ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী দলের কেউ আওয়ামী লীগে যুক্ত হতে পারবে না

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

যুদ্ধাপরাধী দলের কেউ আওয়ামী লীগে যুক্ত হতে পারবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মৌলবাদকে দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু আখ্যা দিয়ে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ব্যতীত দেশে বি-মৌলবাদীকরণ অসম্ভব। এজন্য সংগঠনটি ’৭২’র সংবিধানের পূর্ণ বাস্তবায়ন ও অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতির জোর দাবি জানিয়েছে। ‘যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের কোন সদস্য হতে পারবে না’ এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সংগঠনটির নেতারা বলছেন, শুধু যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যরাই নয়, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসতে হবে যে, যুদ্ধাপরাধী দলের কেউ আওয়ামী লীগে যুক্ত হতে পারবে না। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির ডব্লুভিএ মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বি-মৌলবাদীকরণ ব্যবস্থাপত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেশকে বি-মৌলবাদীকরণ করার লক্ষ্যে সংগঠনটির পক্ষে এসব দাবি জানানো হয়। সভায় একাত্তরের ঘাতক-দালল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক কমোডর ইশফাক এলাহী (অব), মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব), সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ডাঃ নুজহাত চৌধুরী ও সাংবাদিক ফারজানা রুপা। মূল প্রবন্ধ পাঠকালে শাহরিয়ার কবির বলেন, যে দলের গঠনতন্ত্রে নারী-পুরুষের ক্ষমতা নিয়ে বৈষম্য রয়েছে, যে দল প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র সমর্থন করে না, যে দল কেবল ইসলামের নাম করে রাজনীতি করে; সেই দল নিষিদ্ধ না করে জঙ্গী দমন সম্ভব নয়। ১৯৫৪ সালে আমরা রাজনৈতিক ইসলামের উত্থান দেখেছি, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তা আমরা ১৯৭১ সালে কবর দিয়েছি। তার আগেও ধর্ম ছিল, সভ্যতা ছিলÑ এই পরিচয় মুছে ফেলতে পারব না। ধর্ম পাল্টানো যায়, নৃতাত্ত্বিক পরিচয় পাল্টানো যায় না। যে কারণে ধর্মকে নয়, আমরা বাঙালিত্বকে প্রাধান্য দেয়। এই জন্যই আমরা ’৭২’র সংবিধানে ফিরে যেতে বলছি। অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি প্রণয়নের কথা বলছি। এগুলো ছাড়া বি- মৌলবাদীকরণ সম্ভব নয়। যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের কোন সদস্য আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এর সঙ্গে আমি আরও যুক্ত করতে চাই, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসতে হবে যুদ্ধাপরাধী দলের কেউ আওয়ামী লীগে যুক্ত হতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গীবাদ দমনে যে সাফল্য দেখেছি, আমরা জঙ্গী নির্মূলেও সেই সাফল্য দেখতে চাই। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, বি-মৌলবাদীকরণের পক্ষে কিন্তু আমাদের সমর্থন তেমন নেই। সরকারের প্রধান নজর অর্থনীতির দিকে। তাদের ধারণা প্রবৃদ্ধি ৭ হলেই সবাই সুখে থাকবে। তারা বারবার জিততে জিততে জয়ের মোহে আছে। তারা বি-মৌলবাদীকরণ থেকে সরে এসেছে। তারা হিজাবীদের কিভাবে সহায়তা করছে, তার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে এই অসাম্প্রদায়িক সরকারের ভূমিকা জোরালো হওয়া উচিত ছিল, সেসব থেকে সরে আসার কারণেই সমাজের সর্বস্তরে ইসলামীকরণ হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে দক্ষিণ পন্থীদের যেন প্রাধান্য না দেয়া হয়। হেফাজতিদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। সংস্কারবাদীদের ক্ষেত্রেও। নিরাপত্তা বিশ্লেষক কমোডর ইশফাক এলাহী (অব) বলেন, জঙ্গীবাদ একটি ধর্মীয় মতাদর্শ। যেসব জঙ্গী জেলে আছে তাদের বিশেষ কারাগারে রাখা উচিত। তাদের বিভিন্নভাবে ওই মতাদর্শ থেকে সরিয়ে আনতে হবে। যুব সমাজের যারা উগ্রপন্থায় জড়িয়েছে তাদেরও ফিরিয়ে আনতে হবে ঠিক পথে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব) বলেন, ইসলামকে সহিংস ইসলামে পরিণত করার কারণ রাজনীতি, যখন এই রাজনীতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হয় তখন তা ভূ-রাজনীতি। বিশ্বে জঙ্গীবাদী কর্মকা- ছড়িয়ে পড়ার দায় পশ্চিমা বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্য এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদের হাত ধরেই সারাবিশ্বে জঙ্গীবাদী কর্মকা- ছড়িয়েছে। তারা যখন উপদেশ দিচ্ছে মনে রাখতে হবে আমার দেশের জন্য তাদের উপদেশ সঠিক কিনা। আলোচনায় অংশ নিয়ে ডাঃ নুজহাত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ৮০ ভাগ মৌলবাদীকরণ হয়ে গেছে, আমার মনে হয় না আমরা ২০ শতাংশের বেশি হব। আমার সব সময় মনে হয়, আমরা সংখ্যালঘু। মুক্তিযুদ্ধে সপক্ষের শক্তিকে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীর কন্যা নুজহাত আরও বলেন, ’১৩ পরবর্তী সময়ে আমার যে ভাইদের হত্যা করা হয়েছে, তা নতুন বুদ্ধিজীবী হত্যার অংশ।
×