক্রেতা, বিক্রেতা ও চিকিৎসকরা

নিখিল মানখিন ॥ নিষিদ্ধ কোম্পানিগুলোর ওষুধ সম্পর্কে জানতে পারে না জনসাধারণ। শুধু তাই নয়, অনেক চিকিৎসক ও খুচরা ওষুধ বিক্রেতাদের পক্ষেও জানা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে বিষয়টি জনসাধারণকে অবহিত করানোর কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। এ সুযোগে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও অনেক কোম্পানির ওষুধ বাজারে পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় সীমিত পরিসরে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই বিষয়টি আলোচনার বাইরে চলে যায়। অজান্তেই ব্যবস্থাপনায় নিষিদ্ধ ওষুধ লিখে দেন অনেক চিকিৎসক এবং ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন ফার্মেসির লোকজন। ওই ওষুধ খেয়ে সুস্থ না হয়ে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগেন রোগীরা। সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিষিদ্ধ ওষুধ জব্দ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশের কয়েক লাখ ফার্মেসি থেকে ওষুধ তুলে নেয়া কোন ওষুধ কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয় এবং কোম্পানিগুলো চেষ্টা করে না। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রি হওয়ার কারণে নিষিদ্ধ ওষুধসমূহ সাধারণ মানুষের হাতে সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরের এপ্রিলে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরির অভিযোগে ২০টি কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এছাড়া ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের এ্যান্টিবায়োটিক (নন-পেনিসিলিন, পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপ) উৎপাদনের অনুমতি বাতিল, ২২টি কোম্পানির পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপের এ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনের অনুমতি স্থগিত করার সুপারিশ করা হয়। জাতীয় সংসদ ভবনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ আসে। বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিবেদনে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়ায় ২০টি কোম্পানির উৎপাদনের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়। কোম্পানিগুলো হলো- এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যাল, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যাল, ড্রাগল্যান্ড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, জলপা ল্যাবরেটরিজ, কাফিনা ফার্মাসিউটিক্যাল, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ড্রাগ, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল, রিমো ক্যামিক্যাল, রিদ ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যাল, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টার ফার্মাসিউটিক্যাল, সুনিপুন ফার্মাসিউটিক্যাল, টুডে ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। নন-পেনিসিলিন, পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপের ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিল করার সুপারিশ করা ১৪টি কোম্পানি হচ্ছে- আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যাল, বেঙ্গল ড্রাগস, ব্রিস্টল ফার্মা, ক্রাইস্ট্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যাল, এমএসটি ফার্মা, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যাল, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ, ফনিক্স কেমিক্যাল, রাসা ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সেভ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপের ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিল করার সুপারিশ করা ২২টি কোম্পানি হচ্ছে- আমিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, এ্যাজটেক ফার্মাসিউটিক্যাল, বেঙ্গল টেকনো ফার্মা, বেনহাম ফার্মাসিউটিক্যাল, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যাল, ডিসেন্ট ফার্মা, ড. টিআইএম’স ল্যাবরেটরিজ, গ্লোবেক্স ফার্মাসিউটিক্যাল, গ্রিনল্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল, ইনোভা ফার্মাসিউটিক্যাল, মার্কস ড্রাগস, মেডিম্যাট ল্যাবরেটরিজ, মডার্ন ফার্মাসিউটিক্যাল, মাইস্টিক ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ, অর্গানিক হেলথ কেয়ার, ওয়েস্টার ফার্মা, প্রিমিয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল, প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যাল, সীমা ফার্মাসিউটিক্যাল, ইউনাইটেড কেমিক্যাল এ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল এবং হোয়াইট হর্স ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। এছাড়া দুটি প্রতিষ্ঠানের মানবদেহে বাহ্যিকভাবে ব্যবহার্য ওষুধ, একটিকে প্রাণিসম্পদে ব্যবহার্য ওষুধ এবং অপর একটিকে সেফালোস্পোরিন বাদে অন্যান্য গ্রুপের ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। পরবর্তীতে আগস্ট মাসে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০টি কোম্পানির ওষুধ এবং ১৪টি কোম্পানির এ্যান্টিবায়োটিক বাজার থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মোঃ ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর পক্ষে আবেদনটি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। প্রতিটি ফার্মেসি মনিটরিং করার সামর্থ্য নেই ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ॥ নিষিদ্ধ কোম্পানি ও ওষুধসমূহের বিষয়ে সাধারণ মানুষের কোন ধারণা নেই। ফার্মেসিগুলো থেকে ওষুধ উঠিয়ে নেয়ার খবরও বলতে পারেন না খুচরা ওষুধ বিক্রেতারা। নিষিদ্ধ ওষুধসমূহের বিষয়ে অধিকাংশ চিকিৎসকের ধারণা না থাকায় জনস্বাস্থ্য আরও হুমকির মধ্যে পড়েছে। অনেক চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে নিষিদ্ধ ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। আর ডাক্তারি প্রেসক্রিশন দেখে রোগীর হাতে নিষিদ্ধ ওষুধ তুলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। সব কিছুই ঘটছে নিষিদ্ধ কোম্পানি ও ওষুধের বিষয়ে ধারণা না থাকার কারণে। এদিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারা দাবি করেন, নিষিদ্ধ ঘোষণার পর তাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাজার ঘুরে ১০টি কোম্পানির ওষুধ বিক্রি হওয়ার প্রমাণ পান। কোম্পানিগুলো হলো হলো : মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যালস্ লি., ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ লি., এভার্ট ফার্মা লি., ইন্দো বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস্ লি., আদ্ব-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লি., ক্যাফমা ফার্মাসিউটিক্যাল এসব কোম্পানিকে কারণ দর্শাও নোটিস দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। তারা কোম্পানিগুলোকে সময় বেঁধে দিয়ে বাজার থেকে সব ধরনের ওষুধ প্রত্যাহারের চিঠি দেয়।
×