ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

তারেক রহমান ‘ডার্টি মানি’ অর্জন করেছেন

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থ পাচারের মামলায় নিম্ন আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাজা দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে ৮২ পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। গত ২১ জুলাই তারেক রহমানকে ৭ বছরের কারাদ- ও ২০ কোটি টাকা অর্থদ- দিয়ে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। এর আগে নিম্ন (বিচারিক) আদালতের রায়ে তাকে খালাস দেয়া হয়েছিল। একই মামলায় তারেকের বন্ধু মামুনকে নিম্ন আদালতের দেয়া ৭ বছরের কারাদ- বহাল রাখে হাইকোর্ট। তবে নিম্ন আদালতে তাকে দেয়া ৪০ কোটি টাকার অর্থদ- পরিবর্তন করে ২০ কোটি টাকা অর্থদ- দেয়া হয়। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। রায় প্রকাশের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এখন হাইকোর্টের রায় নিম্ন আদালতে যাবে। নিম্ন আদালত সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’ ঘুষ হিসেবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নির্মাণ কনস্ট্রাকশনস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টঙ্গীতে ৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ কোটি টাকা ঘুষ নেয় মামুন। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওই টাকা সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের হিসাবে পাচার করা হয়। ওই হিসাব থেকে প্রায় পৌনে ৪ কোটি টাকা খরচ করেন তারেক। ২০১৩ সালের ১৭ নবেম্বর ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মোতাহার হোসেন বিচার শেষে রায় ঘোষণা করেন। এতে তারেককে খালাস এবং মামুনকে ৭ বছরের কারাদ- দেয়া হয়। রায়ে মামুনকে ৪০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তারেকের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীলের আবেদন করে দুদক। উল্লেখ্য, ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫০ মুদ্রাপাচার মামলা দুদক পরিচালনা করে আসছে, যার মধ্যে এই প্রথম হাইকোর্টে কোন মামলার সাজার রায়। এর পূর্ণাঙ্গ রায় সোমবার প্রকাশিত হলো। পলাতক তারেক রহমান আত্মসমর্পণ করলে বা তাকে গ্রেফতার করা গেলে সেই সময় থেকে তার দ- কার্যকর হবে বলে হাইকোর্ট জানিয়েছে। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ‘রাজনৈতিক ঢাল’ ব্যবহার করে ‘সচেতনভাবে’ আর্থিক অপরাধে জড়িয়েছিলেন। তিনি তার রাজনৈতিক উচ্চ শ্রেণীর অবস্থান ব্যবহার করে ‘কনসালটেশন ফির’ নামে তার সহযোগীর (গিয়াসউদ্দিন আল মামুন) মাধ্যমে ‘ডার্টি মানি’ অর্জন করেছেন। ‘রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে’ সংঘটিত এ ধরনের দুর্নীতি সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ‘হুমকি’। তারেক রহমান ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের এ ঘটনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে অর্থ পাচারের অন্যতম উদাহরণ। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে অর্থপাচারের যে ঘটনা তার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে এ মামলা। তাই সরকারকে নতুন করে এ ধরনের অর্থপাচারের ঘটনা রোধে চিন্তা-ভাবনা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে দেশের অর্থ পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থপাচার সংক্রান্ত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। আর এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধির ফলে দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
×