ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজাল প্যারাসিটামল

আসামি খালাসের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের গাফিলত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

আসামি খালাসের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের গাফিলত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিতর্কিত ওষুধ কোম্পানি রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল খেয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় আসামিদের খালাস পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন সরকারী কর্মকর্তার গাফিলতি থাকলে তাদের ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, জনগণের জীবনমানের প্রশ্ন জড়িত। এ বিষয়ে কোন ছাড় দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের দায়ের করা মামলায় রীড ফার্মাসিউটিক্যালসের সব আসামিকে খালাস দিয়ে আদালতের রায়ের পরদিন মঙ্গলবার সচিবালয়ে ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হাসান ও মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান, স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। রায় নিয়ে বিচারকের পর্যবেক্ষণ গণমাধ্যমে দেখে মঙ্গলবার ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সচিবালয়ে ডেকে নিয়ে তাদের বক্তব্য শোনার পাশাপাশি প্রতিবেদনের কপিও নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সাত বছর আগে রীড ফার্মাসিউটিক্যালসের বিরুদ্ধে করা মামলায় সোমবার ৫ আসামির সবাইকে খালাস দেয় আদালত। মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার ‘অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে’ অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে বলে ঢাকার ওষুধ আদালতের বিচারক আতোয়ার রহমান রায় ঘোষণার সময় জানিয়ে দেন। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনায় মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দায়িত্ব দেয়ার কথা জানিয়ে নাসিম বলেন, রায়ের কপি পাওয়ার পর রায় কীভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেব। যদি ওষুধ প্রশাসনের কোন ব্যক্তি দায়ী হয়, দোষী সাব্যস্ত হয়, তার বিরুদ্ধে অবশ্যই যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিহতদের পরিবারের প্রতি ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, যেখানে ২২টি শিশু মারা গেল নিশ্চয় সেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং জজ সাহেবের যে পর্যবেক্ষণ কেউ যদি কোনভাবে গাফিলতি করে থাকে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই। চিকিৎসক ও রোগীদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে অনেক আইন আছে সেগুলোকে একীভূত করে চিকিৎসা সেবা আইন করতে যাচ্ছি, এটি শীঘ্রই চূড়ান্ত হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ নিয়ন্ত্রণে সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কোন অবস্থাতেই জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে এমন কোন ওষুধ উৎপাদন, বিপণন ও আমদানি মেনে নেয়া হবে না। দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কোন ধরনের অব্যবস্থা সরকার মেনে নেবে না। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সরকারী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু সংখ্যক কোম্পানিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে নিরাপদ ওষুধ উৎপাদন করে দেখাতে না পারলে ওই সব কোম্পানিও স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত রীড ফার্মার প্যারাসিটামল সিরাপ পানে সারাদেশে ২৮ শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠলে ১০ আগস্ট ঢাকার ওষুধ আদালতে এ মামলা হয়। তৎকালীন ড্রাগ সুপার শফিকুল ইসলাম মামলা করার পর সেদিনই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম সঠিক নিয়ম মেনে জব্দ তালিকা এবং পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেননি। মামলা দায়েরের সময় যেসব পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল, তা না নেয়ায় তার অযোগ্যেতা ও অদক্ষতা প্রমাণিত হয়।’ মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, রীড ফার্মার প্যারাসিটামলে বিষাক্ত উপাদানের কারণে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ওই প্যারাসিটামলে ডাই ইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া যায়নি তবে ওই ওষুধ ছিল নিম্নমানের বলে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে জমা দেয়া তাঁর অভিযোগপত্রে তুলে ধরেন। এভাবে সরকারের পক্ষ হয়ে ওই মামলা পরিচালনাকারীদের দক্ষতা ও আন্তরিকতা বিচারকসহ দেশবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
×