ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতের প্রতি অনুরোধ মেয়র আনিসুল হকের

‘মোনায়েম খানের বাড়ি নিয়ে যেন কোন স্থিতাবস্থা না দেয়া হয়’

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

‘মোনায়েম খানের বাড়ি নিয়ে যেন কোন স্থিতাবস্থা না দেয়া হয়’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বনানীতে স্বাধীনতাবিরোধী কুখ্যাত মোনায়েম খানের বরাদ্দকৃত বাড়িটির স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরির দাবি জানিয়েছেন দেশের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ ৯টি সংগঠন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। একই সঙ্গে তারা সকল স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও মৃত রাজাকার-আলবদরদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে মরণোত্তর বিচার দাবি করেন ও তাদের অর্জিত সকল সম্পত্তি বাজেয়াফত করে যুদ্ধাহতসহ সকল মুক্তিযোদ্ধার কল্যাণে ব্যয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানান। এ সময় ডিএনসিসি মেয়র রাজধানীর অবৈধভাবে দখলকৃত হাজার হাজার একর জমি পুনরুদ্ধারে একটি আলাদা কমিশন গঠন করতে প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানান। শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর বনানীর ২৭নং রোডের কবরস্থানসংলগ্ন স্বাধীনতাবিরোধী মোনায়েম খানের ৫ বিঘা জমি অবৈধ দখল করে তৈরি বাড়ির সামনের রাস্তায় সকল যুদ্ধাপরাধীর সম্পদ বাজেয়াফত করার দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক এ মানববন্ধনে এসে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন ও দাবি বাস্তবায়নে তিনি সরকার, প্রধান বিচারপতি ও উচ্চ আদালতের সর্বোচ্চ সহায়তা কামনা করেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বাংলাদেশ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সমিতি, প্রজন্ম ৭১, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা, যুদ্ধাপরাধ গণবিচার মঞ্চ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন এবং আমরা মু্ক্িতযোদ্ধার সন্তানসহ মোট ৯টি সংগঠন বিশাল মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের জন্য শুধু ফাঁসিই যথেষ্ট নয়, তাদের অর্জিত সকল সম্পত্তি বাজেয়াফত করা হোক। স্বাধীনতার অন্যতম বিরোধিতাকারী মোনায়েম খানের এ জমিতেই শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হাসপাতাল তৈরি করা হোক। এ যুদ্ধাপরাধীদের সকল সম্পত্তি বিক্রি করে তা সকল ভিকটিমকে সাপোর্ট ও অর্থ প্রদান করা হোক। স্বাধীনতাবিরোধীদের কোন সম্পত্তি এদেশে থাকতে পারে না। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি রায়ের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের সব সম্পদ বাজেয়াফত করে তা শহীদ পরিবারকে দিতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে আইন না থাকায় এটা তারা দিতে পারছেন না। এজন্য প্রয়োজনে আইসিটি আইন সংশোধন করে মৃত সকল যুদ্ধাপরাধীর মরণোত্তর বিচার দাবি করেন। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে আমরা বলছি আইন সংশোধন করুন। গত জানুয়ারিতে আমরা সরকারের কাছে এ আইন বাতিল করতে স্মারকলিপি দিয়েছি। তাই এদের সব সম্পত্তি বাজেয়াফত করে শহীদ পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। কারণ এরা হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করে রেখেছে, শহীদ পরিবারগুলো রাস্তায় ভিক্ষা করছে। এটা বাংলাদেশে মেনে নিতে পারছি না। মানববন্ধনে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, আমি বিচারক থাকাকালীন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া বিভিন্ন রায়েও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করার কথা বলেছি। এদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের কিন্তু রাজাকার বা আলবদর কিংবা স্বাধীনতাবিরোধীদের নয় যে, যুগের পর যুগ অবৈধভাবে নাগরিকদের সম্পত্তি দখল করে রাখবে। তাই এ জমিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণার্থে ব্যয় করা। এত বছর স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকারপ্রেমী খালেদা জিয়ার সরকার ছিল বলে মেনায়েম খানের মতো কুখ্যাত রাজাকারের সন্তানরা এ জমি দখল করে রেখেছিল। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার তাই কোনক্রমেই আর এ সম্পত্তি তারা দখলে রাখতে পারে না। তিনি এজন্য সরকার ও বিচার বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেন। যারা বাংলাদেশ চায়নি, তাদের জমি কেন বাংলাদেশে থাকবে- এ প্রশ্ন তোলেন শহীদ ডাঃ আলীম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরী। বিশাল এ মানববন্ধনে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাগণ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানগণ, ডিএনসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডের কমিশনারসহ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় নাগরিকগণ উপস্থিত ছিলেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এ মানববন্ধনে ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক বেলা এগারোটার দিকে এসে সংহতি প্রকাশ করে বলেন, এ স্থান নিয়ে আজকের উপস্থিত সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সকল দাবির প্রতি আমি একমত পোষণ করছি ও সম্পূর্ণভাবে সমর্থন জানাচ্ছি। জায়গাটি উদ্ধারের পর এখানে মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করা হবে। তিনি উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থার সুযোগ নিয়ে কেউ যেন জনগণের চলাচলের রাস্তাঘাট দখল করে রাখতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানান। এছাড়া মোনায়েম খানের বাড়ি নিয়ে যেন কোন স্থিতাবস্থা না দেয়া হয় সেজন্য তিনি আদালতের কাছে দাবি জানান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দখলকৃত জমি উদ্ধারে সহযোগিতা কামনা করেন। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমি দেখছি হাজার হাজার বিঘা জমি একটি স্থিতাবস্থার (স্টে অর্ডার) সুযোগ নিয়ে দখল করে আছে। প্রধান বিচারপতির কাছে আমাদের দাবি, দখলকৃত সকল জমি পুনরুদ্ধারে একটি আলাদা কমিশন গঠন করুন। যেসব জমি প্রভাবশালীরা আটকে রেখেছে, সেগুলো মুক্ত করে দিন। ঢাকা শহরের হাজার হাজার বিঘা জমি প্রতাপশালী-প্রভাবশালী লোকেরা দখল করে রেখেছে। গরিব হকাররা রাস্তা দখল করলে তাদের তাড়ানো যায় কিন্তু বড়লোকরা পুলিশকে তাড়ানোর ক্ষমতা রাখে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সে যুদ্ধে নেমেছে। তারই অংশ হিসেবে এ জমির একটি অংশ আমরা দখলমুক্ত করেছি। উল্লেখ্য, একাত্তরে মুক্তিবাহিনীর হামলায় নিহত মোনায়েম খানের উত্তরাধিকাররা বানানীর ওই বাড়িসংলগ্ন সরকারী ১০ কাঠা জমি দখল করে রেখেছিলেন, যা গত ৩ নবেম্বর উচ্ছেদ করে উত্তর সিটি কর্পোরেশন। তখন মেয়র আনিসুল চিহ্নিত এই স্বাধীনতাবিরোধীর বাড়ির বরাদ্দ বাতিলে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপর গত বুধবার গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বাড়িটির বরাদ্দ বাতিলের জন্য তিনি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, ‘ওইটা ক্যানসেল হয়ে গেছে। আমি বলে দিয়েছি, যে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, তার প্লট বাতিল হবে। সেটা গণপূর্তের প্লটই হোক আর রাজউকেরই হোক। সেটা বাতিল। রাজউককে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা সেইটা ক্যানসেল করে দেন, আমরা মন্ত্রণালয় থেকে ক্যানসেল করে দেব।’
×