ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে ভারত প্রস্তুত ॥ সহকারী হাইকমিশনার

সোনামসজিদ বন্দরে নতুন বিড়ম্বনা ফরমালিন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৯ অক্টোবর ২০১৬

সোনামসজিদ বন্দরে নতুন বিড়ম্বনা ফরমালিন

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ ভারতীয় রফতানিকারকদের ব্যবসায়ে ধস নামায় ও সোনামজিদ আমদানিকারকদের ক্ষতিগ্রস্ত হবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য রাজশাহী ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ২৬ সেপ্টেম্বর সোমবার এই বন্দরে ছুটে আসেন। বিশেষ করে প্রতিদিন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ভারত থেকে কাঁচা পণ্যবাহী ট্রাক সকালের দিকে সোনামসজিদের পানামা ইয়ার্ডে প্রবেশ করলেও পণ্য খালাসে দেরি হবার কারণে অভ্যন্তর ভাগে ট্রাক শ্রমিকদের বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। পাশাপাশি ভারতীয় রফতানিকারকরা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে এসে বড় ধরনের লোকসান ঠেকাতে বৈঠকে বসেন ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার। উভয় দেশের এক্সপোর্ট ইম্পোর্টার এ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি সম্পাদক, বিজিবি ৯ ব্যাটালিয়নের ও স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তা, উভয় দেশের চেম্বার, কাস্টমস, প্রতিনিধি এই বৈঠকে উপস্থিত থেকে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে দেড় সপ্তাহে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার অধিক কাঁচা পণ্য পচে যাবার বিষয়টি সামনে আসে আলোচনায়। সোনামসজিদ কাস্টমস ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (সাফটা) না মেনে বন্দরে ৩৬ ঘণ্টার অধিক সময় মালামাল আটকে রাখার কারণে এই ধরনের কাঁচামাল পচে যাবার ফলে ভারতীয় রফতানিকারকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখানকার আমদানিকারকদের সঙ্গে। শুধু তাই নয় প্রতিদিন যথাসময়ে কাঁচামাল নিয়ে সোনামসজিদ বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় শত শত ভারতীয় ট্রাক মোহদিপুর বন্দরে এসে আটকা পড়ে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সোনামসজিদে প্রবেশের অনুমতি মিলে না স্থানীয় কাস্টমসের কারণে। বর্তমান বছরের ১ম দিন (১ জানুয়ারি-১৬) থেকেই সকল বন্দরে সাফটা চুক্তি কার্যকর করা হলেও সোনামসজিদ বন্দরে এ চুক্তি কার্যকর না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিধান অনুযায়ী চুক্তিভুক্ত দেশসমূহে আমদানি শুল্ক হ্রাস করার বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে আমদানিকৃত পণ্য ছাড় নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করছে। এমনকি পণ্যভর্তি ট্রাক একাধিকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ২/৩ বার মাপামাপি করছে। ফলে কাঁচা পণ্যভর্তি ট্রাক ছাড় করণে অধিক সময় নিচ্ছে। এতে করে কাঁচামাল বন্দরেই ট্রাকের মধ্যে পচে যাচ্ছে। মাল পচছে মোহদিপুর বন্দরেও। ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার বিষয়ভিত্তিক কোন মন্তব্য না করে বলেন যে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দুদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিতে তারা প্রস্তুত। বর্তমান সরকারের আমলে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়েছে। আমদানি রফতানিতে যে গতিশীলতার সৃষ্টি হয়ছে তাতে এদেশের প্রতিটি বন্দরে নির্বিঘেœ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছে। সোনামসজিদ বন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাক যাতে সহজেই ফেরত যেতে পারে তার জন্য বাইপাস সড়ক নির্মাণের পরামর্শ দেন। অনুষ্ঠানে আমদানিকারকরা অভিযোগ করেন। সোনামসজিদ বন্দরে কাস্টমসের অসহযোগিতার কারণে বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। যার রেশ ভারতীয় মোহদিপুর বন্দরেও আছড়ে পড়ছে। ভারতীয় সিএ্যান্ডএফ ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্রী ভূপতি ম-ল, সুকুমার কর্মকার ও এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট সমিতি সভাপতি রামঘোষ তাদের রফতানিকারকদের সমস্যা তুলে ধরেন। সব কিছু শুনে ভারতীয় হাই কমিশনার এক কথায় বলেন এখানকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে ভারত প্রস্তুত রয়েছে এবং দিচ্ছে। এসব যৌথ সভার পরেও সোনামসজিদ কাস্টমস্ একটুও নড়েচড়ে না বসে আগের মতোই হয়রানি করে চলেছে। যার কারণে নতুন করে নানান অজুহাত দেখিয়ে ১০ ট্রাক শুঁটকি মাছ আটকিয়ে রেখেছেন। ছাড় দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে রাজশাহী কাস্টমস কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন জনান নিয়মনীতি মেনেই কাঁচামালের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ওজন শেষে দ্রুত পণ্য ছাড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা কোন অনিয়ম বা হয়রানি করছে না। তবে ফল আমদানিতে ফরমালিন পরীক্ষা না করে মাল ছাড় দেবার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন পরীক্ষার জাল সনদ। যদিও বন্দরে ফরমালিন পরীক্ষার জন্য আজিজুল হক কালু নামের এক ব্যক্তি রয়েছেন। কিন্তু তিনি অসুখ বিসুখ অজুহাত দেখিয়ে বন্দরে অনুপস্থিত থাকেন। যদি তার স্বাক্ষরে ফরম বিতরণ করা হয়। শূন্যস্থান পূরণ করেন আমদানিকারকরা। আর এই জাল স্বাক্ষর করা ফরমের বদৌলতে কাস্টমস ফল ছাড় দিচ্ছে। এই ধরনের ভুয়া-স্বাক্ষরের মাধ্যমে আগস্টে ৪২৬ ট্রাক ও ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৪৫ ট্রাক ফল যার পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন ছাড় হয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ ফলের একটিরও ফরমালিন পরীক্ষা করা হয়নি। হলেও পূর্বের কিংবা ভুয়া স্বাক্ষরে ছাড় দেয়া হয়েছে। সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে অধিকাংশ সময়ে ফরমালিন পরীক্ষায় ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে পণ্য ছাড় করা হয়। আর কাস্টমস তাৎক্ষণিক ফরমালিন পরীক্ষা না করে ছাড় দিয়েছে। আর সবই হচ্ছে ম্যানেজ মানির বিনিময়ে। বিষয়টি সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন মিডিয়ার কাছে কোন ধরনের মন্তব্য না করে সমিতির সভাপতি হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পাশাপাশি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ফরমালিন পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা আজিজুল হক বলেন, তার স্বাক্ষর জাল করা সম্ভব নয়, করলেও আমার জানা নেই বলে মন্তব্য করেন। তবে ফরমে পূর্বে স্বাক্ষর করে রাখার বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান। ফলে সোনামসজিদ বন্দর হয়ে আসা অধিকাংশ ফলে ফরমালিন ভর্তি হয়ে আছে বলে জানা গেছে।
×