ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন মিত্রদের ট্রাম্প প্রশ্নে আশ্বস্ত করার চেষ্টায় ওবামা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৬ নভেম্বর ২০১৬

মার্কিন মিত্রদের ট্রাম্প প্রশ্নে আশ্বস্ত করার চেষ্টায় ওবামা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ট্রাম্প প্রশ্নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমেরিকান মিত্রদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলছেন, প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশের আন্তর্জাতিক মিত্রদের সম্মান করবেন। তবে ওবামা যখন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন ঠিক তখন ক্যালিফোর্নিয়া ও মেরিল্যান্ডসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে শত শত শিক্ষার্থী ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিতে ক্লাস বর্জন করেছে। খবর এএফপি ও বিবিসির। ওবামা তার সর্বশেষ বিদেশ সফর গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাম্প ন্যাটোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এদিকে ওবামার সফরকে কেন্দ্র করে এথেন্সের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কারণ, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিক্ষোভ-সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের আসন্ন প্রশাসনকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটনের মিত্রদের মধ্যে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে তা কাটাতে ওবামা তার সর্বশেষ এ বিদেশ সফরকে কাজে লাগাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বিশ্বের অনেক নেতার মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারকালে অনেক বিতর্কিত মন্তব্য করেন। সোমবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবামা বলেন, ট্রাম্প আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখতে অনেক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এসবের মধ্যে ‘শক্তিশালী ও জোরদার ন্যাটো’ প্রসঙ্গটিও রয়েছে। এদিকে, সোমবার ক্যালিফোর্নিয়া ও মেরিল্যান্ডসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে শত শত শিক্ষার্থী ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিতে ক্লাস বর্জন করেছে। লস এঞ্জেলেসে শিক্ষার্থীরা বয়লি হাইটসে অবস্থিত একটি প্লাজা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করে। এলাকাটিতে হিস্পানিকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মিছিলের সময় তাদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ছিল। এতে লেখা ছিল-‘জেগে ওঠো’ এবং ‘ঐক্যবদ্ধ হও’। তাদের হাতে আমেরিকা ও মেক্সিকোর পতাকাও ছিল। মেরিল্যান্ডের সিলভার স্প্রিং ও অরেগনের পোর্টল্যান্ডেও একই ধরনের বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পর গত এক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। লস এ্যাঞ্জেলেসে বিভিন্ন স্কুলের কর্মকর্তারা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভে অংশ না নিতে এবং ক্ষোভ প্রকাশের আলাদা উপায় খুঁজে বের করার পরামর্শ দেয়া সত্ত্বেও সেখানে বিক্ষোভ হয়। লস এঞ্জেলেস ইউনিফাইড স্কুল ডিস্ট্রিক্ট সুপার মিশেল কিং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল। তবে অনেক শিক্ষার্থী নির্বাচনের ফল নিয়ে এখনও উদ্বিগ্ন এবং তারা চায়, তাদের কথা শোনা হোক। তিনি বলেন, এখন গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ প্রয়োজন। আমরা চাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা জানুক, তারা একা নয়। যাই হোক, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করে এমন কর্মকা- শিক্ষার্থীদের করা উচিত হবে না। মেরিল্যান্ডের স্থানীয় গণমাধ্যমে দেখানো হয়েছে, পাঁচটি হাইস্কুলের কয়েক শ’ শিক্ষার্থী সিলভার স্প্রিং শহরে মিছিল করছে। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে, ‘ট্রাম্প আমাদের প্রেসিডেন্ট না’। তারা যান চলাচলেও বাধা সৃষ্টি করে। পথচারীদের এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে করে উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলতে শোনা যায় এবং অনেক গাড়ি চালক হর্ন বাজিয়ে তাদের স্বাগত জানায়। শিক্ষার্থীদের বলতে শোনা যায়, ‘আমরা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে প্রত্যাখ্যান করছি।’ মেরিল্যান্ডের স্কুল কর্মকর্তারা জানান, স্কুলে অনুপস্থিত থাকার উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন মঙ্গলবার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে আশু করণীয় অনুধাবন করবেন এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার হুমকি থেকে ‘সরে’ আসবেন। বান কি মুন মারাকেশে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক একটি বৈঠকে বক্তৃতা করার আগে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আমাদের প্রত্যাশার কথা সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেছি এবং আমাদের আশা ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি শুনবেন ও অনুধাবন করবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি এটি অনুধাবন করবেন, শুনবেন এবং তার নির্বাচনী প্রচারণাকালে করা মন্তব্য থেকে সরে আসবেন।’ অন্যদিকে, ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামাকে নিয়ে বর্ণবাদী মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির অলাভজনক একটি গোষ্ঠীর পরিচালক পামেলা রামসে টেইলর ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি ছোট টাউনের মেয়র বেভারলি হোয়ালিং এসব মন্তব্য করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মিশেল ওবামার জায়গায় মেলানিয়া ট্রাম্প আসায় ক্লে কাউন্টি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের পরিচালক টেইলর এক ফেসবুক মন্তব্যে বলেন, ‘হোয়াইট হাউসে অভিজাত, সুন্দরী ও সম্ভ্রান্ত ফার্স্টলেডি ফিরে আসা অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক হবে। হিল পরা একটি বানরকে দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত।’ ক্লে টাউনের মেয়র হোয়ালিং টেইলরের মন্তব্যের জবাবে বলেন, ‘আমার দিনগুলো মধুর হয়ে উঠেছে।’ পরে তাদের এই মন্তব্যগুলো মুছে দেয়া হয়, কিন্তু ওই পোস্টের ইমেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ওই দুই নারীকে তাদের পদ থেকে অপসারণের পক্ষে এক অনলাইন পিটিশনে সোমবার বিকেলের মধ্যে ৮৫ হাজার স্বাক্ষর জমা পড়ে। ওই দুই নারী তাদের বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রের তহবিলে পরিচালিত ক্লে কাউন্টি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পরিচালকের পদ থেকে সোমবার টেইলরকে ‘অপসারণ’ করা হয়েছে। অপরদিকে ক্লে টাউনের কাউন্সিলম্যান জ্যাসন হুবার্ড চার্লসটন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে কাউন্সিলের এক বৈঠকে টাউন কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা করবে।
×