ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট সিরিজে পেসার সঙ্কটে বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

টেস্ট সিরিজে পেসার সঙ্কটে বাংলাদেশ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সর্বশেষ সাদা পোশাকে ক্রিকেট খেলার ১৪ মাস পেরিয়ে গেছে। লম্বা এ বিরতির আগ পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে পেসারদের তুলনায় স্পিনাররাই সফল হয়েছেন সবসময়। টেস্ট বিরতির মাঝে ক্ষুদ্র ফরমেটের ক্রিকেটে স্পিনারদের একক আধিপত্য খর্ব করেছে বাংলাদেশের পেসাররা। দুই বছরে পেস আক্রমণে যতখানি এগিয়েছে দল সেটার পুরোধা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ছাড়াও ছিলেন দুই তরুণ মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ এবং সঙ্গে রুবেল হোসেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে সেই পেস আক্রমণেই বড় ঘাটতি বাংলাদেশ দলে! কারণ ইনজুরির কারণে তরুণ বাঁহাতি মুস্তাফিজ দলে নেই। মাশরাফি ২০০৯ থেকে টেস্ট খেলেন না। তাসকিন গত তিন বছর এমনকি ঘরোয়া আসরেও চারদিনের ম্যাচ খেলেননি। ইনজুরি থেকে ফিরে রুবেল ওয়ানডে সিরিজেও সঠিক ছন্দে ছিলেন না। গত কয়েক টেস্টে নিয়মিত খেলা মোহাম্মদ শহীদও ইনজুরিতে পড়েছেন, প্রথম টেস্টে খেলতে পারবেন না। তাই আসন্ন সিরিজে পেস বোলিং নিয়ে বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে আছে বাংলাদেশ দল। সোমবার টেস্ট দল ঘোষণা হতে পারে, আর সেখানে নির্বাচকদের হাতে পেস বিকল্প খুবই স্বল্প। পথ খোলা শুধু আল আমিন, শফিউল ও রুবেলকে নেয়ার। গত বছর জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। ওই সিরিজে তরুণ বাঁহাতি পেসার, ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজই মূলত পেস আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সঙ্গে বেশ ভালই তাল মিলিয়েছেন মোহাম্মদ শহীদ। তিনিও ইনজুরিতে। অন্যতম ভরসা মুস্তাফিজ ইনজুরির কারণে কাঁধে অস্ত্রোপচার করে ক্রিকেটের বাইরে। এ ‘কাটার’ বিশেষজ্ঞের কোন বিকল্পই নেই বাংলাদেশ দলে। খেলাটা যদি ক্ষুদ্র ফরমেটের হতো সেক্ষেত্রেও একটা ব্যাপার ছিল। সেক্ষেত্রে অনেকগুলো বিকল্প নির্বাচকদের হাতে। কিন্তু দুই পায়ে ৮ বার অস্ত্রোপচার করান মাশরাফিকে অনেক আগেই দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলা থেকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ফিজিও, শৈল্যবিদ ও ডাক্তাররা। এ কারণে দারুণ ফর্মে থাকলেও ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ থাকছেন না টেস্ট সিরিজে। ২০০৯ সাল থেকেই তিনি টেস্ট খেলছেন না, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও দুই বছর আগে সর্বশেষ খেলেছেন মাত্র দুটি ম্যাচ। তরুণ তাসকিনও আছেন একই সমস্যার সঙ্গে সঠিক ছন্দে ফেরার সংগ্রামে। এ্যাকশন ত্রুটির কারণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা পেরিয়ে ফেরার পর ওয়ানডে ক্রিকেটেই ঠিক আগের ছন্দে নিয়মিত বোলিং করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর টেস্ট ক্রিকেটে তাকে দলে নেয়ার কথা যদিও ভাবছেন নির্বাচকরা, কিন্তু ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ বিসিএলে চারদিনের ম্যাচ খেলেছেন তিনি। মাত্র ১০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন। সম্প্রতিই প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানিয়েছিলেন এই মুহূর্তে ৫/৬ জন পেসার আছেন টেস্ট দলে খেলার মতো যোগ্যতা ও দক্ষতাসম্পন্ন। শহীদ, শফিউল ইসলাম, আল আমিন হোসেন, রুবেল হোসেন ও তাসকিন। শফিউল দীর্ঘদিন পর ওয়ানডেতে ফিরে বেশ ভালই বোলিং করেছেন। ৮ টেস্ট খেলা এ পেসার ২০১৪ সালে সর্বশেষ খেলেছেন এ ফরমেটে। আল আমিনও টেস্ট ক্রিকেটে তেমন ভাল কিছু করে দেখাতে পারেননি। ৬ টেস্টে ৬ উইকেট নেয়া এ পেসার ওয়ানডে দলেই এখন অনিয়মিত। রুবেল দীর্ঘ ইনজুরি কাটিয়ে ফিরলেও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজে ভাল করতে না পারায় ছিটকে গেছেন। অবশ্য ইংলিশদের বিরুদ্ধে দু’দিনের দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচে পেসারদের পরখ করার জন্যই খেলান হয়েছে। এই প্রস্তুতি ম্যাচগুলো থেকে তরুণ বোলারদের দিকেও দৃষ্টি থাকবে। প্রধান নির্বাচক নান্নু এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রস্তুতি ম্যাচে দেখা হয়েছে রুবেল, কামরুল ইসলাম রাব্বী, এবাদত হোসেন ও আবু জায়েদ রাহীদের। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ জুলাই পর্যন্ত ১২ টেস্ট বাংলাদেশ খেলেছে বাংলাদেশ। এই টেস্টগুলোতে ৩২ উইকেট নিয়েছেন পেসাররা। এর মধ্যে শফিউল সেরা ২ ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে, দুই রুবেল ৫ ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে। শহীদ ও আল আমিন ৫ ম্যাচে ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন। এ কয়টি টেস্টে স্পিনাররা ১০৯ উইকেট শিকার করেছেন। টেস্টে স্পিনারদের সঙ্গে পেসারদের পারফর্মেন্সের ব্যবধানটা এত বিশাল হলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে চিত্রটা উল্টো। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ পর্যন্ত ২৯ ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচগুলোয় পেসাররা ১২৫ উইকেট নিয়ে পেছনে ফেলেছেন স্পিনারদের। স্পিনাররা নিয়েছেন ১০৫ উইকেট। অথচ একটা সময় বাংলাদেশ দল ছিল পুরোপুরি স্পিননির্ভর একটি দল। তবে টেস্ট সিরিজে সেই পেসাররা কোথায়? ইংল্যান্ড সিরিজেই মুস্তাফিজ, মাশরাফি, তাসকিনদের অভাব পূরণে কোন বিকল্প নেই! পেসার হয়তো আছে, কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রভাব বিস্তার করার মতো পেসার টেস্ট ক্রিকেটে নেই। ইংলিশদের বিরুদ্ধে আসন্ন দুই টেস্টের সিরিজে সত্যিকারের পেসার সঙ্কটে তাই বাংলাদেশ দল।
×