ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ;###;মোহাম্মদ আলী

দুই নেত্রী?

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ৩ নভেম্বর ২০১৬

দুই নেত্রী?

(২ নবেম্বরের চতুরঙ্গ পাতার পর) সরকারপ্রধান হিসেবে বেগম জিয়া যেমন দক্ষতা, দায়িত্বজ্ঞান এবং সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারেননি, বর্তমানে নিজের দল পরিচালনায় এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি, বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবীরাসহ, সর্বমহলে সমালোচিত হচ্ছে। অর্বাচীন, দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী পুত্রের এবং অরাজনৈতিক পরামর্শদাতাদের কথায় দলকে তিনি শুধু ব্যর্থতার আবর্তেই ঠেলে দিচ্ছেন। সিনিয়র নেতাদের অবজ্ঞা এবং জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া যে দলকে কি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা তিনি মোটেও বুঝতে পারছেন না। তাই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন এবং পরবর্তীতে তিন মাসব্যাপী দেশজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকা- বেগম জিয়ার রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার অক্ষমতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তো বটেই এখন দলীয় নেত্রী হিসেবেও বেগম জিয়া সম্পূর্ণ ব্যর্থ। পরিশেষে বেগম জিয়ার অকৃতজ্ঞতার সর্বজনবিদিত উদাহরণটি উল্লেখ করেই তার সম্পর্কে আমার বক্তব্য শেষ করব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেগম জিয়াকে একজন নারীর জন্য সবচেয়ে অপমানজনক পরিণতি থেকে পিতৃতুল্য ¯েœহ দিয়ে রক্ষা করেছিলেন। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে জিয়াউর রহমান সাহেব যখন তার স্ত্রীকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন তখন বঙ্গবন্ধুর ধমক খেয়েই জিয়া তার স্ত্রীকে গ্রহণ করতে রাজি হন এবং বেগম জিয়ার দাম্পত্য জীবন রক্ষা পায়। তার বিনিময়ে বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবিটি সরিয়ে ফেলেন এবং কোন দিন বঙ্গবন্ধুর প্রতি কথায় ও কাজে কোন শ্রদ্ধা জানাননি। অকৃতজ্ঞতা কাকে বলে! এখন আমি ব্যক্তি ও সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করতে চাই। শেখ হাসিনার মধ্যে অনেক বড় মাপের গুণাবলী এবং তাঁর চরিত্রের কতকগুলো উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য আমি লক্ষ্য করেছি। তাঁর অদম্য সাহস, প্রবল আত্মবিশ্বাস, গভীর দেশপ্রেম এবং দেশের মানুষের প্রতি, বিশেষ করে গরিব-দুঃখীদের প্রতি, তাঁর নিখাদ ভালবাসা ও মমত্ববোধ তাকে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। আমার দৃষ্টিতে জননেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার যে বৈশিষ্ট্যগুলো বিশেষভাবে লক্ষণীয় তা হলো তাঁর উন্নয়ন চিন্তা, এ দেশের ভবিষ্যত নিয়ে তাঁর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন এবং দেশের মানুষের মধ্যে ইতিবাচক চিন্তা ও বিশ্বাস এবং বাঙালী জাতিকে আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানবোধে উদ্বুদ্ধ করার নিরলস প্রচেষ্টা। লক্ষণীয় যে, তিনি তাঁর প্রতিটি বক্তৃতায় এ কথাই বলেন যে, ‘বাঙালী জাতি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, আমরা অবশ্যই একদিন উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পরিণত হব।’ তাঁর এই কথাগুলো, তাঁর আত্মবিশ্বাস সবাইকে খুব উৎসাহিত করে, উজ্জীবিত করে। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, তাঁর মেধা ও বুদ্ধিমত্তা, জনজীবনের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি ও জ্ঞান। প্রশাসনের অলিগলি এবং প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তাঁর তথ্য, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ঢ়ৎরড়ৎরঃরবং বা অগ্রাধিকারগুলো সম্পর্কে তাঁর স্বচ্ছ ধারণা এবং তার প্রেক্ষিতে সময়োপযোগী কর্মসূচী প্রণয়নের জন্য নির্দেশনা প্রদানের ক্ষমতা, অসাধারণ দায়িত্ববোধ ও কর্মদক্ষতা এবং নিরলসভাবে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করার অভ্যাস, সময়ানুবর্তিতা, প্রতিটি জটিল বিষয় সহজেই বুঝে নেয়ার ক্ষমতা তাকে একজন সফল সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে পরিণত করেছে। শেখ হাসিনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর কয়েকটি উদাহরণ তাঁর সমুয়ানুবর্তিতা : তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খুব সম্ভব ১৯৯৭ সালের একদিন ওঈউউজই- পরিদর্শন করতে আসেন। আমি তখন স্বাস্থ্য সচিব। আমি, ওঈউউজই-র বিদেশী পরিচালক, দেশী-বিদেশী ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞগণ এবং উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সবাই প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছি। সকাল সাড়ে এগারোটায় তাঁর আসার কথা। ঠিক ১১.৩০টা বাজল আর প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি ওঈউউজই-র গাড়ি বারান্দায় ঢুকল। ১ মিনিটও বিলম্ব হয়নি। বিদেশী পরিচালক ও বিশেষজ্ঞগণ আশ্চর্য হয়ে গেলেন। আমাকে বললেন, ‘ণড়ঁৎ চৎরসব গরহরংঃবৎ রং ংড় ঢ়ঁহপঃঁধষ’ সেদিন আমার সত্যিই খুব গর্ববোধ হয়েছিল। শুধু ওঈউউজই নয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি সভায়, প্রতিটি অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ঘড়ির কাটায় কাটায় নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতেন। সেই সভা বা অনুষ্ঠান কেবিনেট মিটিংই হোক, মন্ত্রণালয় পরিদর্শনই হোক বা অন্য কোন অনুষ্ঠানই হোক। শেখ হাসিনার দায়িত্ববোধের আরও একটি ঘটনা বলি। ১৯৯৮ সালে দেশে কয়েকটি এলাকায় বন্যা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী সব বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখতেন। একদিন সন্ধ্যায় গণভবনে একটি সমন্বয় সভা নির্ধারিত ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকার বাইরে একটি বন্যাদুর্গত এলাকা সফর করতে সকালে বের হয়েছিলেন। সন্ধ্যায় তিনি গণভবনে ফিরলেন। আমরা ভাবলাম তিনি দোতলায় যাবেন, হয়ত ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে সভায় আসবেন। না, আমাদের সবাইকে তাজ্জব করে দিয়ে তিনি গাড়ি থেকে নেমেই সরাসরি সভাকক্ষে প্রবেশ করলেন এবং রাত ১০টা পর্যন্ত সভা পরিচালনা করলেন। চলবে...
×