ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার শুরু বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড প্রথম টেস্ট

লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে ইংল্যান্ড। তবে তিনটি ম্যাচই দুর্দান্ত হয়েছে। যে দল সিরিজ জিতে, তারাই শক্তিশালী প্রমাণিত হয়। সেই হিসেবে ওয়ানডে সিরিজ জিততে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে। এবার কী টেস্টেও ভুগবে? বাংলাদেশ কী পারবে টেস্টে ইংল্যান্ডকে ভোগাতে? এ মুহূর্তে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ইংল্যান্ড আছে চার নম্বরে। আর বাংলাদেশ আছে র‌্যাঙ্কিয়ের ৯ নম্বরে। দুই দলের মধ্যে ৫ র‌্যাঙ্কিং পার্থক্য। আর এ পার্থক্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে ইংল্যান্ড টেস্টে কতটা শক্তিশালী দল। আবার দুই দলের মধ্যে সম্প্রতি টেস্ট খেলাতেও এগিয়ে থাকছে ইংল্যান্ডই। ইংলিশরা সম্প্রতি অনেক টেস্ট খেলেছে। বিশেষ করে আগস্টেই পাকিস্তানের বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলা শেষ করেছে। এরও আগে জুনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছে। শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছে। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে। টেস্টের ধারাবাহিকতাতেই আছে ইংল্যান্ড। সেই তুলনায় বাংলাদেশ ১৪ মাস ধরে টেস্ট ম্যাচ খেলে না। সেই গতবছর জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর আর টেস্টই খেলেনি। আর এরমধ্যে ইংল্যান্ড ১৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। এরমধ্যে ৭টি টেস্ট জিতেছে। তিনটি ম্যাচ ড্র করেছে। ৬টি ম্যাচ হেরেছে। তবে এই ১৪ মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি ছাড়া একটি সিরিজেও হারেনি ইংল্যান্ড। সেই তুলনায় বাংলাদেশতো টেস্ট খেলারই সুযোগ পায়নি। ওয়ানডেতে দীর্ঘদিন পর খেলতে নেমে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে হারার সম্ভাবনাতেই পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার ১৪ মাস পর টেস্ট খেলতে নামছে। প্রতিপক্ষ দলটি আবার শক্তিশালী ইংল্যান্ড। সেই হিসেবেতো ইংল্যান্ডকে ভোগাবে কী, উল্টো বাংলাদেশেরই তছনছ হয়ে যাওয়ার কথা। দুই দলের মধ্যে আবার ছয় বছর পর টেস্ট খেলা হবে। ২০১০ সালের জুনে সর্বশেষ ম্যানচেস্টারে বাংলাদেশ- ইংল্যান্ড টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল। আর বাংলাদেশের মাটিতে দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে সর্বশেষ সাড়ে ছয় বছর পর ২০১০ সালের মার্চে খেলে। দুই দলের মধ্যকার এখন পর্যন্ত চারটি টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়। সবকটি সিরিজেই হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। ২০০৩, ২০০৫ সালে একবার করে ও ২০১০ সালে দুইবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হয়। প্রতিবারই ২-০ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। শুধু কী সিরিজেই হারে, জয়ের ব্যবধানও অনেক বড় ছিল। ২০০৩ সালে প্রথমবার দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। ঢাকায় ৭ উইকেটে হারের পর চট্টগ্রামে ৩২৯ রানের ব্যবধানে হারে। এরপর ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়ে দুই ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হার হয়। লর্ডসে প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ২৬১ রান এবং চেস্টার লি স্ট্রিটে ইনিংস ও ২৭ রানে হার হয় বাংলাদেশের। ২০১০ সালে আবার বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ হয়। এবার চট্টগ্রামে ১৮১ ও ঢাকায় ৯ উইকেটে হারে। আর সর্বশেষ ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া সিরিজে প্রথম টেস্টে ৮ উইকেট এবং দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ৮০ রানে হারে বাংলাদেশ। সব হারই বড় ব্যবধানে। এবার কী হবে? সেই প্রশ্ন এখন চতুর্দিকে। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে এখন দুর্দান্ত দল। টেস্টেও এখন অনেক ভাল দল হয়ে উঠছে। সেই প্রমাণ এর আগে মিলেছেও। গতবছর ওয়ানডেতে ‘সোনালী বছর’ অতিক্রম করে বাংলাদেশ। একইভাবে টেস্টেও দারুণ সব মুহূর্ত মিলে। বছরটিতে ৫টি টেস্ট খেলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি টেস্ট ছাড়া আর কোন টেস্টে হার হয়নি বাংলাদেশের। চারটি টেস্টই ড্র করেছে। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে ড্র করেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিতে তো অসাধারণ খেলেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস মিলে যে উদ্বোধনী জুটিতে ৩১২ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করেছেন, সেটিতো বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে উইকেট বা রানের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটিই হয়ে গেছে। তিন ’শ রান করে জুটি আবার প্রথম হয়েছে। তাতে করে দাপটেই পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচটি ড্র করেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে একটি টেস্ট বৃষ্টির জন্য ড্র হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও তাই। তবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে যে ৩২৬ রান করেছিল বাংলাদেশ, সেটি থেকে ভাল কিছু করার ইঙ্গিতই মিলেছিল। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৪৬ রান করার পরতো আর ম্যাচই হলো না। বৃষ্টিতে সিরিজই ভেসে গেল। তবে বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা ভাল খেলেছেন। তাতে করে টেস্টেও যে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ, সেই আলামত মিলেছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৪ মাস পর খেলতে নেমে কী আর সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব? ওয়ানডেতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, অনভিজ্ঞ দল নিয়েই সিরিজ জিতে গেছে ইংল্যান্ড। টেস্টেতো তারা পুরো দস্তুর শক্তিশালী দল! বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে আবার র‌্যাঙ্কিংয়ের ২ নম্বর স্থানটি পাওয়ার সুযোগও আছে ইংল্যান্ডের সামনে। এখন ইংল্যান্ডের রেটিং হচ্ছে ১০৮। একই রেটিং নিয়ে তিন নম্বরে আছে অস্ট্রেলিয়া। তার আগে দুই নম্বরে পাকিস্তান ১১১ রেটিং। এক নম্বরে আছে ভারত ১১৫ রেটিং। ভারতকে ছোঁয়ার বা এগিয়ে যাওয়ার কোন অপশন ইংল্যান্ডের সামনে নেই। তবে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে অস্ট্রেলিয়াকেতো পেছনে ফেলবেই ইংল্যান্ড, পাকিস্তানকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। এজন্য অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ কম করে হলেও ড্র করতে হবে পাকিস্তানকে। জিতলে আবার পাকিস্তানের দুই নম্বর স্থানটি বজায় থাকবে। তখন অস্ট্রেলিয়াকেই শুধু পেছনে ফেলতে পারবে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড কী সেই সুযোগ কোনভাবে হাতছাড়া করবে? প্রশ্নই ওঠে না।
×