ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরীগঞ্জে সাত সেতু নির্মাণে লুট

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

কিশোরীগঞ্জে সাত সেতু নির্মাণে লুট

স্টাফ বিপোর্টার, নীলফামারী ॥ বুল্লাই নদীর বসুনিয়াপাড়া খালের ওপর দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতু দাবি করে আসছে কিশোরীগঞ্জ উপজেলার রণচ-ি ইউনিয়নের বসনিয়াপাড়া ও রণচ-ি গ্রামের মানুষজন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেতু না পাওয়ায় এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ ওই উপজেলায় ২০১৫/২০১৬ অর্থবছরে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ২ কোটি ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭০ টাকা ব্যয়ে ৭টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ওই ৭ সেতু যে সব স্থানে নির্মাণ হয়েছে সে সকল স্থানে নেই রাস্তাঘাট বা মানুষজন চলাচলের কোন পথ। রবিবার সরেজমিনে দেখা যায় গ্রামীণ রাস্তায় সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কিশোরীগঞ্জ উপজেলার ৭টি সেতু নির্মাণ করা হলেও সেতুগুলো জনসাধারণের কোন উপকারে আসছে না। যে ৭টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো জনবসতিহীন ফাঁকা স্থানে দ-ায়মান অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নেই কোন চলাচলের সংযোগ সড়ক বা চলাচলের পথ। পাশাপাশি এত নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে যে এই সেতুগুলোর উপরি ভাগের সব কিছু খসে পড়তে শুরু করেছে। অথচ ঠিকাদারদের চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ক কর্মকর্তার কার্যালয় হতে। এলাকার সোলেমান আলী, মফিদুল ইসলাম, আজগর আলী মন্তব্য করে বললেন এসব সেতুর নির্মাণের দৃশ্যমান অবস্থা দেখে মনে হয় ‘সরকারী মাল যেন দরিয়ামে ঢেলে’ সংশ্লিষ্টরা লুটপাট করেছে। অথচ বসুনিয়াপাড়ার বুল্লাই নদীর খালের সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষজন ও শিক্ষার্থীরা চলাচল করছে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে। সেখানে সেতুর দাবি করতে করতে এলাকাবাসী হাঁফিয়ে উঠলেও আজও সেতু পায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের কামারপাড়া হতে ইসমাইল পাড়া যাওয়ার রাস্তায় ইসমাইলের দোলায় ৪০ ফিট সেতু ৩২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৩ টাকায় মেসার্স মিনারা এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদার নির্মাণ করেছে। সেখানে কোন চলাচলের রাস্তা নেই। অথচ সেতু তৈরি করা হয়েছে। এমন আরও ৬টি সেতুর মধ্যে মাগুরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্টারপাড়া নিজাম উদ্দিনের বাড়ির পূর্বদিকে বুল্লাই নদীর উপরে ৪০ ফিট সেতু নির্মাণ করা হয় ৩২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৩ টাকায়। ঠিকাদার দেখানো হয় মেসার্স আহসান হাবিব চৌধুরীকে। পুঁটিমারী ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ভেড়ভেড়ি গ্রামের সালামের মোড় হতে সাতপাই যাওয়ার রাস্তায় জমসের মাস্টারের বাড়ির সামনের ৪০ ফুট সেতুটিও ৩২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৩ টাকায় নির্মাণ দেখানো হয়। ঠিকাদার ছিলেন নুরজাহার এন্টারপ্রাইজের পক্ষে মিনহাজুল ইসলাম। আবার বাহাগেলী ইউনিয়নের নয়ালখাল ডাঙ্গারহাটে ধনীর উদ্দিন বাড়ির পশ্চিমে ৩৪ ফুট সেতু নির্মাণ করা হয় ২৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৬ টাকায়। ঠিকাদার ছিলেন নুরজাহার এন্টারপ্রাইজের মিনহাজুল ইসলাম। নিতাই ইউনিয়নের ইউপি পরিষদ হতে খাতা মধুপুর ইউনিয়ন যাওয়ার রাস্তায় শিষারতলী যাওয়ার দোলার পানি নিষ্কাশনের জন্য ৩৪ ফিট সেতু নির্মাণ করা হয় ২৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৬ টাকায়। ঠিকাদার ছিলেন মেসার্স রাশেদ এন্টারপ্রাইজ। মাগুরা ইউনিয়নের কামারের হাটে বুল্লাই নদীর উপর ৪০ ফুট সেতু ৩২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৩ টাকায় নির্মাণে ঠিকাদার ছিলেন মেসার্স এমকো এন্টারপ্রাইজ। নিতাই ইউনিয়নের পানিয়ালপুকুর গুয়াপাড়া ত্রিপুতি হতে মুশরত পানিয়াল পুকুর বেলতলী রাস্তায় গেন্দুর বাড়ির সামনে ডাঙ্গায় ২০ ফুট সেতু নির্মাণ করা হয় ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫৪৬ টাকায়। ঠিকাদার ছিলেন মোঃ নাছিমুল একরাম। এই ৭টি সেতু নির্মাণে সর্বমোট ব্যয় দেখানো হয় দুই কোটি ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭০ টাকা। এ ব্যাপারে কথা হয় কিশোরীগঞ্জ উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জলঢাকা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ওই সব সেতু নির্মাণের প্রকল্প ও চূড়ান্ত বিল প্রসঙ্গে আমার কিছু জানা নেই। সেখানে পূর্বে যিনি দায়িত্বে ছিলেন সাইফুল ইসলাম তিনি চাকরি হতে অবসর গ্রহণ করে চলে গেছেন। তবে মোয়াজ্জেম হোসেনের এই সব সেতুর বিষয় তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান।
×