ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিআইবিএমএ’র সেমিনারে বক্তাদের অভিমত

ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে পরিচালিত হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে পরিচালিত হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সাধারণ আমানতকারীদের সঙ্গে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করে দেশে পরিচালিত হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং। যেখানে ব্যাংকগুলো মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে ব্যবসা করছে। কারণ তারা যেভাবে আমানত সংগ্রহ, বিনিয়োগ, বাণিজ্য করছে তার কোন ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না ইসলামী ব্যাংকিং এ নীতি। বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এ আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিআইবিএম ইসলামী ব্যাংকিং এ সুশাসন শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে। এর ওপর একটি গবেষণা প্রতিবেদনও উপস্থাপন করা হয়। বিআইবিএমের মহপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি ফরিদউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বীমা বিভাগের অধ্যাপক এম মুজাহিদুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন আলী। মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহ, বিনিয়োগসহ আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কোন সূচকেই ইসলামী ব্যাংকিং করছে না। তারা অন্য ব্যাংকগুলোর মতো সুদ ভিত্তিক ব্যাংকিং করছে। এটা বিশ্বাসী আমানতকারীর সঙ্গে প্রতারণা। তাদের বিশ্বাস নষ্ট করা। ইসলামী ব্যাংকগুলোও পরিচালকদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে। কিছু বেশি দান খয়রাত করে ইসলামী ব্যাংক হিসেবে ফায়দা নিচ্ছে যা উচিত নয়। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকিং হলো পুঁজি সংগ্রহ করে ছড়িয়ে দেয়া। সেটি করে না কেউ। কেউ মুদি দোকানি, কাজের লোক, বাদাম বিক্রেতাকে ঋণ দেয় না। এছাড়া ব্যাংকগুলো কর্মীদের স্বার্থরক্ষাও করে না। বেতন কম দেয়। অন্যান্য ব্যাংক থেকে সুযোগ-সুবিধাও কম। এভাবে কেন চলবে বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এদিকে ইয়াসিন আলী বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলো সঠিক পথে নেই। তারা ব্যবসা করতে মূলত এ ধরনের ব্যাংকিং করছে। ইসলামী ব্যাংকিং চর্চা কেউ করেন না। এমন উদাহরণও দেখেছি, ইসলামী ব্যাংক কলমানি মার্কেট থেকে ৪৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়েছে। এটা কোন ধরনের ইসলামী ব্যাংকিং। এগুলো কি প্রতারণা নয়, মানুষ ঠকানো নয়। অনেক আমানতকারী বিশ্বাস করে বিনা মুনাফায় অর্থ রাখেন। ইসলামী ব্যাংকগুলোতে এমন আমানত প্রায় ১৫ শতাংশ। এসব অর্থের মানুফা কোথায় যাচ্ছে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিআইবিএমের গবেষণায় উঠে এসেছে, ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা দরকার। ইসলামী ব্যাংক শুধু শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থরক্ষার জন্য নয়, সকল গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে কাজ করবে এমনটা শরিয়া নীতিমালায় রয়েছে, যা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। বাংলাদেশে তিন ধরনের ইসলামী ব্যাংকিং করে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি ভাগ রয়েছে। কিছু ব্যাংক পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংকিং করে (এ১ ক্যাটাগরি), কোন কোন ব্যাংক কয়েকটি শাখার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনা করে (এ২ ক্যাটাগরি) এবং কিছু ব্যাংক কয়েকটি উইন্ডোর (এ৩ ক্যাটাগরি) মাধ্যমে এটি করে থাকে। এগুলোর ওপর বিআইবিএম গবেষণা করে দেখেছে, এ১ ক্যাটাগরির গড় সুশাসনের হার ৮৩ শতাংশ। আর এ ক্যাটাগরির দুটি ব্যাংক রয়েছে যারা সর্বোচ্চ সুশাসন রয়েছে ৮৯ শতাংশ। তবে সুশাসনের সর্বনিম্ন পর্যায় হলো ৭৮ শতাংশ। সুশাসনের হিসাব করা হয়েছে এএওআইএফআই এর ৫টি স্ট্যান্ডার্ড এর ওপর ভিত্তি করে। এ২ ক্যাটাগরির ব্যাংকগুলো সুশাসনের সর্বোচ্চ হার হলো ৮৩ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৭৯ শতাংশ। আর এ৩ ক্যাটাগরির ব্যাংকগুলো সব ধরনের সুশাসনের স্ট্যান্ডার্ডগুলো মেনে চলে না। ফলে তাদের গড় সুশাসনের হার অনেক কম, যা ৫৯ শতাংশ। আর এ ধরনের ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সুশাসনের হার ৭২ এবং সর্বনিম্ন হার ২৮ শতাংশ। শরিয়া বোর্ডের নিয়মানুযায়ী, ৫টি ক্যাটাগরিতে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের কাজগুলোকে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে প্রথমে রয়েছে যাদের সংজ্ঞায়িত করা হয় ‘আন্ডার ডেভেলপড’ বলে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যাংকগুলোকে ‘ইমারজিং প্র্যাকটিস’ তৃতীয় পর্যায়ে ‘ইম্প্রুভড প্র্যাকটিস’, চতুর্থ পর্যায়ের ‘গুড প্র্যাকটিস’ এবং সর্বশেষ ‘বেস্ট প্র্যাকটিস’ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয় নির্দিষ্ট নম্বরের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন ব্যাংক প্রথম দুই ক্যাটগরিতে নেই। তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে ৩৩ শতাংশ, ৫০ শতাংশ রয়েছে চতুর্থ পর্যায়ে এবং ৫ম পর্যায়ে রয়েছে ১৭ শতাংশ ব্যাংক যারা ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম করে থাকে। তবে অন্যান্য যেসব দেশ শরিয়া ভিত্তিতে পরিচালিত হয় তাদের মধ্যে বাংলাদেশ সুশাসনে এগিয়ে রয়েছে। যেমন বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ ব্যাংক বেস্ট প্র্যাকটিস করলেও মালয়েশিয়ার, জিসিসি দেশগুলো এবং যুক্তরাজ্যের কোন ইসলামী ব্যাংক এখনও এ পর্যায়ে আসতে পারেনি।
×