ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ বর্তমানে আওয়ামী লীগ মানে, আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ মানে, মন্ত্রী এমপি। প্রধানমন্ত্রী। দল নিয়ে আলোচনা কমই হয়। তবে ঠিক এই মুহূর্তের কথা আলাদা। নতুন করে সামনে এসেছে আওয়ামী লীগ। উপলক্ষÑ কাউন্সিল। আগামী ২৩ ও ২৪ অক্টোবর ঢাকায় দুইদিনব্যাপী কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে পেছন ফিরে তাকাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। ঐতিহ্যবাহী দলের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পুনর্পাঠ চলছে। প্রাচীন এই দল যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। তখন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তীকালে, ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে প্রাধান্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে। সেটি ১৯৫৫ সালের কথা। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে সুপ্রতিষ্ঠিত এই রাজনৈতিক দল। কিংবদন্তি নেতাদের হাতে গড়া দলকে নিকট অতীতে নেতৃত্ব দেন তাঁদের সুযোগ্য উত্তরসূরি অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। মহান নেতার সময় আওয়ামী লীগের অর্জন ছিল সর্বোচ্চ। শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ একের পর এক ইতিহাসের জন্ম দেয়। পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, বাঙালীর আন্দোলন সংগ্রামের যে দীর্ঘ ইতিহাস, সেখানে প্রতি পাতায় ঐতিহ্যবাহী দলের নাম লিপিবদ্ধ করা আছে। আওয়ামী লীগ জনগণকে সংগঠিত করে, সঙ্গে নিয়ে পাওনা বুজে নেয়ার সকল লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের যত যুগান্তকারী অর্জন, আওয়ামী লীগের হাত ধরেই। কাউন্সিল উপলক্ষে এসব আলোচনা প্রাণ পেয়েছে। বড় দল। বিপুল আয়োজন। তাই কাউন্সিলের প্রস্তুতিও চলছে জোরেসোরে। এরই মাঝে শহর ঢাকায় দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে প্রস্তুতি পর্ব। আয়োজনটি বর্ণাঢ্য করতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে। মূল ভেন্যু ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটু একটু করে আকার আকৃতি স্পষ্ট হচ্ছে মঞ্চের। ১৯৭০ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। সেই নৌকার আদলে মূল মঞ্চ। সারাদেশ থেকে কাউন্সিলররা আসবেন। তাদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে প্যান্ডেল। উদ্যানের বাইরেও চলছে সাজসজ্জা। জাতীয় প্রেসক্লাবের পাশের সড়ক ও দোয়েল চত্বর এলাকাটিকে নতুন মনে হয়। এসব এলাকা শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধসহ ইতিহাসের অমূল্য স্মারক দিয়ে সাজানো হয়েছে। আছে পরিবর্তনের প্রতীক নৌকা। সাজসজ্জার দায়িত্বে থাকা একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আর দু-চারদিনের মধ্যে উৎসবের আমেজ গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়বে। তার চেয়েও বড় কথা, বিগত দিনের গৌরব আর অর্জনগুলোর কথা স্মরণ করবে আওয়ামী লীগ। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ার নতুন শপথ নেবে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জনগণের জন্য কাজ করবে আওয়ামী লীগÑ এমন প্রত্যাশা রাজধানীবাসীর। শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হলো। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এই উৎসবে গত কয়েকদিন মেতেছিল রাজধানী শহর ঢাকা। প্রতি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল হাসিরাশি আনন্দ। এবার ঢাকা মহানগরে ২৩০টি ম-পে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রতিটি ম-পেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল অলি গলি রাজপথ। আনুষ্ঠানিক শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন। দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ। না, কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নিরাপত্তা বিঘিœত হয়নি। বরং এবারও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শহর ঢাকা। নবমীর দিন গভীর রাতে লক্ষ্মীবাজার ও শাঁখারীবাজার এলাকা ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল। রাত তখন দু’টোর বেশি। অথচ দিনের মতো আলো ঝলমলে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নেচে গেয়ে আনন্দ করছে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা শিশুরা এসেছে বাবা মায়ের হাত ধরে। কারও মনে শঙ্কা নেই। সবাই যে যার মতো আনন্দের সন্ধান করছে। এবং তাদের সহযোগী হয়েছে অন্য ধর্মাবলম্বীরা। শাঁখারীবাজার তো সব ধর্মের মানুষের ছোটখাটো মিলমেলায় পরিণত হয়েছিল। ভিড়ের মধ্য থেকে কেউ একজন এই প্রতিবেদকের নাম ধরে ডাকছিলেন। ঘার ঘুরে তাকাতেই দেখা গেল জাতীয় জাদুঘরের কর্মকর্তা নীরু শামসুন্নাহার। মেয়েকে সঙ্গে করে পুজো দেখতে এসেছেন। বললেন, সেই সন্ধ্যায় বের হয়েছিলাম। এখন রাত দুটো। তবু ক্লান্ত লাগছে না। প্রতিমা দেখছি। মেলা বসেছে। মেলা থেকে এটা ওটা কিনছি। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাচ্ছে। খুব ভাল ব্যাপার না? এসব উৎসবের দিনে বাঙালীর অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্ফুরণ ঘটে বলে মনে করেন তিনি। এদিকে পুজোর মধ্যেই রাজধানীতে পালিত হয়েছে মহরমের আনুষ্ঠানিকতা। শিয়া মুসলিমরা বিশেষ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার পালন করেন। কারবালার মর্মন্তুদ ঘটনার স্মৃতি বিষাদগ্রস্ত করে রাখে তাদের। বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সেই বিষাদের প্রকাশ ঘটান তারা। পুরান ঢাকা থেকে একাধিক মিছিল বের করা হয়। হায় হোসেন হায় হোসেন মাতম ওঠে। একই সময়ে দুই ধর্মাচার। কিন্তু কোথাও কোন সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই বন্ধন আগামী দিনগুলোতেও বাজায় থাকবে।
×