ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬

চট্টগ্রামে ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে ট্রাফিক পুলিশের সকালটা শুরু হয় চাঁদাবাজির মধ্য দিয়ে। পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি করেই ট্রাফিক সার্জেন্ট থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। প্রশ্ন উঠেছে, মূল্যবান মোটরসাইকেল কেনার অর্থের যোগান দিয়েছে কে? এদিকে, পরিবহন শ্রমিকদের হয়রানি করে চাঁদা আদায়ের ঘটনা ওপেনসিক্রেট হলেও দেখার কেউ নেই। একশ্রেণীর অসাধু পরিবহন মালিক বিআরটিএ’র ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস ও এ্যাডভান্স ট্যাক্স পরিশোধ না করে ট্রাফিক পুলিশকে চাঁদাবাজিতে সহায়তা করছে। পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পরিবহন শ্রমিকরা গত সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছে। আবার সিএমপির উর্ধতন কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি বন্ধে। আবার বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে এসব পরিবহন মালিকের সঙ্গে সখ্য থাকায় বছরের পর বছর টোকেন দিয়ে সরকারী ফি ফাঁকি দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। নগরীর ১২টি থানা এলাকায় প্রায় দেড় শ’ স্পটে প্রতিনিয়ত চলছে ট্রাফিক পুলিশ ও থানা পুলিশের চাঁদা বাণিজ্য। তবে বেরসিক পুলিশের হাত থেকে পরিবহনে থাকা দম্পতি যুগলও রক্ষা পায় না। তবে প্রেমিক-প্রেমিকা হলে তো কথাই নেই। প্রেমিককে ঠেকিয়ে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা যেমন চলে, প্রেমিকাকে অশ্লীল কথাবার্তা বলে অর্থ আদায়ের কৌশলও বাস্তবায়ন করে পুলিশ। প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৭টায় নগরীর জাকির হোসেন রোডের চারটি স্পটে ট্রাফিক পুলিশ ও থানা পুলিশ দেদার পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে চাঁদা আদায়ের কৌশল দেখা গেছে ওই সড়কের আকবর শাহ মাজারের সামনে। ট্রাফিক সার্জেন্ট জাবেদ মোটরসাইকেল (হিরো স্পø্যান্ডার মডেলের রেজিস্ট্রেশনবিহীন নং-সিএমপি-১১১) ও তার দুই সহযোগী কনস্টেবল মোটরসাইকেল (এফ২৫ মডেলের ঢাকা মেট্রো-ল-২৫-৪১০৬) হাকিয়ে অবস্থান নেয় পাঞ্জাবী লেনের মোড়ে। এই মোটরসাইকেলটির মূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা। দীর্ঘ প্রায় দেড় ঘণ্টা এই তিনজনের চাঁদাবাজিতে পুরো সড়ক জ্যামে পরিণত হয়। তবুও নাছোড়বান্দা ট্রাফিক পুলিশ পরিবহন জট উপেক্ষা করেই চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছে। দর কষাকষির মাধ্যমে চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হলে তাৎক্ষণিক ঠুকে দেয়া হয়েছে মামলা। ঘণ্টা দেড়েকের এই অভিযানে কমপক্ষে অর্ধশত গাড়িকে রাস্তার মাঝখানে সিগন্যাল দিয়ে থামিয়েছে সার্জেন্ট জাবেদের নেতৃত্বে থাকা দুই কনস্টেবল। তবে অভিযোগ রয়েছে, মামলা প্রদানের এই সিøপ ট্রাফিক পুলিশ নিজেরাই ছাপিয়ে থাকে। ফলে সরকারী কোষাগারে জরিমানার অর্থ যেমন জমা হয় না তেমনি পকেট পুরছে ট্রাফিক বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত। অভিযোগের এ বিষয়টিও পরীক্ষিত হচ্ছে নগরীর আগ্রাবাদের বাদামতলী মোড়স্থ ট্রাফিক বিভাগের ডকুমেন্ট রিকুইজিশন সেন্টারে। মামলার বিপরীতে পরিবহনের কাগজপত্রগুলো ছিনিয়ে নেয়া হয় চালক থেকে। পরে ওই কাগজপত্র বাদামতলীস্থ দফতর থেকে নিতে গেলেই দেখা যায় দর কষাকষির মাধ্যমে সরকারী অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা। এদিকে, নগরীর সিটিগেট এলাকা থেকে শুরু করে কাস্টমস পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে তথা সিটি গেট পুলিশ বক্স, একে খান মোড়, অলঙ্কার মোড়, নয়াবাজার, তাসফিয়া কমিউনিটি সেন্টার, বড়পুল, নিমতলসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান এবং পিকআপের ওপর চলে সার্জেন্টদের বাণিজ্য। অপরদিকে, খুলশী থানা পুলিশের একাধিক টিম পাহাড়তলী পুলিশ বিট থেকে শুরু করে টাইগার পাস পর্যন্ত গাড়ি তল্লাশির নামে চালায় চাঁদা বাণিজ্য। কর্ণফুলী ব্রিজের অপরপ্রান্তে বাকলিয়া থানা পুলিশও একইভাবে আদায় করছে চাঁদা। মাঝখানে টোল প্লাজায় পরিবহন থেকে নির্ধারিত ফি বাদেও পরিবহন চালকদের গুনতে হচ্ছে উভয় দিকে থাকা পুলিশের চাঁদা।
×