ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিজস্ব তহবিল থেকেই ব্যয় বহন করা হবে ॥ চাঁদাবাজি করলে ব্যবস্থা

সম্মেলনে এবার আওয়ামী লীগের বাজেট ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

সম্মেলনে এবার আওয়ামী লীগের বাজেট ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় সম্মেলনের সকল ব্যয় বহন করা হবে আওয়ামী লীগের দলীয় তহবিল থেকে। এর বাইরে সম্মেলন সামনে রেখে কেউ যদি চাঁদাবাজি কিংবা কোন অনিয়ম করে, তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের বাজেটের মধ্যেই একটা সুশৃঙ্খল, দৃষ্টিনন্দন এবং স্মরণকালের সবচেয়ে চমকপ্রদ জাতীয় সম্মেলন উপহার দেয়া হবে। সোমবার রাজধানীর ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্মেলন সফল করতে গঠিত দফতর উপ-কমিটির সঙ্গে অন্যান্য উপ-কমিটির সমন্বয় সভা শেষে এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রসঙ্গত, গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে জাতীয় কমিটির সভায় এবারের সম্মেলনের জন্য দুই কোটি ৬৫ লাখ টাকার বাজেট পাস হয়েছে। ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সমন্বয় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেনÑ মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আফজাল হোসেন, ডাঃ বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সুজিত রায় নন্দী, এনামুল হক শামীম, এসএম কামাল হোসেন, হুইপ ইকবালুর রহিম, যুব মহিলা লীগের অপু উকিল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শাহে আলম মুরাদ, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন প্রমুখ। সম্মেলনের ব্যয় প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দলের জাতীয় সম্মলনে যে ব্যয় করা হচ্ছে, তা হচ্ছে দলীয় তহবিল থেকেই। আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে এ ব্যয় করা হচ্ছে এবং হবে। এর বাইরে কেউ যদি সম্মেলনকে সামনে রেখে চাঁদাবাজি করে বা এর বাইরে কিছু করে, তাহলে সেটার বিরুদ্ধে সংগঠনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় কমিটির সভায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাজেট পাস হয়েছে। সেখানে সম্ভাব্য যে বাজেট পাস হয়েছে, এ বাজেটের মধ্যেই আমাদের সব ব্যয় সীমিত থাকবে। সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত বিভিন্ন উপ-কমিটি তাদের স্ব স্ব বাজেট প্রস্তাব করতে পারে কিন্তু পাস করার এখতিয়ার তাদের নেই। এজন্য জাতীয় কমিটিতে যে বাজেট পাস হয়েছে এর মধ্যেই সবার ব্যয় সীমিত রাখতে হবে। আর যে বাজেট অনুমোদিত হয়েছে তার মধ্যেই আমাদের সকল ব্যয়সীমা নির্ধারিত হবে। এর মধ্যে থেকেই জাতীয় সম্মেলনের সকল খরচ সম্পন্ন করতে হবে। এ বাজেটের মধ্যে কি সম্মেলন সম্পন্ন সম্ভব হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি হবে। আর এটা আমরা প্রমাণ করব। এজন্যই এ সম্মেলনকে বলছি ব্যতিক্রমী। আমরা আমাদের বাজেটের মধ্যেই একটা সুশৃঙ্খল, কালারফুল, সুন্দর এবং স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ জাতীয় সম্মেলন উপহার দেব। এবারকার সম্মেলনকে অনেকে চমক বলছেন, তাহলে সম্মেলনের চমকটা কী- এমন প্রশ্নের জবাবে সভাপতিম-লীর এ সদস্য বলেন, ‘চমকটা কী ঠিক আমি বুঝতে পারছি না। এটা হলো সিদ্ধান্তের বিষয়, চমকের কোন বিষয় নয়। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের একটা ঐতিহ্য আছে। এই যে ডিজিটাল বাংলাদেশ, টেকনোলজির সঙ্গে ট্রাডিশনের সমন্বয় ঘটবে। এখানে প্রবীণের অভিজ্ঞতার সঙ্গে নবীনের এনার্জির সংমিশ্রণে নতুন মডেলে সময়ের প্রয়োজনে আওয়ামী লীগকে ‘ভিশন-২১ ও ভিশন-৪১’ আপাতত এ দুটো টার্গেট সামনে রেখে দলকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঢেলে সাজাব। প্রবীণের অভিজ্ঞতার সঙ্গে নবীনের রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে একটা শক্তিশালী টিমওয়ার্ক গড়ে উঠবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দু’দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর যানজটের ভোগান্তি হ্রাসে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্মেলনেকে ঘিরে একটা রোডম্যাপ আছে। আমাদেরও প্ল্যান আছে, যাতে জনদুর্ভোগ সহনশীল পর্যায়ে থাকে। ওই সময় এত মানুষ ঢাকায় আসবে আর আমরা একেবারেই যানজটমুক্ত পরিবেশে সম্মেলন করব- এটা বললে হয়ত শুনতেও ভাল লাগে না। তবে সম্মেলনের কারণে যানজট যতটা সম্ভব সহনশীল পর্যায়ে থাকে সে ব্যাপারে আমাদের চেষ্টা আছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার সহ-সম্পাদকের সংখ্যা এক শ’র মধ্যে সীমিত রাখা হবে। ৫০ হাজার লোকের জন্য কাচ্চি বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও ॥ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। রাজধানী ঢাকাজুড়ে আলোকসজ্জা, ব্যানার-ফেস্টুনসহ নানা সাজসজ্জায় এবার বেশ আলোচিত আওয়ামী লীগের এবারকার সম্মেলন। সম্মেলনকে স্মরণীয় করে রাখতে অতিথিদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থায় কমতি রাখছে না দলটি। সম্মেলনে বিদেশী অতিথি, রাজনৈতিক কর্মী, অন্যান্য অতিথিসহ ৫০ হাজার লোকের জন্য খাবারের মেনু হিসেবে রাখা হয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি ও মোরগ পোলাও। সোমবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির ২০তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত খাদ্য উপ-কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খাদ্য উপ-কমিটির আহ্বায়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, এ আয়োজনে আলাদা করে কোন খাদ্যের ব্যবস্থা থাকবে না এবং বিদেশীদের জন্যও আলাদা করে কোন খাবারের ব্যবস্থা করা হবে না। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের জন্য দুটি বুথ থাকবে। এছাড়া প্রত্যেক বিভাগের জন্য আলাদা করে খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। বিদেশী প্রতিনিধিসহ অন্য অতিথিদের জন্য ১৫টি বুথ থাকবে। প্রতিটি বুথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ জন সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক ১০০ জন এবং দুজন করে কেন্দ্রীয় নেতা থাকবেন। মন্ত্রী আরও জানান, সম্মেলনের উদ্বোধনী দিন ২২ অক্টোবর দুপুর ও রাত এবং পরের দিন ২৩ অক্টোবর দুপুরে অর্থাৎ মোট তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে যদি পরিকল্পনায় কোন পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটাও করা হবে। দুই দিনের সম্মেলনে খাবারের মেনুর বিষয়ে খাদ্য উপ-কমিটির সদস্য সচিব খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিন দুপুরে মোরগ পোলাও দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হবে। ওই দিন রাতে থাকবে কাচ্চি বিরিয়ানি আর পরদিন দুপুরের খাবারের তালিকায়ও থাকবে মোরগ পোলাও। আর প্রতি বেলা খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করা হবে বোতলজাত পানি, কোমল পানীয়, ফিরনি, পান এবং টিস্যু পেপার। এর বাইরে দুটি চা ও কফি কর্নার থাকবে। দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২২ ও ২৩ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
×