ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

হার্ট ফেইলিয়র নিরাময়ে নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

হার্ট ফেইলিয়র নিরাময়ে নতুন সম্ভাবনা

বিজ্ঞানীরা হৃৎপিণ্ডে কোষ রিপ্রোগ্রামিংয়ের অর্থাৎ এক ধরনের পূর্ণবয়স্ক কোষকে আরেক ধরনের কোষে রূপান্তরিত করার উপায়ের সন্ধান করে চলেছেন। এর ফলে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির কোষগুলোকে পুনরুৎপাদন করা যায়। তারা আশা করছেন যে সেটা করা সম্ভব হলে হার্ট ফেইলিয়রের চিকিৎসা করা ও পরিশেষে তা সারিয়ে তোলা যাবে। সেই চেষ্টা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর গ্ল্যাডস্টোন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা দুটো রাসায়নিক উপাদান চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো হৃৎপি-ের ক্ষতস্থানের টিস্যুকে সুস্থ ও স্পন্দিত হৃৎপেশিতে রূপান্তরিত করার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। এই নতুন আবিষ্কার হার্ট ফেইলিয়রের নতুন ও কার্যকর চিকিৎসা বের করার পথে অগ্রগতি সাধন করেছে। হার্ট ফেইলিয়রের সমস্যায় ৫৭ লাখ আমেরিকান আক্রান্ত। এদের চিকিৎসায় বছরে ৩০৭০ কোটি ডলার ব্যয় হলেও সমস্যা থেকে কেউ নিরাময় হয় না। হৃৎপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীর মৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে মেরামত করতে পারে না। গ্লাডস্টোনের বিজ্ঞানীরা তাই হৃৎপেশির কোষগুলোতে রিপ্রোগ্রামিংয়ের চেষ্টা করছেন এবং তা করতে গিয়ে ওই রাসায়নিক উপাদান দুটির সন্ধান পেয়েছেন। কোষের প্রতিলিপি সৃষ্টির জন্য মাত্র তিনটি উপাদানের প্রয়োজন সেগুলো প্রকৃতপক্ষে হলো প্রোটিন। দেখা গেছে একটা ইঁদুরের হৃৎপি-ের সংযোজন কলার কোষগুলোকে হৃৎপেশির কোষে রূপান্তরিত করার জন্য এই প্রোটিনগুলো কোষের জিলগুলোকে সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় করতে পারে। হার্ট এ্যাটাকের পর সংযোজন কলা বা কানেকটিভ টিস্যু ক্ষতস্থানে ঘাত টিস্যু সৃষ্টি করে যা হার্ট ফেইলিয়রের কারণ ঘটায়। তিনটি প্রোটিন উপাদান গাটা ৪, সেফ ২ সি এবং টিবিএক্স ৫ (জিএমটি) একত্রে কাজ করে এই কোষগুলোতে হৃৎপি-ের জিনগুলো চালু করে দেয় এবং অন্য জিনগুলোকে বন্ধ করে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হৃৎপি-ে কার্যকরভাবে তার নিজস্ব কোষ পুনরুৎপাদিত হয়। তবে কৌশলটি শতভাগ সার্থক প্রমাণিত হয়নি। দেখা গেছে স্কার টিস্যু বা খাত টিস্যু থেকে শতকরা মাত্র ১০ ভাগ কোষ পুরোপুরিভাবে মাসল বা পেশিতে রূপান্তরিত হতে পেরেছে। নতুন গবেষণায় গ্ল্যাডস্টোনের বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াকে উন্নত করে তোলার চেষ্টায় সাড়ে পাঁচ হাজার রাসায়নিক উপাদান নিয়ে পরীক্ষা চালান। তারা দুটি রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করেন যেগুলো নতুন করে তৈরি হওয়া হৃৎপেশির কোষের সংখ্যা আটগুণ বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, রাসায়নিক উপাদান দুটি কোষ রূপান্তরের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে তুলেছে। যে কাজটা করতে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ লেগে যায় এই দুই উপাদানের বদৌলতে তা মাত্র এক সপ্তাহে করা সম্ভব হয়েছে। এ সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধ সার্কুলেশন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গ্ল্যাডস্টোন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক দীপক শ্রীবাস্তব বলেন, জিএমটির (তিনটি উপাদানের একত্রে সংক্ষিপ্ত নাম) সাহায্যে আমাদের প্রত্যক্ষ কার্ডিয়াক রিপ্রোগ্রামিংয়ের আদি প্রক্রিয়াটি সম্ভাবনাময় প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আবিষ্কার করেছি যে, কোষ গঠনের প্রাথমিক স্তরে সক্রিয় দুটি জৈবিক পথকে রাসায়নিকভাবে বাধাগ্রস্ত করা হলে আমাদের আদি প্রক্রিয়ায় কোষ উৎপাদনের গতি এবং কোষের সংখ্যা ও মান সবই বহুলাংশে বেড়ে যায়। প্রথম রাসায়নিক উপাদানটি কোষ উৎপাদন ও বিভাজনে সহায়ক একটি গ্রোথ ফ্যাক্টরকে বাধাগ্রস্ত করে এবং সেটি ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় উপাদানটি হৃদপি-ের বিকাশ নিয়ন্ত্রণকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পথকে বাধা দেয়। এই দুটি রাসায়নিক উপাদানকে জিএমটির সঙ্গে যুক্ত করে গবেষকরা হার্ট এ্যাটাকের শিকার ইঁদুরের হৃৎপি-ের মাংসপেশি, সাফল্যের সঙ্গে পুনরুৎপাদন করেছেন এবং হৃৎপি-ের কার্যক্ষমতা বহুলাংশে বাড়িয়ে তুলেছেন। বিজ্ঞানীরা মানব কোষের সরাসরি কার্ডিয়াক রিপ্রোগ্রামিংয়ের উন্নতি সাধনেও রাসায়নিক উপাদান দুটি ব্যবহার করেছেন। এটি অবশ্য অধিকতর জটিল এক প্রক্রিয়ার জন্য বাড়তি কিছু উপাদান দরকার। তবে এই রাসায়নিক উপাদান দুটির বদৌলতে গবেষকরা প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন এবং হার্ট ফেইলিয়রের উন্নততর চিকিৎসার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। নিজ গবেষক দলের অন্যতম সদস্য তাহের মোহাম্মদ বলেছেন যে, বিশ্বের বহু লোক হার্ট ফেইলিয়র সমস্যায় ভুগছে এবং এ রোগের কার্যকর চিকিৎসা এখনও পর্যন্ত বের হয়নি। তবে সরাসরি কার্ডিয়াক রিপ্রোগ্রামিংয়ের উন্নততর পদ্ধতিতে কাজে লাগিয়ে জিন থেরাপির সঙ্গে ওষুধকে যুক্ত করে এই প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্তদের উন্নততর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। সূত্র : সায়েন্স ডেইলি
×