ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন

সম্ভাব্য প্রার্থীদের আচরণ বিধি মেনে চলার নির্দেশ ইসির

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

সম্ভাব্য প্রার্থীদের আচরণ বিধি মেনে চলার নির্দেশ ইসির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আচরণবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। একই সঙ্গে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমিশনের কর্মকর্তাদেরও নিরপেক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে বিশেষ কোন মহলের প্রভাব বা হস্তক্ষেপের কারণে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা যাতে ক্ষুণœ না হয় তা আইন বিধিমালা ও আচরণবিধির আলোকে নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া তফসিল ঘোষণার আগে যেসব প্রার্থী আগাম নির্বাচনী প্রচার হিসেবে লিফলেট, দেয়াল লিখন বিলবোর্ড টানিয়েছেন তাদের আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে নিজ দায়িত্বে অপসারণ করতে বলা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে সম্ভাব্য (৪ পৃষ্ঠা ৭ কঃ দেখুন) সম্ভাব্য প্রার্থীদের (প্রথম পৃষ্ঠার পর) প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে চলছে কিনা তা তদারকির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এবং জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে ভিজিলেন্স ও অবজারভেশন টিম গঠন করার কথা বলা হয়েছে। এই টিমে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে টিমের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত কোন প্রার্থী বা তার সমর্থক আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো কোন কর্মকা- পরিচালনা করছে কিনা তা অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কমিশনের উপসচিব ফরহাদ আহম্মেদ খানের স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে চলছেন কিনা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে আচরণবিধিমালার কোন বিধি লঙ্ঘন করছেন কিনা সে বিষয়ে সতর্ক থেকে এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্ধারিত দিনের আগে কেউ যেন নির্বাচনী প্রচারে নামতে না পারে সেদিনে দৃষ্টি রাখতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনী প্রচার সম্পর্কে বিধি নিষেধ, মাইক্রোফোন বা মাইকের ব্যবহার সম্পর্কে বিধি নিষেধ, পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল সংক্রান্ত বিধি নিষেধ, সভাসমিতি অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কমিশন প্রণীত আচরণবিধি মেনে চলছে কিনা তা কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে। কমিশন প্রণীত আচরণ বিধিমালার এসব বিধান সম্পর্কে সম্ভাব্য সব প্রার্থীকে অবহিত করার জন্যও বলা হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের সুবিধার্থে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিস খোলার রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি জরুরী প্রয়োজনে সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত অফিস, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে খোলা রাখতে বলা হয়েছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে দলীয় ভিত্তিতে। এ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাদের যোগ্যতা অযোগ্যতা সম্পর্কেও কমিশনের পক্ষ থেকে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থককে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হতে হবে। একই ব্যক্তি একাধিক প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থক হতে পারবে না। একই ব্যক্তি একাধিক প্রার্থীর প্রস্তাবক বা সমর্থক হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হবে। তবে কোন প্রার্থীর পক্ষে একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। এক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা একাধিক মনোনয়নপত্রে ক্রমিক নম্বর দেবেন। পাশাপাশি মনোনয়নপত্রগুলো কোথায়, কখন বাছাই হবে সে সম্পর্কে অবহিত করবেন। এছাড়াও মেয়র পদে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রত্যয়ন জমা দিতে হবে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে। তাতে উল্লেখ থাকতে হবে দলের পক্ষ থেকে উক্ত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তবে একই দলের পক্ষে একাধিক ব্যক্তির মনোনয়ন দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট দলের সবার মনোনয়ন বাতিল করা হবে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৩শ’ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। তবে এর আগে যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে থাকেন তাহলে তার ক্ষেত্রে ভোটারযুক্ত তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়পত্রের সঙ্গে ৭ ধরনের হলফনামা প্রদান করতে হবে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত সার্টিফিকেট, ফৌজদারি মামলা অভিযুক্ত থাকলে সে সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করতে হবে। বা অতীতে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের কোন মামলা ছিল কি না, থাকলে তার রায়ের ফলাফল উল্লেখ করতে হবে। প্রার্থীর পেশা, আয়ের উৎস ও নির্ভরশীলদের সম্পদের বিবরণ দাখিল করতে হবে। জামানত হিসেবে মেয়র পদের প্রার্থীদের জন্য ৫ লাখ ভোটার সম্বলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ২০ হাজার টাকা, ১০ লাখ ভোটার সম্বলিত এলাকার জন্য ৩০ হাজার টাকা, ২০ লাখ ভোটার সম্বলিত এলাকার জন্য ৫০ হাজার টাকা, ২০ লাখের উর্ধে গেলে ১ লাখ টাকা জামানত হিসেবে দাখিল করতে হবে। কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্ষেত্রে ১৫ হাজার ভোটার সম্বলিত এলাকার জন্য ১০ হাজার টাকা, ৩০ হাজার ভোটার সম্বলিত এলাকার জন্য ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত এলাকার জন্য ৩০ হাজার টাকা এবং তার উর্ধে গেলে ৫০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে দাখিল করবেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকার জামানত হিসেবে দাখিল করতে হবে। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র দাখিলের পূর্বে যে কোন তফসিলী ব্যাংকে নতুন এ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। যার নম্বর, ব্যাংক ও শাখার নাম মনোনয়নপত্রের সঙ্গে উল্লেখ করতে হবে। নির্বাচনের যাবতীয় ব্যয় নতুন ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে পরিচালনা করতে হবে। নির্বাচনের পর নির্বাচনী ব্যয়ের রিটার্ন জমা দেয়ার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে। গত সোমবার নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ নির্বাচনে প্রার্থীরা ২৪ নবেম্বর পর্যন্ত তাদের মনোনয়পত্র জমা দিতে পারবেন। নির্বাচনী অফিস কর্তৃক মনোনয়নপত্র ২৬ ও ২৭ নবেম্বর বাছাই করা হবে। প্রার্থীরা ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ পাবেন। এরপর ৫ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠন হওয়ার পর এটি হচ্ছে দ্বিতীয় নির্বাচন। আগামী ২২ ডিসেম্বর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর এ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
×