ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী একনেক সভায় প্রকল্প অনুমোদনের সুপারিশ পরিকল্পনা কমিশনের

৩২ জেলার পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ ৮৭ সেতু নির্মিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

৩২ জেলার পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ ৮৭ সেতু নির্মিত হচ্ছে

আনোয়ার রোজেন ॥ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারের নিজস্ব তহবিলের এ অর্থ দেশের আট বিভাগের ৩২ জেলার পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় আগামী চার বছরে এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। মন্ত্রণালয় থেকে পাঠনো প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এটি বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। এর ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা, আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, পরিবহন ব্যয় ও সময় হ্রাস এবং কৃষি ও অকৃষি পণ্য পরিবহন সহজ হবে। সূত্র জানায়, এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। সূত্র জানায়, নবেম্বরের শুরুতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘নতুন গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামো সূচক’-এ (নিউ রুরাল এ্যাকসেস ইনডেক্স) সমপর্যায়ের স্বল্পোন্নত অনেক দেশকেই ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। এমনকি এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, নেপালকেও ছাড়িয়ে গেছে সরকারের প্রয়াস। সর্বশেষ সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৮৬ দশমিক ৭। অথচ ২০০৬ সালের একই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল মাত্র ৩৭। বর্তমান সরকার গত সাত বছরে বাংলাদেশের গ্রামীণ যোগাযোগের চিত্র বদলে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এএন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী বলেছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বিপণি বিতান, নগরকেন্দ্র ও বিনোদনপার্কে সহজ যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি কৃষিসহ সব পণ্যের পরিবহন ও বাজারজাতকরণ সহায়ক হবে। সেই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরুর জন্য অর্থের চাহিদা দেখানো হয়েছে ৬১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগের মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) প্রত্যয়নপত্রে প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানেরও নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে পল্লী অঞ্চলের উন্নয়নের ওপর। তাই পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা খুবই জরুরী। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের আটটি বিভাগের অধীনে ৩২ জেলার ৬৪ উপজেলায় ৮৭ দীর্ঘ সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়। এসব সেতুর মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) ৩৭ সেতুর হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল স্টাডি শেষ করেছে। ২১ সেতুর দৈর্ঘ্য ১০০ মিটারের কম হওয়ায় সমীক্ষার প্রয়োজন নেই। অবশিষ্ট ২৯ সেতুর সমীক্ষার সংস্থান রাখা হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি)। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ১৭ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। ওই সভায় বেশ কিছু বিষয়ে আপত্তি তুলে সুপারিশ দেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, প্রকল্প মেয়াদের প্রথম বছর সব সেতুর সমীক্ষা সম্পূর্ণ করতে হবে। এছাড়া হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল সমীক্ষার সারসংক্ষেপ টেবিল আকারে প্রত্যয়নসহ ডিপিপিতে যুক্ত করতে হবে। প্রস্তাবিত ডিপিপি থেকে স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাদ দিতে হবে এবং বৈদেশিক স্টাডি ট্যুরের ক্ষেত্রে সংস্থা বা বিভাগের প্রশিক্ষণার্থীদের সংখ্যা ও দেশ চিহ্নিত করে বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয়ের বিষয়টি বাদ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রধান যেসব কার্যক্রম পরিচালন হবে, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ১৮ হাজার ৫৫০ মিটার মূল সেতু নির্মাণ। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৪৫ হাজার ১০০ মিটার এ্যাপ্রোচ বা এক্সেস সড়ক নির্মাণ, ১৫০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ এবং ১০ হাজার ১৫০ মিটার নদী শাসনের কাজ করা হবে।
×