ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার চার নদী থেকে শীঘ্রই ১৩ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

ঢাকার চার নদী থেকে শীঘ্রই ১৩ অবৈধ স্থাপনা  উচ্ছেদ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দখল করে গড়ে ওঠা ১৩টি স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খুব শীঘ্রই এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। সচিবালয়ে রবিবার নদীর নাব্য ও স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তবে উচ্ছেদ অভিযানের সুবিধার্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি মন্ত্রী। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী দ্বারা ঢাকা শহর পরিবেষ্টিত। গত শনিবার দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়- ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থাপনা গড়ে ওঠায় ঢাকার চারপাশে নদী দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন অসহায় হয়ে পড়েছে। তালিকা তৈরি করে এসব প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর ও উচ্ছেদে কমিটিও গঠন করা হয়। এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই। স্পর্শকাতর এসব স্থাপনা উচ্ছেদে কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না। নদী দখল করা প্রতিষ্ঠানের তালিকাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে এ সকল উদ্যোগ। শনিবার এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরদিনই রবিবার এক বৈঠক করে এক সপ্তাহের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর ঘোষণা দিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী। শাজাহান খান বলেন, নদী এলাকায় অনেক স্থাপনা যেগুলো অবৈধভাবে স্থাপিত হয়েছে এবং চিহ্নিত হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে সেগুলো উচ্ছেদের কাজ শুরু করেছি। তবে আমরা ১৩টি স্থাপনা নির্ধারণ করলাম (সভায়), যেগুলো খুব দ্রুততার সঙ্গে অবিলম্বে অপসারণ করব। তিনি বলেন, দখলকারীরা যত শক্তিশালী হোক আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালাব। কয়েকটি নামও এসেছে; এ ১৩টির মধ্যে অনেকে হয়ত বড় বড় স্থাপনার মালিক রয়েছেন। সেগুলোকেও কিন্তু আমরা উচ্ছেদ করব। এ ১৩টি স্থাপনার বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (টাস্কফোর্স) নূর-উর রহমান ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান এম মোজাম্মেল হক কোন তথ্য জানাতে রাজি হননি। তারা জানান, স্থাপনার নামগুলো আগেই প্রকাশিত হলে উচ্ছেদ অভিযানে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। নৌপরিবহনমন্ত্রী বলেন, নদীর যে সীমানা পিলারগুলো নিয়ে আপত্তি ছিল সেগুলোর জন্য আমাদের নক্সার প্রয়োজন। সেই নক্সাগুলো ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। এটা এক সপ্তাহের মধ্যে সব জেলা প্রশাসকের কাছে আমরা পৌঁছে দেব। খুব শীঘ্রই জেলা প্রশাসকরা এ নক্সার ভিত্তিতে নদীর আপত্তিজনক সীমানায় চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন। ইতোমধ্যে যেসব পিলার নির্ধারিত হয়েছে, এগুলোর মধ্যে যেগুলো আপত্তিজনক আমরা সেগুলোর বিষয়ে এক মাসের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেব। সীমানা পিলারকে কেন্দ্র করে অনেক জায়গায় নতুন করে অবৈধ দখলের প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে শাজাহান খান বলেন, আমরা সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের একটি পরিপত্র জারি করে নির্দেশনা দেব। সেটি হলো পুনরায় জরিপ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব এলাকায় মাটি ভরাট বা কোন ধরনের স্থাপনা করা যাবে না। মন্ত্রী বলেন, নদীপাড়ের যে জায়গাগুলোর খাজনা বিআইডব্লিউটিএ নিয়ে থাকে, দেখা যায় তহশীল অফিসে গিয়ে এ জমির দাবিদার অনেকে খাজনা দিয়ে থাকে। তাদের খাজনা যাতে না নেয়া হয় সেজন্য তহশীলদারদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হবে। সীমানা পিলারের ডিজাইনের ব্যাপারে সভায় একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রী বলেন, যে সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে তার অধিকাংশ অনেকে ব্যক্তিগত স্বার্থে সরিয়ে নিয়েছে। পিলারের উপরের অংশে যে লোহার পাইপ দেয়া হয়েছে তা কেটে নেয়া হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ সীমানা পিলারগুলো আরও শক্তভাবে করব। উপরের অংশে যেখানে পাইপ থাকে এটা আরসিসি দিয়ে করা, যাতে কেউ কেটে নিতে না পারেন। নদী দখল-দূষণ রোধে জনগণকে সচেতন করে তুলতে প্রচারমূলক কার্যক্রম চলবে বলেও জানান মন্ত্রী। স্থানীয় জনগণকে নিয়ে কমিউনিটি কমিটি করা হবে জানিয়ে শাজাহান খান বলেন, যেসব জায়গা আমরা উচ্ছেদ ও অপসারণ করব সেসব জায়গায় যাতে কেউ দখল করতে না পারে সেজন্য স্থানীয় জনগণকে নিয়ে এ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। উচ্ছেদের পর আবার দখল হয়ে যাচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসনকে কেন জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে নাÑ একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী বলেন, তাদের কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে নতুন করে কেউ এ ধরনের কার্যক্রম করতে না পারে। জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত এসব জায়গা পরিদর্শন করবেন। দখল যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নেবেন। সেভাবেই আজ আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। এত মিটিং করার পরও নদী দখল রোধে তেমন সাফল্য নেইÑ এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের জনবল অভাব, শক্তিও কম। উচ্ছেদে যে যন্ত্রগুলো দরকার সেগুলোও আমাদের ছিল না, এস্কেভেটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কিনে আমরা এটা শুরু করেছি। শাজাহান খান বলেন, নদী দূষণমুক্ত করার জন্য কী করব তার দায়িত্ব নৌবাহিনীকে দেয়া হয়েছিল। তারা একটা প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। সেই কমিটি কিভাবে হবে সেজন্য একটি সামারি (সার-সংক্ষেপ) প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেই সামারি অনুমোদন করলে নদী দূষণমুক্ত করার জন্য সম্পৃক্ত করে আমরা সেই কার্যক্রমটা শুরু করব। সভায় ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নৌপরিবহন সচিব আশোক মাধব রায়সহ টাস্কফোর্সের অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
×