ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সুদানের বাজার হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা ॥ বাংলাদেশ থেকে সময় মতো পাটপণ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পায়নি

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

সুদানের বাজার হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা ॥ বাংলাদেশ থেকে সময় মতো পাটপণ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা  পায়নি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সুদানে পাটপণ্য রফতানির কার্যাদেশ পেলেও, বিজেএমসির একটি স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজির কারণে হারাতে বসেছে পৃথিবীর বৃহত্তম এ পাটপণ্যের বাজার। দেড় লাখ বেল পাটপণ্যের রফতানি আদেশে উৎপাদন ও জাহাজীকরণের নিশ্চয়তা না দেয়ায় এবং সুদান সরকারের অনুরোধকে উপেক্ষা করায় ১০ মিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে দেশটি। একই সঙ্গে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় জরুরীভিত্তিতে ভারত থেকে পাটপণ্য আমদানি করার নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে স্থায়ীভাবে হারাতে বসেছে সুদানে পাটপণ্য রফতানি। এটা বাংলাদেশের পাটপণ্য রফতানির জন্য চূড়ান্ত এক আঘাত ও অপূরণীয় ক্ষতি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যদি এভাবে সুদানে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার শুরু হয় বা বাজারটি প্রতিযোগী দেশের হাতে চলে যায় তবে পাটপণ্যের রফতানি বাজার বাংলাদেশের জন্য অবশিষ্ট থাকবে না। জানা গেছে, মুসলিম দেশ হওয়ায় গত তিন দশক ধরে সুদান বাংলাদেশ থেকে একচেটিয়াভাবে পাটপণ্য ক্রয় করে আসছে। সুদানের কৃষকদের কাছেও বাংলাদেশের তৈরি পাটের বস্তা খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের পর থেকেই সুদানের সরকারী-বেসরকারী এবং কৃষকগণ বিজেএমসির পাটের বস্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। সুদানে প্রতিবছর প্রায় এক থেকে দেড় লাখ বেল পাটের ব্যাগের প্রয়োজন হয়। সম্প্রতি সুদান সরকার দেড় লাখ বেল পাটের একটি রফতানি আদেশ বিজিএমসির অনুমোদিত একমাত্র এজেন্ট দ্যা গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টার লিমিটেডের মাধ্যমে বিজিএমসিকে পেশ করে। পণ্য উৎপাদন ও জাহাজীকরণের সুবিধার্থে সুদান সরকার দু’দফায় যথাক্রমে ৬৫ কোটি টাকা বিজেএমসি বরাবর আগাম নগদ জমা দেয়। ইতোমধ্যে ২০ হাজার ২০ বেলের জাহাজীকরণ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ১ লাখ ৩০ হাজার বেল পণ্যের উৎপাদন ও জাহাজীকরণ আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এই অবস্থায় সুদান সরকার আরও ১৪০ কোটি টাকা আগাম নগদ প্রদান করতে প্রস্তুত। কিন্তু বিজেএমসির কিছু স্বার্থান্বেষী কর্মকর্তা সুদানী এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগসাজশ করে এই পাটপণ্য রফতানি আটকে রেখেছে। কৃষি মৌসুমের মধ্যে ওই পাটপণ্য রফতানি করতে না পারলে সুদান সরকার ওই পাটের বস্তা নেবে না। ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিদেশী কোম্পানি বাদ দিয়ে দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে সুদানে পাটপণ্য রফতানির নির্দেশ দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। সে লক্ষ্যে সুদানের কোম্পানির সঙ্গে করা চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নেয় বিজেএমসি। এ ব্যাপারে চুক্তি বাতিলের ফাইল পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয় সুদানী ব্যবসায়ীর কাছে পাটপণ্য বিক্রির চুক্তি বাতিলের মতামত দিয়েছে। সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে এই মতামত জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশী কোম্পানিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হস্তক্ষেপ চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায়। আইন মন্ত্রণালয় ওই সুদানী ব্যবসায়ীর সঙ্গে করা বিজেএমসির চুক্তিতে অবৈধ আখ্যায়িত করে তা বাতিলের মতামত দিয়েছে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত উপেক্ষা করেই সুদানী কোম্পানির কাছে প্রায় ২০ হাজার বেল পাটপণ্য রফতানির জন্য বিজেএমসি তার অধীনস্থ মিলগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টারের সঙ্গে চুক্তিকৃত পাটপণ্যও রফতানির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই চুক্তি সত্ত্বেও বিজেএমসির একটি স্বার্থান্বেষী মহল সুদানে পাটপণ্য বিক্রির জন্য আমিন আবদেল লতিফ নামে এক সুদানী ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তি করে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এই চুক্তির ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাইলে, ওই মতামত আসার আগেই বিজেএমসি ওই সুদানী ব্যবসায়ীর কাছে ২০ হাজার ২০ বেল পাটের ব্যাগ পাঠাতে তার মিলগুলোকে শিপমেন্টের নির্দেশ দেয়। ইতোমধ্যে বিজেএমসির মিলগুলো ২০ হাজার ২০ বেল পাটের ব্যাগ শিপমেন্ট করে ফেলেছে। তবে বিজেএমসি এখনও পণ্য রফতানির ডকুমেন্ট সুদানী ব্যবসায়ীর কাছে পাঠায়নি। যদিও ওই ডকুমেন্ট তড়িঘড়ি পাঠানোর উদ্যোগ চলছিল। এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চলে আসায় তা থমকে গেছে। একদিকে পাটপণ্য জাহাজীকরণ অনিশ্চিত, অন্যদিকে গত দু’মাসে সুদান সরকার কোন ইতিবাচক আশ^াস না পাওয়ায় দেশটির মন্ত্রিসভায় পাটপণ্যের পরিবর্তে ১০ মিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ আমদানির আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার সেখানে একবার শুরু হয়ে যায় তবে পাটপণ্যের জন্য সেটি হবে বিরাট একটি আত্মঘাতী ও মর্যাদাহানিকর ঘটনা। একই সঙ্গে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় জরুরীভিত্তিতে ভারত থেকে পাটপণ্য আমদানি করার নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে স্থায়ীভাবে হারাতে বসেছে সুদানে পাটপণ্য রফতানি। এটা বাংলাদেশের পাটপণ্য রফতানির জন্য চূড়ান্ত এক আঘাত ও অপূরণীয় ক্ষতি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যদি এভাবে সুদানে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার শুরু হয় বা বাজারটি প্রতিযোগী দেশের হাতে চলে যায় তবে পাটপণ্যের রফতানি বাজার বাংলাদেশের জন্য অবশিষ্ট থাকবে না।
×