ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী-১৬

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী-১৬

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের আমেজ শেষ হতে না হতেই ১ ডিসেম্বর পর্দা উঠেছে দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর। উল্লেখ্য, মাসব্যাপী এই প্রদর্শনী এশীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আয়োজন। এবার এতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ৫৪টি দেশের চিত্রশিল্পী, শিল্পসমালোচক ও মিউজিয়াম কিউরেটর অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা, চিত্রশালাসহ বিভিন্ন গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হবে প্রদর্শনী, আলোচনাসভা, সেমিনার ইত্যাদি। উৎসবের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে কোরীয় এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে ৫-৭ ডিসেম্বর তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে আর্ট ক্যাম্প। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৫০ জন শিল্পীর ২৬০টি শিল্পকর্ম ও স্থাপনাশিল্প প্রদর্শিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি সেরা শিল্পীদের জন্য রয়েছে একাধিক গ্র্যান্ড প্রাইজসহ সম্মানসূচক পুরস্কার। এবারের আয়োজনটি উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে। স্মর্তব্য যে, দেশের বরেণ্য বিশিষ্ট এই চিত্রশিল্পী ২০১৪ সালের ৩০ নবেম্বর বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে তৃতীয় বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবে অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেয়ার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন মঞ্চেই। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে শিল্প সাধনায় নিমগ্ন থেকে এই শিল্পী দেশের চিত্রকলা তথা চারুকলার জগতকে উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ করেছেন। দেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও এই শিল্পী সর্বদাই ছিলেন এক অকুতোভয় অগ্রসেনানী। আর এখানেই নিহিত রয়েছে চিত্রকলা ও শিল্পকলার সুদূরপ্রসারী প্রভাব ও অপার মহিমা। শিল্পকলার আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে খোদ শিল্পীমহলসহ শিল্প সমালোচক ও বোদ্ধাদের মধ্যে বিতর্ক আছে। কেউ বলেন, জীবনের জন্য শিল্প। আবার, কেউবা বলেন, শিল্পের জন্য শিল্প। একদল আছেন যারা শিল্পকে জীবন ও সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে অবলম্বন করতে চান। আবার একদল কেবলই কলাকৈবল্যবাদী। চিত্রকলা বা শিল্পকলার বাহ্যিক আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। শিল্পী তার আপন মনের খেয়ালে নিমগ্ন হয়ে থাকেন চিত্র আরাধনায়, অঙ্কন শৈলীতে। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে রচনা করেন দৃষ্টিনন্দন ও অনবদ্য এক একটি শিল্পকর্ম। এহ্ বাহ্য। তবে এর যে অন্তর্নিহিত কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে না, তা তো নয়। শিল্পী তার আনন্দ-বেদনা-সুখ-দুঃখ এমনকি বাদ-প্রতিবাদ ও ক্ষোভ-বিক্ষোভ ভাগ করে নিতে চান দর্শক তথা জনগণের সঙ্গে। আর এখানেই শিল্প সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে জীবনের সঙ্গে, সমাজ বাস্তবতা এমনকি আন্দোলন, সংগ্রামের সঙ্গে। শিল্পকর্ম তখনই সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে যখন এর সঙ্গে সংযোগ ঘটে জীবনের, সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, চাওয়া পাওয়ার। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যগুলো দেখলেই এর সম্যক প্রমাণ মেলে। এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী এই অঞ্চলের সর্ববৃহৎ প্রদর্শনী। এর মাধ্যমে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মেলবন্ধন ঘটে থাকে নিয়মিত। এতে যেমন নিরীক্ষামূলক কাজ দেখার সুযোগ ঘটে, তেমনি সুযোগ থাকে বিভিন্ন দেশের চিরায়ত ও লৌকিক চিত্রকলার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার। দেয়া-নেয়ার মাধ্যমে ভাবের আদান-প্রদানে উন্নত ও সমৃদ্ধ হয় পারস্পরিক বোঝাপড়া, মন ও মনন, সর্বোপরি শিল্পরুচি। কোন সন্দেহ নেই যে, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রধান সমস্যা জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা মোকাবেলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ। সৃজনশীল শিল্পকর্ম ও ভাস্কর্য সর্বোপরি স্থাপনাশিল্প সর্বস্তরের মানুষকে এসব বিষয়ে সচেতন করে তুলতে পারে। এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী দর্শক সমাজের সেই প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে বলেই প্রত্যাশা।
×