ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গড়ে তোলা হচ্ছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক টেকনোলজি ইনস্টিটিউট

পণ্য রফতানির শীর্ষে যেতে চায় প্লাস্টিক-ইলেক্ট্রনিক্স খাত

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২১ নভেম্বর ২০১৬

পণ্য রফতানির শীর্ষে যেতে চায় প্লাস্টিক-ইলেক্ট্রনিক্স খাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্লাস্টিক-ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য রফতানিতে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আগামী ২০৩০ সাল সামনে রেখে প্লাস্টিক শিল্প খাতের ব্যাপক উন্নয়নে রোডম্যাপ প্রণয়ন হয়েছে। প্রথমবারের মতো দেশে গড়ে তোলা হচ্ছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (বিপেট)। একই সঙ্গে ইলেক্ট্রনিক্স ও অটোমোবাইল শিল্পেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমদানির পরিবর্তে এখন বাংলাদেশে তৈরি টিভি, ফ্রিজ ও মোটরসাইকেল রফতানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। গত কয়েক বছরে দেশের বাজারে বিদেশী পণ্যের দখলদারিত্ব কমে আসছে। সরকারের নীতি সহায়তা ও শ্রমের সহজলভ্যতার কারণে দ্রুত বিকাশ ঘটছে দেশীয় ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ শিল্পের। স্থানীয় পণ্যের দাম কমে আসায় বিদেশী পণ্যের বাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, দেশে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে। যার ৬৫ শতাংশ ঢাকার মধ্যে ২০ শতাংশ চট্টগ্রাম, ১০ শতাংশ নারায়ণগঞ্জ ও বাকি ৫ শতাংশ অন্যান্য বিভাগে রয়েছে। এছাড়া দেশে দেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার শতকরা ২০ ভাগ বেড়েছে। প্রতিবছর প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। এ খাত থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করছে সরকার। বেঙ্গল, আরএফএল, ওয়ালটন, তানিনসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন, বিপণন এবং রফতানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক্স শিল্পে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন, মার্সেল, যমুনা, গোল্ডস্টার, মাইটিভিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দ্রুত অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী বাজার ধরতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া অটোমোবাইলস পণ্য বিশেষ করে মোটরসাইকেল উৎপাদনে রানার এবং ওয়ালটন বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। দুটি প্রতিষ্ঠানই দেশীয় বাজারে শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক, মোটরসাইকেল ও গৃহস্থালি পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি রেফ্রিজারেটর ও টেলিভিশন প্রস্তুতিতে সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু বর্তমানে রেফ্রিজারেটর প্রস্তুতিতে বৈচিত্র্যতা এসেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স ও গৃহস্থালি সামগ্রী প্রস্তুতের ওপর বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। বিশ্বের ১৭ দেশে ওয়ালটনের পণ্য রফতানি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, দেশীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করেছে সরকার। গত কয়েকটি বাজেটেই দেশীয় শিল্প বিকাশে বেশকিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটেও দেশীয় শিল্প সম্প্রসারণে ভ্যাট, ট্যাক্স, এবং আমদানি শুল্ক ধার্যের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। শুধু তাই নয়, রফতানিতে নগদ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। আর এসব কারণে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটছে। রফতানি তালিকায় নতুন নতুন পণ্য যুক্ত করতে সরকার নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশীয় বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী বাজেটে আরও কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়নে রোডম্যাপ ॥ দেশের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে ইতোমধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে প্লাস্টিক শিল্প। আগামী ২০৩০ সাল সামনে রেখে এ শিল্প উন্নয়নে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে। শীঘ্রই রোডম্যাপটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করবেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। প্লাস্টিক শিল্পনগরী ও এখাতে দক্ষ কর্মী তৈরি করতে পারলে বিশ্ববাজার দখল করাও অসম্ভব কিছু নয়। এই অগ্রযাত্রা সামনে রেখে গড়ে তোলা হচ্ছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (বিপেট)। বাংলাদশে প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারস এ্যান্ড এক্সপোর্টাস এ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) উদ্যোগে এ ইনস্টিটিউট নির্মিত হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি ও বিপিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট মোঃ জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে প্লাস্টিক শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫২ সালে। দীর্ঘ ৬২ বছর পরও বিকাশমান এ শিল্পের জন্য কোন বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট গড়ে ওঠেনি। আধুনিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার কথা থাকলেও নানা কারণে তা ফাইল বন্দী অবস্থাতেই রয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশে প্লাস্টিক শিল্পের জন্য বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট রয়েছে। রয়েছে এ শিল্পের জনবলের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। কিন্তু আমাদের দেশে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তো দূরের কথা একটি প্রশিক্ষণ সেন্টারও নেই। ২০১২ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ‘পলিমার সায়েন্স’ নামের একটি বিষয় খুলেছে। অথচ বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্লাস্টিক বিষয়ে উন্নত লেখাপড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। দেশে প্লাস্টিক খাতের জনবলের কোন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট না থাকায় বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনতে হয়। সব ইঞ্জিনিয়ার বিদেশী হওয়ায় তাদের পেছনে অনেক টাকা ব্যয় হয় বলেও জানান তিনি। এ কারণে বিপেট গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ একটি দল টেকনিক্যাল বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার জিএসপি প্রত্যাহার করায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্লাস্টিক শিল্প। কারণ, ইতোপূর্বে প্লাস্টিক শিল্প রফতানিতে জিএসপি সুবিধা পেয়েছে। শুধু তাই নয়, এ শিল্প উন্নয়নে আলাদা শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠাসহ রফতানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা প্রদান করা জরুরী হয়ে পড়ছে। আর এজন্য সরকারী নীতিগত সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। জানা গেছে, দেশে ৫ হাজার ৫২টি প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ছোট ৩ হাজার ৫০০, মাঝারি ১ হাজার ৫০০ ও বড় মাপের ৫২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন। যদিও এদের প্লাস্টিক বিদ্যায়ল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষিণপ্রাপ্ত না হওয়ায় এ খাতে প্রতিবছর গড়ে ৬ হাজার ৭১২টি দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটে প্রাণহানিও। ফলে এ কারণে মালিকদের শত শত কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়। এরপরও বাংলাদেশ প্রতিবছর সরাসরি ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য রফতানি হয়। রফানিতে বাংলাদেশের এ শিল্পের অবস্থান ১২তম। এ খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি নির্ভরতা কমে স্থানীয় শিল্প রফতানিমুখী হয়ে উঠছে। পোশাক, চামড়া, ওষুধ, সিমেন্ট এবং পাটজাত পণ্য রফতানির পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক্স ও প্লাস্টিক পণ্য খাতের দ্রুত বিকাশ ঘটছে।
×