ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতীয় হাইকমিশন ও ইন্দো-বাংলা চেম্বারের সেমিনার

অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন বাস্তবভিত্তিক করার পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৩ নভেম্বর ২০১৬

অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন বাস্তবভিত্তিক করার পরামর্শ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ-ভারত নৌপথের উন্নয়নে দুই দেশের অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টন বাস্তবভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। উজানের পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় ভাটির নদীতে চর জেগে-দূষণ ছড়িয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে নৌপথ। ভারতীয় হাইকমিশন এবং ইন্দো-বাংলা চেম্বার কমার্স আয়োজিত এক সেমিনারে বুধবার নদীর পানি বণ্টনের উপর জোর দেয়া হয়। হোটেল সোনারগাঁয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বলা হয়, পণ্য পরিবহনে রেলপথের তুলনায় তিন ভাগ আর সড়কের তুলনায় জলপথে অন্তত ১০ ভাগ খরচ কম। সরকারী খাতের পাশাপাশি বেসরকারী খাতকেও নৌপথে বিনিয়োগের আহ্বান জানান বক্তারা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি, এ্যাডভোকেসি এ্যান্ড গবর্নেন্স (আইপেগ) এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনীর খসরু বলেন, দুই দেশের নৌপথ উন্নয়নে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে গুরুত্ব দিতে হবে। একটির সঙ্গে আরেকটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে রেখে লাভবান হওয়ার চিন্তা করা ঠিক নয়। বরং পানির প্রবাহ ঠিক থাকলে বাণিজ্য এবং পর্যটন থেকে আরও বেশি আয় করা সম্ভব। নৌপথের উন্নয়নে উভয় দেশকে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করেন। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদী রয়েছে ৫৪টি। পানি বণ্টনে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয়। উজানেই বাঁধ অথবা ড্যাম দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এতে ভাটির বাংলাদেশে নদীগুলো মরতে বসেছে। এমনকি দেশের নৌপথও দিনের পর দিন সংকীর্ণ হচ্ছে। ভারতকে নৌপথ ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পর নৌবাণিজ্য নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল- উভয় দেশের সহায়তায় বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নৌপথ ড্রেজিং করা হবে। তবে সেই উদ্যোগ খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। ভারত-বাংলাদেশের নৌপথের উন্নয়ন বিষয়ে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আন্তঃবাণিজ্য সম্প্রসারণে নদী পথ বিশেষ ভূমিকা রাখে। ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক চুক্তির পর ভারতে বাংলাদেশের রফতানি ২৯ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেমিনারে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, নৌপথকে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের উপযোগী করতে এ খাতে বেসরকারী বিনিয়োগ দরকার। নৌ যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করলে উভয় দেশের বাণিজ্যে আরও সুবিধা হবে বলে মনে করেন তিনি। সেমিনারে বক্তরা বলেন, আঠারো শতকে বাংলাদেশ এবং ভারতের নৌপথগুলো সচল ছিল। কিন্তু আমরা দিন দিন তা ধ্বংস করেছি। অতীতে যদি নৌপথ সচল রাখা সম্ভব হয় তাহলে এখন কেন সম্ভব নয় তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত বলে মনে করা হয়। সেমিনারে বলা হয়, এখনই উভয় দেশ মিলে নৌপথ বাঁচানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরী বলে উল্লেখ করা হয়। সেমিনারে বলা হয়, শুষ্ক মৌসুমে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। আর বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ বেড়ে গেলে পানি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে। সেমিনারে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক আহমেদ করিম বলেন, একসময় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নৌযোগাযোগ বজায় থাকায় উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল, যা সারা বিশ্বকে আকৃষ্ট করত। এখন নানা করণে যা ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি মনে করেন আবারও এই যোগাযোগ তৈরি করা যায়। তিনি বলেন, সড়কের প্রতিবছর তিন বার সংরক্ষণ ব্যয় প্রয়োজন হয়। কিন্তু নদীপথে এই ব্যয় অনেক কম। নদীর পানি প্রবাহ ঠিক না থাকায় নদীতে চর জেগেছে এবং দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে। ভারত এবং বাংলাদেশের ঐকমত্য সৃষ্টি হলে নৌপথ খনন করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। আইবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে এছাড়ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
×