ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষ মেরে উল্টো ধর্মঘটে ঢামেকের বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

মানুষ মেরে উল্টো ধর্মঘটে ঢামেকের বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানুষ মেরে উল্টো ধর্মঘট ডেকেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসওয়ালারা। অনিবন্ধিত বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স পরিচালনা মালিক সমিতি এ ধর্মঘট পালন করছে। রবিবার সকাল থেকে রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে এলেও কোন রোগীকে এ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতাল ছাড়তে দেয়নি তারা। শনিবার সকালে জরুরী বিভাগের মূল ফটকে এ্যাম্বুলেন্স চাপায় পাঁচজনের প্রাণ কেড়ে নেয়ার পরও এদের দাপটের কাছে অসহায় ঢাকা মেডিক্যালের রোগী ও স্বজনরা। অনেক রোগী হাসপাতাল ছাড়লেও তারা এ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েন। এ নিয়ে রোগী, আত্মীয়স্বজন ও আগত রোগীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক খাজা আবদুল গফুর জনকণ্ঠকে জানান, এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে। এদিকে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় চালকের সহকারী সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। রবিবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগের সামনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রোগী নিয়ে আসা এ্যাম্বুলেন্স চালক মানিক জানান, গাড়িতে রোগী নেয়া যাবে না। নিলে ঝামেলা হবে। অপরদিকে এদিন দুপুর তিনটার দিকে হাসপাতালের একটি কক্ষে অনিবন্ধিত বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স পরিচালনা মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান, সেক্রেটারি বিনা ও অন্যরা বৈঠক করেছেন। তবে সেখানকার আলোচনার বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স পরিচালনা মালিক সমিতি সূত্র জানায়, পুলিশী হয়রানির কারণে তারা ধর্মঘট ডেকেছে। আলোচনার মাধ্যমে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে কিনা তা পরে জানানো হবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল খালেক জনকণ্ঠকে জানান, ঢামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগে মূল ফটকের বাইরে সারিবদ্ধ এসব এ্যাম্বুলেন্সের কোন লাইসেন্স নেই। অনিবন্ধিত বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স পরিচালনা মালিক সমিতি বলতে কিছুই নেই। এরা ধর্মঘট পালন করেনি। মূলত এরাই নাটক সাজিয়েছে। পুলিশ ও হাসপাতালের আনসাররা এসব এ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। বাইরে থেকে কোন এ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে এলে তাদের হাসপাতালে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। তবে এতো রোগীর মাঝে হয়তো অনিবন্ধিত বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্সের লোকজন পুলিশের অগোচরে বাইরে থেকে দুই একটি এ্যাম্বুলেন্স এরা তাড়িয়ে দিতে পারে। তবে এ ঘটনা আমার জানা নেই। এদিকে ঢামেক হাসপাতালের প্রবেশমুখে চাপা দিয়ে পাঁচজনের প্রাণ কেড়ে নেয়া এ্যাম্বুলেন্সের হেলপার সিরাজুল ইসলাম সোহেলের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। রবিবার ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদার শুনানি শেষে এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই শাহ-আলম সোহেলকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। অন্যদিকে সোহেলের আইনজীবী রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করেন। উল্লেখ্য, শনিবার সকালে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের মূল ফটকের কাছে সিলেট মেট্রো-হ-৭১-০০৬৪০ নম্বরের মানব সেবা নামের একটি এ্যাম্বুলেন্স ‘মানব সেবা’ নামের দ্রুতগামী একটি এ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হাসপাতালের প্রবেশ মুখে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ জনের ওপর তুলে দেয়। এতে আমেনা বেগম সূর্যি (৩৫) ও তার ছয় মাসের গর্ভের সন্তান, সাত বছরের অসুস্থ শাকিব (৭), তার মা গুলেনুর বেগম (২৫) ও অজ্ঞাত (৬০) এক ভিক্ষুকের মৃত্যু ঘটে। জনতা সঙ্গে সঙ্গে এ্যাম্বুলেন্স হেলপার সোহেলকে (২৪) আটক করে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, নাসির মিস্ত্রি নামে একজন ওই এ্যাম্বুলেন্সের মালিক। তবে তিনি এ সময় গাড়িতে ছিলেন না। গাড়ি চালাচ্ছিল তার সহকারী সোহেল। ঘটনার পরপরই পুলিশ সোহেলকে আটক করে। পরে শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
×