ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৩ জঙ্গীর আত্মসমর্পণ

জঙ্গীবাদ নির্মূলে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

জঙ্গীবাদ নির্মূলে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ২৩ নবেম্বর ॥ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অঙ্গীকারে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির তিন সক্রিয় সদস্য রংপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। বুধবার দুপুর ১২টায় রংপুর সেনানিবাসের শীতল অডিটরিয়ামে আয়োজিত জঙ্গীবাদবিরোধী এক সুধী সমাবেশের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তারা। আত্মসমর্পণকারীরা হলো দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের লোহারবান গ্রামের মন্দেল হোসেনের ছেলে হাফেজ মোঃ মাসুদ রানা (১৮), বিন্যাগাড়ি গ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে হাফিজুর রহমান (১৬) ও জয়রামপুর গ্রামের সারওয়ার হোসেনের ছেলে আখতারুজ্জামান ওরফে আক্তারুল (১৮)। সমাবেশে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণকারী তিন জঙ্গীর পুনর্বাসনের জন্য র‌্যাবের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রংপুর র‌্যাব-১৩ আয়োজিত সুধী সমাবেশে জানানো হয়, শোলাকিয়া হামলায় অংশগ্রহণকারী জঙ্গী শফিউলের সঙ্গে আত্মসমর্পণকারী তিন জঙ্গীর যোগসূত্র রয়েছে। শফিউল যে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জঙ্গী হিসেবে রিক্রুট হয়েছে এরাও একই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জঙ্গীবাদে প্রবেশ করেছিল। শোলাকিয়া হামলায় জড়িত শফিউল নূরপুর সালাফিয়া ক্যাডেট মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। আত্মসমর্পণকারী তিন জঙ্গীও একই মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছে। ওই মাদ্রাসার পিয়ন আরিফুল (বর্তমানে হত্যা মামলায় জেলহাজতে) প্রাথমিক পর্যায়ে শফিউলকে দীক্ষিত করে তোলে এবং পরে আত্মসমর্পণকারী তিন জঙ্গী তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। র‌্যাব জানায়, আরিফুলের পরিকল্পনায় ঘোড়াঘাটের গুড়হাটি এলাকার একটি মেসে থেকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছিল ওই তিন জঙ্গী। সংগঠন থেকে তাদের স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে গত রমজান মাসের পর নাশকতার টার্গেট দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা। হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর জঙ্গী শফিউলের সম্পৃক্ততা এবং চারিদিকে সমালোচনার ঝড় দেখে তারা অনুশোচনাবোধ করে আত্মগোপনে চলে যায়। একপর্যায়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তারা ওই তিন জঙ্গীকে আত্মসমর্পণে উৎসাহী করে র‌্যাবের কাছে নিয়ে আসে। সমাবেশে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে বাঙালী ঐতিহ্য লালিত শান্তিপ্রিয় এ দেশে যে জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছিল তা থাকবে না। বাংলাদেশের মানুষ এ ধরনের নৃশংস জঙ্গী কর্মকা- মেনে নেয়নি। এ ঘৃণ্য কর্মকা-ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। এ দেশ থেকে চিরতরে জঙ্গীবাদ নির্মূলে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্য জঙ্গীদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলে তাদের পুনর্বাসিত করা হবে। সেই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা জঙ্গী বানানোর কাজে প্রলুব্ধ করে ভুল পথে পরিচালিত করছেন, জঙ্গীবাদে অর্থ যোগান দিচ্ছেন, তাদের পরিণাম হবে ভয়াবহ। এদের কোন নিস্তার নেই। সকলকে খুঁজে বের করে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। তিনি বলেন, জনগণ জঙ্গীদের কর্মকা- ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, দেশে এখন ২-৪ জন জঙ্গীও নেই। যারা আছেন তাদের মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজে বের করতে হবে। রংপুর র‌্যাব-১৩ এর অধিনায়ক এটিএম আতিকুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশী এমপি, রংপুর সিটি মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহম্মেদ, বিভগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহম্মেদ, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম, পিপিএম, রংপুর বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন।
×