ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইল বিএডিসি

অচল নলকূপ সচলকরণ প্রকল্প গতি পাচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২০ নভেম্বর ২০১৬

অচল নলকূপ সচলকরণ প্রকল্প গতি পাচ্ছে না

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ বিএডিসির অব্যবস্থাপনার কারণে টাঙ্গাইলে ‘অচল নলকূপ সচলকরণ প্রকল্প’ গতি পাচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো চাষীরা। স্কিম পরিচালনা কমিটি নিয়ে জালিয়াতি ও দুর্নীতি করায় অবকাঠামোগত কাজ মুখ থুবড়ে পড়ছে। ফলে কোন কোন স্থানে সেচের অভাবে জমি পতিত থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিশেষ আগ্রহে ২০১২-১৩ সেচ বর্ষ থেকে দেশে প্রায় ২০ হাজার অচল গভীর নলকূপ সচলকরণের প্রকল্প নেয়া হয়। এজন্য সরকার প্রায় ছয়শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে অচল গভীর নলকূপ সেচের উপযোগী করার জন্য ভূগর্ভস্থ সেচ পাইপ নির্মাণ করা হয়। সেচনাল ও অবকাঠামোগত কাজ শেষে বিনা খরচে দেয়া হয় বিদ্যুত সংযোগ। প্রিপেইড পদ্ধতিতে বিদ্যুত সংযোগ পেয়ে কৃষকরা গভীর নলকূপ থেকে বোরো ও রোপা আমন মৌসুমে সুলভে সেচ দেয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলায় ৪টি, গোপালপুর উপজেলায় ৭টি এবং মধুপুর উপজেলায় ৬টি গভীর নলকূপ এ পদ্ধতিতে চালু করা হয়েছে। এসব উপজেলায় আরও ১০টি নলকূপ চালুর পর্যায়ে রয়েছে। এ পদ্ধতি চালুতে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ৬-৭ লাখ টাকা। কিন্তু বিএডিসির দুর্নীতির কারণে নলকূপের সেচ স্কিম পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে অনেক স্থানে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এজন্য প্রকৃত কৃষকরা ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যেমন ধনবাড়ি উপজেলার মুশুদ্দী ইউনিয়নের মুশুদ্দী দক্ষিণ পাড়া ১১২নং গভীর নলকূপ পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে চলছে তুগলকী কা-। ওই গ্রামের আদর্শ কৃষক আরফান আলী মাস্টার টানা চার দশক ধরে ওই গভীর নলকূপ পরিচালনা করে আসছেন। বিএডিসির নিয়ম মেনে তিনি পরবর্তীতে নলকূপটি নিজ নামে কিনেও নেন। কিন্তু সেচের কমান্ড এরিয়া কমে যাওয়ায় এবং সেচের জমির সীমানা নিয়ে গ্রামীণ কোন্দল দেখা দেয়ায় মাঝে কয়েক বছর নলকূপ বন্ধ হয়ে যায়। কৃষক আরফান আলী অভিযোগ করেন, গ্রামের কৃষকদের অন্ধকারে রেখে বিএডিসির দুর্নীতিপরায়ণ কতিপয় কর্মকর্তা বিপুল উৎকোচের বিনিময়ে পাড়ার দুই সেনা সদস্য এমদাদুল হক ও সেলিমুল ইসলামকে জালিয়াতির মাধ্যমে ম্যানেজার ও সভাপতি করে গোপনে স্কিম পরিচালনা কমিটি দাঁড় করায়। বিএডিসির ঠিকাদার ভূগর্ভস্থ সেচনালা ও আনুসঙ্গিক অবকাঠামোগত কাজ করতে গেলে চাষীরা টের পান। গ্রামবাসীরা ঠিকাদারকে নির্মাণ কাজে বাধা দেন। লিখিত অভিযোগ দেয়া হয় ধনবাড়ি উপজেলা সেচ কমিটির কাছে। সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মীর ফারুক আহমাদ বিষয়টি ফয়সালার জন্য গ্রামের কৃষকদের উপজেলা অফিসে ডেকে নেন। সেখানে উপস্থিত কৃষকদের সম্মতির ভিত্তিতে আরফান আলীকে ম্যানেজার এবং তোরাপ আলীকে সভাপতি করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট স্কিম পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। নির্বিঘেœ ও সুলভে সেচ পরিচালনার স্বার্থে উপজেলা চেয়ারম্যান মীর ফারুক আহমাদ এ নতুন কমিটিকে অনুমোদন দিয়ে বিএডিসিকে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার অনুরোধ করেন। কিন্তু বিএডিসি উপজেলা সেচ কমিটির এ সুপারিশ বাস্তবায়নে তালবাহানা শুরু করে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানা সমস্যা তৈরি করে পূর্বের সাজানো কমিটির মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ চালানোর চেষ্টা করে বিএডিসি। গ্রামবাসীর অভিযোগ, সাজানো কমিটির সভাপতি ও ম্যানেজার দু’জনই সেনা সদস্য। সরকারী চাকরির কারণে তারা এলাকায় থাকেন না। নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি ও ম্যানেজারকে সেচ মৌসুমে স্কিম পরিচালনার স্বার্থে সর্বক্ষণ এলাকায় থাকতে হবে। এটি জানা সত্ত্বেও বিএডিসি স্কিম পরিচালনায় তাদের জড়িত রেখে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন। একপক্ষকে আদালতে পাঠিয়ে নিজেদের দুষ্কর্ম আড়াল করতে চাইছেন। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিএডিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম জানান, বিএডিসির বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ সঠিক নয়। উপজেলা চেয়ারম্যানের পাঠানো কমিটি গ্রহণ করে সমস্যাটির সমাধানের চেষ্টা চলছে।
×