ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকাকে হারিয়ে রাজশাহীর প্রথম জয়

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১২ নভেম্বর ২০১৬

ঢাকাকে হারিয়ে রাজশাহীর প্রথম জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কথায় আছে, অতি সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট। ঢাকা ডায়নামাইটসের বেলাতে যেন তাই ঘটছে। এত তারকা ক্রিকেটার দলে যে কাকে রেখে কাকে একাদশে রাখলে সুবিধা হবে, তা নিয়েই বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তাতে করে শুক্রবার রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের একাদশ পরিবর্তন করে নেমে বিপত্তিতেও পড়ে ঢাকা। ১১ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে হারে। সামিত প্যাটেল (৪৪*) ও সাব্বির রহমান রুম্মনের (৩১) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সঙ্গে দুজনের চতুর্থ উইকেটে ৭৩ রানের জুটিতে টুর্নামেন্টে প্রথম জয়ও পায় নতুন দল রাজশাহী। ঢাকার করা ১৩৮ রান অতিক্রম করতে গিয়ে ২৭ রানেই ২ উইকেট হারায় রাজশাহী। এর মধ্যে রনি তালুকদারকে আউট করে বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট (৫০ উইকেট) শিকারী হয়ে যান সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেভর কুপারকে (৪৯ উইকেট) পেছনে ফেলেন। এর পর সাব্বির ও উমর আকমল ভালই এগিয়ে চলছিলেন। ৩৮ রানের জুটিও গড়েন। এমন সময় পেসার আবু জায়েদের বলে পয়েন্টে সাকিবের হাতে ধরা পড়েন উমর (২৭)। চতুর্থ উইকেটে তো সাব্বির-প্যাটেল মিলে আরও বড় জুটি গড়েন। ৭৩ রানের জুটি হয়। জিততে ১ রান লাগে। হাতে বল থাকে ১২টি। সাব্বির (৩১) আউট হয়ে যান। শেষে শহীদ ওয়াইড দেন। তাতে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮.১ ওভারে ১৩৯ রান করে জিতে যায় রাজশাহী। প্যাটেল ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন। টুর্নামেন্টে প্রথম জয় পায় রাজশাহী। শুরুতে ৪৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে ঢাকা। একদিকে ডানহাতি মেহেদী হাসান মিরাজ, আরেকদিকে ইংল্যান্ডের বাঁহাতি সামিত প্যাটেল স্পিন-বিষ ছুড়তে থাকেন। তাতে ১৩ রানে মিরাজের বলে সাঙ্গাকারা বোল্ড হওয়ার পর ৪৩ রানে গিয়ে আরও ৩ উইকেটের পতন ঘটে যায়! এ সময় সপ্তম ওভারেই ২ উইকেট তুলে নেন প্যাটেল। ৪৩ রানের সময় শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান মাহেলা জয়াবর্ধনে ও মেহেদী মারুফকে আউট করে দেন। পরের ওভারের প্রথম বলেই আবার মিরাজের বলে এগিয়ে গিয়ে খেলতে যান সাকিব। উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান স্টাম্পিং করে দেন। ঢাকা বিপাকে পড়ে যায়। স্কোর ॥ রাজশাহী কিংস-ঢাকা ডায়নামাইটস ম্যাচ টস ॥ রাজশাহী (ফিল্ডিং)। ঢাকা ডায়নামাইটস ইনিংস ১৩৮/৫; ২০ ওভার (মেহেদী ২৫, সাঙ্গাকারা ২, জয়াবর্ধনে ১১, সাকিব ০, বোপারা ২০, মোসাদ্দেক ৫৯*, ব্রাভো ১৩*; প্যাটেল ২/২০, মিরাজ ২/২২)। রাজশাহী কিংস ইনিংস ১৩৯/৪; ১৮.১ ওভার (মুমিনুল ৯, রনি ১৪, সাব্বির ৩১, উমর ২৭, প্যাটেল ৪৪*, সামি ০*)। ফল ॥ রাজশাহী কিংস ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা ॥ সামিত প্যাটেল (রাজশাহী কিংস)। টানা দুই ম্যাচে হারল কুমিল্লা ॥ স্পোর্টস রিপোর্টার, টস করতে এসে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক মাশরাফি জড়িয়ে ধরলেন বরিশাল বুলসের অধিনায়ক মুশফিককে। দৃশ্যটি চিরকালীন ফ্রেমে বন্ধী হয়ে থাকার মতো। দুইজনের চেহারায় তখন আনন্দ ঝলমল করছে। কিন্তু ম্যাচ শেষ হতেই ৬ উইকেটের হারে সেই আনন্দ মাশরাফির চেহারা থেকে উধাও! মুশফিকের দল বরিশালের কাছে হেরে যে আবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) চলমান চতুর্থ আসরে টানা দুই হারও হয়ে গেল কুমিল্লার। মাশরাফির চেহারা যেখানে ফ্যাকাশে, মুশফিকের মুখ তখন হাসিতে ভরা। বরিশাল যে টুর্নামেন্টে প্রথম জয়টি তুলে নিয়েছে। প্রথম ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসের কাছে হারের পর শুক্রবার কুমিল্লাকে হারিয়েছে। যে বরিশাল গত আসরে কুমিল্লার কাছে তিনটি ম্যাচেই হেরেছে। লীগ পর্বে দুই ম্যাচে ও ফাইনালে এক ম্যাচে হেরেছে। অবশেষে চলমান আসরে এসে সেই কুমিল্লাকেই হারিয়ে দিয়েছে বরিশাল। একরকম প্রতিশোধ নেয়াই হয়ে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারলন স্যামুয়েলসের ৪৮ ও পাকিস্তানের সোহেল তানভিরের অপরাজিত ৩০ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১২৯ রান করতে পারে কুমিল্লা। জবাবে ৪ উইকেট হারিয়ে ৯ বল বাকি থাকতেই ১৩০ রান করে জিতে যায় বরিশাল। ম্যাচের নেতৃত্ব দেন আবার মুশফিক। হাসিতো তার মুখে থাকবেই। শুধু কি নেতৃত্ব দিলেন, ২৩ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৩ রানের চনমনে ইনিংসও খেললেন। শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরাকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৪৯ রানের জুটিও গড়লেন। যে জুটিটিই বরিশালকে জেতানোর পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। পেরেরাও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। ১২ বলে জিততে যখন ১০ রান দরকার পেরেরাতো তিন বলেই তা তুলে ফেললেন। ২০ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং প্রদর্শন করে অপরাজিত ৩৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের নায়কও বনে গেলেন পেরেরা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স হচ্ছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। দলটির এবার কী হলো? টানা দুই ম্যাচে হেরে গেল। নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিটাগাং ভাইকিংসের কাছে হারের পর বরিশাল বুলসের কাছেও ধরাশায়ী হলো। কেন এমন হচ্ছে, কুমিল্লার অধিনায়ক মাশরাফি তা বুঝতে পারছেন। বলেছেনও, সঠিক কম্বিনেশনই হচ্ছে না। এই কম্বিনেশনের সমস্যা নেই আবার বরিশালের। আর তাইতো ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে। তবে বরিশালের অধিনায়ক মুশফিক চান স্পোর্টিং উইকেট। যে উইকেটে ব্যাটসম্যানরা রান করতে পারবে। আবার বোলাররা উইকেটও নিতে পারবে। না হলে যে উইকেটে খেলা হচ্ছে তা কঠিন উইকেটই। উইকেটের জন্য রান হচ্ছে না। টি২০ ক্রিকেটটাই হচ্ছে রানের খেলা। যেখানে ব্যাটসম্যানরা ‘চার-ছক্কা’ হাঁকাবেন। স্কোরবোর্ড মজবুত হয়ে উঠবে। তাতে করে যে দলের বোলাররা ভাল করতে পারবেন, তারাই জিতবে। কিন্তু সেই রানই হচ্ছে না। আর তাতে করে বোধহয় সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া অন্য কোনদিনই দর্শক স্টেডিয়ামে উপচে পড়ছে না। স্পোর্টিং উইকেট এখন মুশফিকরা পাবেন কিনা তা সময়ই বলবে। তবে যে রকম উইকেটই হোক, জয় যে কোন দলের ক্রিকেটারদের জন্যই খুশির খবর। মুশফিক তাই শেষ পর্যন্ত খুশি। কিন্তু মাশরাফি কী খুশি? সেই সুযোগই নেই। টানা দুই ম্যাচে হারের পর কোন দলের অধিনায়কের মধ্যে কি বিন্দুমাত্র খুশি হওয়ার সুযোগ আছে।
×