ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

সম্মাননা পেলেন দুই বাংলার পাঁচ গুণীজন

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ৬ নভেম্বর ২০১৬

সম্মাননা পেলেন দুই বাংলার পাঁচ গুণীজন

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র উৎসব। শনিবার নগরীর বড়কুঠি লালন মঞ্চে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডাঃ এফএমএ জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক আহসান কবির লিটন, ভারতের ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক প্রেমেন্দ্রনাথ মজুমদার, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার প্রমুখ। বুদ্ধদেব দাসগুপ্তের ‘আনয়ার কা আজাব কিস্সা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শুরু হয় এ উৎসব। ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি এ উৎসবের আয়োজন করেছে। এ উৎসবে বাংলাদেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের ৩০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই বাংলার পাঁচ চলচ্চিত্রকার ও গবেষকদের ঋত্বিক সম্মাননা পদক-২০১৬ দেয়া হয়েছে। উপমহাদেশের কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের নামানুসারে গেল কয়েক বছর ধরে এ পদক দিয়ে আসছে রাজশাহীর ‘ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি’। রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মিলনায়তনে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিজয়ীদের মধ্যে সম্মাননা পদক তুলে দেয়া হয়। বর্তমানের এ কলেজটিই ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈত্রিক নিবাস। ঋত্বিক ঘটকের ৯১তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজশাহীতে পাঁচ দিনের চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুক্রবার পাঁচ চলচ্চিত্রকার ও গবেষককে সম্মাননা পদক দিলেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। চলচ্চিত্র নির্মাণে অনন্য অবদান রাখায় এবার এ পদক পেলেন ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ও বাংলাদেশের মোরশেদুল ইসলাম। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে অনন্য অবদান রাখায় পদক দেয়া হলো ভারতের ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক প্রেমেন্দ্র মজুমদারকে। মঞ্চ নাটক ও চলচ্চিত্রে আলোকসম্পাতে অনন্য অবদান রাখায় এ পদক পেলেন রাজশাহীর আলোকশিল্পী আবু তাহের। আর চলচ্চিত্র নিয়ে গবেষণায় অসামান্য অবদান রাখায় এ পদক জিতলেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র ও নজরুল গবেষক অনুপম হায়াৎ। অনুপম হায়াৎ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারায় তার পক্ষে পদক গ্রহণ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল। বাকি সবাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পদক গ্রহণ করেন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডাঃ এফএমএ জাহিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব পরিচালক আহসান কবীর লিটন। এর আগে ঋত্বিক ঘটক স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। পদক পাওয়ার অনুভূতিতে চলচ্চিত্রকার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বলেন, ঋত্বিক ঘটক সারাবিশ্বের সচেতন দর্শকের ভেতর ছড়িয়ে আছেন। বাইরের দেশে গেলে সে দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা এখনও তার কাছে ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্রের হালহকিকত খোঁজ নেন। তার সৃষ্টি আজও মানুষকে বিস্মিত করে। তিনি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন তার চলচ্চিত্রে। মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ঢাকার বাইরে চলচ্চিত্র সংসদ কাজ করছে, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি চমৎকার এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ করেছে। তাকে এ সম্মাননা দেয়ায় তিনি কৃতজ্ঞ। প্রেমেন্দু মজুমদারের ভাষায়, ‘ঋত্বিক ঘটক সব চলচ্চিত্র নির্মাতার কাছে আদর্শ। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এ সম্মাননা জেতা ভাগ্যের ব্যাপার। বাংলাদেশে এসে, যে দেশে আমাদের শেকড় রয়েছে- সেখানে এমন সম্মান পাওয়া আরও সৌভাগ্যের। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি আপনাদের দেয়া এ সম্মান ধরে রাখার চেষ্টা করব।’ প্রসঙ্গত, ঋত্বিক ঘটক ১৯২৫ সালের ৪ নবেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস এখনকার রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক কলেজ। ঋত্বিক ঘটক চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ শেষ করেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে। ১৯৪৬ সালে আইএ পরীক্ষা দেন রাজশাহী কলেজ থেকে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পরই পরিবারের সঙ্গে চলে যান ভারতে। তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো আজও মানুষকে বিমোহিত করে। তাকে স্মরণেই গেল কয়েক বছর ধরে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ চলচ্চিত্র উৎসব।
×