ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোকসানা বেগম

সাগরিকায় উদযাপনের অপেক্ষায় টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১২ অক্টোবর ২০১৬

সাগরিকায় উদযাপনের অপেক্ষায় টাইগাররা

চট্টগ্রামে বাংলাদেশের অনেক স্মরণীয় জয় রয়েছে। পয়মন্ত ভেন্যু বলা হয় চট্টগ্রামকে। সেখানেই কী তাহলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় হবে? আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচটি। প্রথম ওয়ানডেতে ২১ রানে হারের পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩৪ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। সিরিজে ১-১ সমতা আছে। আজ জিতলেই সিরিজ জয় হয়ে যাবে। চট্টগ্রামে এর আগে ইংল্যান্ডকেই একবার হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটি ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। ইংল্যান্ড ছাড়াও ওয়ানডেতে ২০০৬ সালে স্কটল্যান্ডকে ৬ উইকেটে, ২০০৯ সালে জিম্বাবুইয়েকে একই ব্যবধানে ও ১ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০১০ সালে আবার জিম্বাবুইয়েকে ৬ উইকেটে, ইংল্যান্ডকে ২ উইকেটে, হল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারায়। একই বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও ৮ উইকেটে হারায়। এরপর টি২০ বিশ্বকাপে নেপালকে ৮ উইকেটে, ২০১৪ সালে জিম্বাবুইয়েকে ১৮৬ রানে, আবার ওয়ানডেতে জিম্বাবুইয়েকে ৮৭ ও ৬৮ রানে হারায়। সর্বশেষ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ৯ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। এ স্টেডিয়াম ছাড়াও চট্টগ্রামে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ঐতিহাসিক জয় রয়েছে বাংলাদেশের। ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়েকে প্রথমবারের মতো ২২৬ রানে টেস্টে হারায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতেও ৪০ রানে জিম্বাবুইয়েকে ধরাশায়ী করে। তাই চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জন্য ‘লাকি’ ভেন্যু হিসেবেই পরিচিত। সেই ভেন্যুতে কী এবার ইংল্যান্ডকেও কুপোকাত করবে বাংলাদেশ? ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ভাল ব্যাটিং করেও শেষ মুহূর্তে দ্রুত উইকেট পড়ায় ইংলিশদের হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে স্কোরবোর্ডে কম রান যোগ হলেও মাশরাফি ও তাসকিনের গতির সামনে কুলিয়ে উঠতে পারেনি ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা। এবার তৃতীয় ওয়ানডেতে দ্বিতীয় ওয়ানডের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে সিরিজ বাংলাদেশেরই জেতার কথা। প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের আশা জাগিয়েও হেরেছে বাংলাদেশ। ইমরুল কায়েস ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ম্যাচে জয়ের আশা জাগলেও শেষে হারতেই হয়েছে। তাতে করে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়েও পড়েছিল বাংলাদেশ। সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ মিসের মহড়াতো ছিলই। বেন স্টোকসের ১০১ রানের সঙ্গে বেন ডাকেটের ৬০ রান ও জস বাটলারের ৬৩ রানে ইংল্যান্ড ৩০৯ রান করে। এরপর ১১২ রান করা ইমরুল ও ৭৯ রান করা সাকিব মিলে ১১৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয়ের আশা দেখান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভেঙ্গে যেতেই হতাশায় ডুবে যেতে হয়। শেষ পর্যন্ত ৪৭.৫ ওভারে ২৮৮ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৬৯ ও ৭১ রানে স্টোকস ‘নতুন জীবন’ পান। মাহমুদুল্লাহ ও মোশাররফ হোসেন রুবেল ক্যাচ মিস করেন। সুযোগগুলো পেয়ে স্টোকস সেঞ্চুরিই হাঁকিয়ে দেন। রানও ৩০০ ছাড়িয়ে গেলে তখনই বাংলাদেশের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। যদি ৬৯ রানেই আউট হয়ে যেতেন স্টোকস, তাহলে স্কোর হয়তো ৩০০ রানের বেশি হত না। ইংল্যান্ড যে এত রান করল তা তো স্টোকসের ১০০ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় করা ১০১ রানের সুবাদেই সম্ভব হয়েছে। এরসঙ্গে চতুর্থ উইকেটে স্টোকস ও অভিষেক ওয়ানডেতেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করা ডাকেটের ১৫৩ রানের জুটিও এতবড় স্কোর গড়ায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান বাংলাদেশ দলটি ইংল্যান্ডের চেয়ে অভিজ্ঞ দল। ইংল্যান্ডের কোন ক্রিকেটারেরই ১০০ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। সেখানে মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিম, মাহমুদুল্লাহ ১০০ ওয়ানডের বেশি খেলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে অভিজ্ঞতার জোরে জেতা গেলেও প্রথম ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তা হয়নি। আফগানদের চেয়েও যে বেশি শক্তিশালী দল ইংল্যান্ড। তবে ক্যাচ মিস না হলে অন্যরকম ফলই হতে পারত। ৪৬ রানে তামিম (১৭), ৮২ রানে সাব্বির রহমান রুম্মন (১৮) ও ১৩২ রানে মাহমুদুল্লাহ (২৫) আউট হন। তখনও আশা থাকে। প্রস্তুতি ম্যাচে শতক পাওয়া ইমরুল যে দারুণ ব্যাটিং করছিলেন। ১৫৩ রানে গিয়ে আবারও ব্যর্থ হওয়া মুশফিক (১২) যখন আউট হয়ে যান, তখন মনে হয় আসলে ম্যাচ থেকে ছিটকেই পড়ল বাংলাদেশ। ৩১০ রান করাটা দুরূহ ব্যাপারই। সেই দুরূহ কাজটিই সহজ করে দিচ্ছিলেন ইমরুল ও সাকিব। দুইজন মিলে জয়ের আশাও দেখান। দুইজন মিলে দলকে জয়ের বন্দরেই নিয়ে যান। পঞ্চম উইকেটে দুইজন মিলে ১১৮ রানের জুটিও গড়েন। এর মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও শতক করেন। সাকিবও অর্ধশতক করে ফেলেন। কিন্তু যেই স্কোরবোর্ডে ২৭১ রান জমা হয়, সাকিব হাতে ব্যথা পান। ৫২ বলে ৩৯ রান দরকার। মুহূর্তেই ৭৯ রান করে আউটও হয়ে যান সাকিব। জেক বল সাকিবকে আউট করে দেয়ার পর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকেও আউট করে দিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন। তা না হলেও আর ৩ রান যোগ হতেই আদিল রশিদের ঘূর্ণিতে মাশরাফিও (১) সাজঘরে ফেরেন। তখন জিততে ৪২ বলে ৩৬ রানের প্রয়োজন থাকে। কিন্তু ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ায় যেটুকু আশা জন্মেছিল, তা যেন নিভে যেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২৮৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষে ১৭ রানে ৬ উইকেটের পতন ঘটে! প্রথম ওয়ানডেতে হার হয়। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সিরিজ হার থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দেন আসলে মাশরাফি। তার ৪৪ রানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর দুর্দান্ত বোলিংয়েই ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করা গেছে। ৩৪ রানের দুর্দান্ত জয়ও মিলেছে। মাঝপথে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৭৫) ও শেষে মাশরাফি বিন মর্তুজা (৪৪) ব্যাট হাতে ঝলক না দেখালে ৮ উইকেট হারিয়ে যে ৫০ ওভারে ২৩৮ রান করেছে বাংলাদেশ, তাও হত না। পরে গিয়ে দুই পেসার মাশরাফি (৪/২৯) ও তাসকিনের (৩/৪৭) দুর্দান্ত বোলিংয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিতে যায় বাংলাদেশ। ৪৪.৪ ওভারে ২০৪ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস হারার পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, ‘প্রথম ওয়ানডেতে তিনটি ক্যাচ মিস আমাদের ক্ষতি করেছে। আশা করছি, আমরা এবার (দ্বিতীয় ওয়ানডেতে) ভাল কিছু করতে পারব।’ নিজেই ভাল কিছু করে দেখালেন। ব্যাটিংয়ে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখানোর পর বল হাতেও দলকে জয় এনে দেন। তাতে করে সিরিজে ১-১ সমতাও আসে। এবার চট্টগ্রামে খেলা। যে ভেন্যুটি বাংলাদেশের জন্য পয়মন্তও। এ পয়মন্ত ভেন্যুতেই কী তাহলে সিরিজ জিতে নেবে বাংলাদেশ? জিতলে দেশের মাটিতে টানা সাতটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জয়ও হয়ে যাবে। পারবে বাংলাদেশ সিরিজ জিততে?
×