ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চরম অনিয়মের ফল

রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধে ধস

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৩ নভেম্বর ২০১৬

রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধে ধস

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ মহানগরীর সেখেরচক বিহারীবাগান এলাকায় পদ্মা নদীর পাড় ঘেঁষা সড়কে (ওয়াকওয়ে) ভয়াবহ ধসের পর এবার বুলনপুর এলাকায় বাঁধের বিশাল অংশ দেবে গেছে। পদ্মানদীর পানি দ্রুত কমতে শুরু করায় ল-ভ- হয়ে গেছে বাঁধের ব্লক। গেল বর্ষায় পানি বৃদ্ধির পর এ বাঁধ হুমকির মুখে পড়লে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তড়িঘড়ি করে কাঁচা ব্লক পানির নিচে ফেলায় এখন সেসব ব্লক ধসে একাকার হয়ে গেছে। ফলে কোটি টাকায় আপদকালীন ভাঙন ঠেকলেও তা স্থায়ী হয়নি। বুধবার নগরীর বুলনপুর এলাকায় পুলিশ লাইনের সামনের বাঁধে গিয়ে দেখা যায় বাঁধের সব ব্লক ধসে লণ্ড ভণ্ড হয়ে গেছে। বাঁধের বিশাল এলাকাজুড়ে ধস নেমেছে। কোন ব্লকের অস্তিত্ব নেই। সব সরে এলোমেলো হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাঁধের ওই অংশ চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। হঠাৎ বাঁধের বিশাল অংশ ধসে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের ভাষ্য এলাকাবাসীর বাধা সত্ত্বেও পাউবো কর্তৃপক্ষ অদক্ষ ঠিকাদারদের কাজে লাগিয়ে কোটি টাকার কাঁচা ব্লক সেখানে ফেলে। ফলে পানি কমে যাওয়ায় এখন ব্লক সরে বিশাল অংশ দেবে গেছে। এখনই সংস্কার না করলে পদ্মার এ বাঁধ ভবিষ্যতে নগরবাসীর জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পদ্মার বাঁধের প্রভাবে রাজশাহী পুলিশলাইন ও বুলনপুর এলাকা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। জানা গেছে, বর্ষায় পদ্মায় অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি তীব্র ভাঙন দেখা দেয় নগরীর পুলিশ লাইননের সামনের শহর রক্ষা মূল বাঁধে। বিশাল অংশজুড়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ওই সময় তীব্র স্রোতে বাঁধের ব্লক খুলে নদীতে চলে গেছে। পুলিশ লাইনসের দক্ষিণ পাশের রাস্তার ওপরে বাঁধের নিচে বিশাল অংশজুড়ে নদী গর্ভে বিলিন হওয়ায় বাঁধের বেশ কিছু নারিকেল গাছও বিলীন হয়ে যায়। এ প্রেক্ষিতে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধের নিচে ‘প্রোটেকশন ওয়ার্ক’ শুরু করে। এ কাজেই করা হয় চরম অনিয়ম। সে সময়ে প্রবল স্রোত ঠেকাতে সময় রাতারাতি কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে কাঁচা ব্লক ফেলে আপদকালীন বাঁধ রক্ষা করা হয়। ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষা করা হলেও তিন মাসের ব্যবধানে সে সব ব্লকের এখন আর কোন অস্তি¡ত্ব নেই। শুষ্ক মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে নদীতে পানির টান পড়ায় এলোমেলো হয়ে গেছে সব ব্লক। এদিকে কয়েকদিন আগে মহানগরীর সেখেরচক বিহারীবাগান এলাকায় পদ্মা নদীর পাড় ঘেঁষা সড়কে (ওয়াকওয়ে) ভয়াবহ ধস নেমেছে। প্রায় ২০০ মিটার সড়ক পাঁচ ফুটের মতো দেবে সড়কের পাশের ফুটপাথও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ নিয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করলেও এ ওয়াকওয়ে সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এরই মধ্যে নগরীর বুলনপুর এলাকার বিশাল অংশের ব্লক ল-ভ- হয়ে দেবে গেলেও সহসা তা সংস্কারের উদ্যোগ নেই পাউবোর। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, বর্ষায় আপদকালীন কাজের পর তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এবং দ্রুত পানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দ্রুত বাঁধ সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে পাউবো রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান জানান, তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠানে রয়েছেন। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কুড়িগ্রামে বিলীন তীর রক্ষা বাঁধ রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নে ধরলার ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ। ইতোমধ্যে ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২শ’ মিটার তীর রক্ষা বাঁধ। শুকনো মৌসুমে আকস্মিক ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ি হারানো দুই শতাধিক পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় দ্রুত সরকারী সহায়তা প্রত্যাশা করছে অসহায় পরিবারগুলো। এক সপ্তাহে ধরলা নদীর তীব্র ভাঙ্গনে সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের মোগলবাসা গ্রামের বাজারসংলগ্ন প্রায় ২শ’ মিটার তীর রক্ষা বাঁধ, দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েক একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে ইউনিয়নের সঙ্গে জেলা শহরের যোগাযোগের একমাত্র পাকা সড়ক, ঐতিহ্যবাহী মোগলবাসা হাট, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, নিধিরাম, বাঞ্চারাম ও কিসামত গ্রামসহ দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভাঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া না হলে আগামী এক মাসের মধ্যে মোগলবাসা হাটসহ তিনটি গ্রাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পাকা সড়ক নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বন্ধ হয়ে যাবে মোগলবাসা ইউনিয়নের সঙ্গে জেলা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা। শেষ আশ্রয় টুকু হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে পাচ্ছেন না নদী ভাঙ্গনের শিকার পরিবার বার বার যোগাযোগের পরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাড়া না পাওয়ায় নদী পাড়ের মানুষকে ঘরবাড়ি হারাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকার মানুষের। মোগলবাসা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বাবলু জানান, নদী ভাঙ্গন শুরুর আগে থেকেই আমরা স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। মানববন্ধন করে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ভ্রƒক্ষেপই করেনি। এজন্য এ এলাকার ২ শতাধিক পরিবারকে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হতে হয়েছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ধরলার ভাঙ্গন রোধে জরুরী ভিত্তিতে বাঁশের বান্ডাল দেয়ার কাজ শুরু করেছি। মোগলবাসা এলাকার ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
×