ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ামত হোসেন

হুঁশিয়ার-পত্র কবুতরের পায়ে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

হুঁশিয়ার-পত্র কবুতরের পায়ে

একটা কবুতর উড়ে এলো ওপার থেকে। ওপারে পাকিস্তান, এপারে ভারত। ভারতীয় সীমান্ত চৌকির রক্ষীরা দেখল পাকিস্তানী সীমান্ত থেকে সোজা উড়ে এলো কবুতরটি তাদের এলাকায়। আটক করা হলো সেটিকে। কবুতরটির পায়ে একটি চিরকুট। ঠিক চিরকুট নয়, ছোটখাটো একটি চিঠিও বলা যায়। সীমান্তরক্ষীরা অবাক! ঠিক আগের দিন একই দিক থেকে উড়ে এসেছিল দুটো বেলুন। সে দুটোও হস্তগত হয়েছিল তাদের। তাতে যেসব কথা লেখা ছিল তা পড়ে রক্ষীরা অবাক হয়েছিল। কবুতরের পায়ে বাঁধা চিঠিতে কি একই জিনিস! কৌতূহলী সেনারা দেখল একই জিনিস পাঠানো হয়েছে, ওটিও হুঁশিয়ারি-পত্র। লেখা হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে। উর্দু ভাষায় লেখা এই চিঠি তথা হুঁশিয়ারপত্রের সারমর্ম হচ্ছে : মোদিজি ১৯৭১ সালে, পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় আমরা যে রকম ছিলাম এখনও সে রকম আছি এটা ভাববেন না। মনে রাখবেন আমাদের প্রতিটি শিশু ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তৈরি রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পাঠান কোটের বামিয়াল সেক্টরে সিম্বাল চৌকী এলাকায়। বিষয়টি অন্য দুটি দেশের, আমাদের তেমন কিছুই বলার নেই। তবে কিছু না বলেও পারা যায় না। কবুতরের পায়ে বেঁধে বা বেলুনে করে যেসব হুঁশিয়ারি বার্তা পাঠানো হয়েছে সে সব বার্তার প্রেরক কে তা জানা না গেলেও ধারণা করা যায় পাকিস্তানী কোন বিশেষ বাহিনী দ্বারা বা তাদের মদদে কোন উগ্রবাদী মহলের দ্বারা এসব প্রেরিত। তারা তাদের নিকট প্রতিবেশীকে যে হুঁশিয়ারি দিক বা তাদের দেশের প্রতিটি শিশুকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখুক সেটা তাদের ব্যাপার। তবে তারা যে বরাবরই যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত তা ওদেশটির অস্তিত্বের শুরু থেকে বোঝা গিয়েছিল। এটা বোঝা যায় যখন পাকিস্তানে জনগণের গণতন্ত্র চালু করার যে দীপ শিখাটি প্রথম প্রজ্বলিত হয়েছিল তখনই তাকে ফুঁ দিয়ে তাকে নিভিয়ে দেশটির ঘাড়ে চেপে বসেছিল পাঞ্জাবী মার্শাল রেসের নিয়ন্ত্রণাধীন সামরিক আধিপত্য। সেই-ই চলছে একে মারা, ওকে মারা। একে দমন করা, ওকে ঠা-া করা। চব্বিশটি বছর জ্বালিয়েছে বাঙালীদের। তারপর পেয়েছে চরম শিক্ষা। এখন জ্বালাচ্ছে তাদেরই স্বজাতি বেলুচদের। শুধু মার মার কাট কাট! পাকিস্তানীর সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৬৫ সালে। সে সময় স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা কোসিগিনকে ধরে তাসখন্দ চুক্তি করালেন ভারতের সঙ্গে। তারপর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছে কারগিলসহ পাক-ভারত সীমান্তে। ’৭১-এ তাদের কীর্তিকলাপের কারণে বাঙালীর হাতে যে চরম শিক্ষা পেয়েছিল সেটা ভোলার ভান করে কতকাল আর থাকবে তারা। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে তাদের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ সেটা তারা ইচ্ছে করে ভুলে যান কি করে? ওরা ভোলার ভান করলেও কখনই তা ভোলা যাবে না এটা পরিষ্কার। বেলুন পাঠিয়ে বা কবুতরের পায়ে যে হুঁশিয়ারপত্র যিনি বা যারা পাঠিয়েছেন তাদের ’৭১ সাল নিয়ে যে মিথ্যচার তা আজও বন্ধ হয়নি, তাদের গায়ের জ্বালা যে এখনও মেটেনি, এতে তারই প্রমাণ পাওয়া যায়। ’৭১ সালে যুদ্ধটি ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে নির্মূল করার যুদ্ধ। বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেরই ফসল, ওই বছরই ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ঘটনা। যা আমাদের জন্য গৌরবোজ্জ্বল, তাদের জন্য লজ্জাকর। বারবার পাকিস্তানীরা এটা ভুলে যায় এবং তাদের দেশের নাগরিকদের মিথ্যা তথ্যে ভুলিয়ে রাখেÑ এতে কিন্তু ভবি ভোলে না। ওরা সব সময়ই বাস্তবতাকে অস্বীকার করেছে। আশ্রয় নিয়েছে মিথ্যার। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মিথ্যার বেলুন উড়িয়েছে সব সময়। তবে বাঙালীদের হাতে সেসব বেলুন ফুটো হয়ে গেছে তৎক্ষণাৎ। এখন চিঠিওয়ালা বেলুন বা কবুতর যেখানে যাচ্ছে সেখানে তারা কি করবে বা না করবে সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা কেবল দূরের দর্শক। কুক্কুটের সঙ্গীত প্রতিভা! ফ্রান্সের নামকরা এক সুরকার। নাম তাঁর ইগোর। পিয়ানোতে নানা রকম সুর তোলেন, নানা সুর সৃষ্টি করেন। নতুন নতুন সুরলহরী সৃষ্টি করা তার দীর্ঘদিনের শখ। ইগোরের গৃহে রয়েছে তার পালিত একটি মুরগি। তার নাম তিনি রেখেছেন- প্যাট্রিক। উনি পিয়ানো বাজাতে বসলে মাঝে মাঝেই কোলে নিয়ে বসেন প্যাট্রিককে। তিনি বাজাচ্ছেন এ-সুর ও-সুর। মুগ্ধ হয়ে শোনে প্যাট্রিক। ইগোরের পিয়ানোতে আঙ্গুল টেপা, এখান থেকে ওখানে আঙ্গুলের যাওয়া আসা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখতে থাকে প্যাট্রিক। এভাবে চলে সুরকার ইগোরের দিন। একদিন সুরকার বুঝলেন প্যাট্রিকের প্রতিভার বিষয়টি। বুঝলেন, তার প্রিয় মুরগিটি পিয়ানোতে সুর তোলার জন্য আঁকুপাকু করছে। মুরগিটাকে ইগোর বসিয়ে দিলেন পিয়ানোর ওপর। মুরগিটা একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে অত্যন্ত দক্ষভাবে ঠোঁট দিয়ে টিপতে থাকল পিয়ানোর রিডগুলো। একবার এটা, আরেকবার ওটা, এভাবে চলল তার পিয়ানো বাদন। তৈরি হয়ে গেল মুরগি সৃষ্ট একখানা নতুন সুর। এই সুরকে কাজে লাগালেন ইগোর। শেষে এ নিয়ে তিনি তৈরি করে ফেললেন নতুন মিউজিক। তারপর তা প্রকাশ করলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। লোকজন তা পেয়ে এবং শুনে খুব অবাক। কি চমৎকার সুর-মূর্ছনা! কি চমৎকার ব্যঞ্জনা! কুক্কুটের এহেন সঙ্গীত প্রতিভার খবর পেয়ে লোকজন বিস্মিত, হতবাক!
×