ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুর পূর্বে ব্যথামুক্তি সেবা বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কোথাও নেই

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৯ অক্টোবর ২০১৬

মৃত্যুর পূর্বে ব্যথামুক্তি সেবা বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কোথাও নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মৃত্যুর পূর্বে অর্ধেক মানুষেরই ব্যথামুক্তি ও অন্যান্য চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন পড়ে। তবে এমন রোগীদের সেবায় ক্ষুদ্র পরিসরে চালু হওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বাদে কোন প্রতিষ্ঠানই গড়ে ওঠেনি। ফলে চিকিৎসার অযোগ্য রোগীদের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণায়। ৭৫ ভাগ রোগীই তাদের জন্য নিরাপদ আদর্শ ব্যথানাশক ওষুধ মরফিন না পেয়ে অসহ্য ব্যথা নিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করেন। শুধু তাই নয়, মৃত্যুবরণ করতে হয় ব্যথা নিয়েই। এ অবস্থার উন্নতির জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর প্রণীত আইন সংশোধন ও ওষুধ কোম্পানিগুলোকে একই জাতীয় দামী ওষুধের পরিবর্তে কম দামে মরফিন প্রস্তুতে উৎসাহিত করা উচিত। প্রয়োজনে সরকারের এসেনসিয়েল ড্রাগস কোম্পানির মাধ্যমে মরফিন উৎপাদন ও বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে চিকিৎসকদের এ বিষয়ে যথাযথ জ্ঞানলাভ এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। বর্তমানে দেশে ছয় লাখ মানুষের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন, এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে হবে। শনিবার সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বিশ্ব হসপিস্ ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বিভিন্ন প্রবন্ধ ও বক্তাদের আলোচনায় এসব কথা ওঠে আসে। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ব্যথাপূর্ণ জীবন এবং ব্যথাসহ মৃত্যু : কোনটিই কাম্য নয়’। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), এশিয়া প্যাসিফিক হসপিস এ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার নেটওয়ার্ক (এপিএইচএন) ও ওয়ার্ল্ড চাইল্ডহুড ক্যান্সার যৌথভাবে দেশে প্রথমবারের মতো দিবসটি উদযাপন করে। প্রসঙ্গত, অক্টেবর মাসের দ্বিতীয় শনিবার ‘বিশ্ব প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস’ উদযাপিত হয় এবং দুই বছর পর পর দিবসটিকে ‘বিশ্ব হসপিস্ ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে এশিয়া প্যাসিফিক হসপিস এ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার নেটওয়ার্কের (এপিএইচএন) সভাপতি অধ্যাপক সিনথিয়া গো একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, যেখানে বিশ্বব্যাপী এই রোগে ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বিশ্বে প্রতি বছর আনুমানিক ৫ কোটি ৬০ লাখ মানুষ মারা যায়। যাদের ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যুর পূর্বে ব্যথামুক্তি এবং অন্যান্য চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন পড়ে। এ সময় তিনি এ রোগ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখবেন বিএমএর সভাপতি মোঃ মাহমুদ হাসান, মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সলান ও অধ্যাপক ডাঃ নিজামুদ্দিন আহমেদ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওষুধের সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত, দক্ষ জনবল সৃষ্টি ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলেই দেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের (প্রশমন সেবা) বিস্তার ঘটানো সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমানে দেশে ছয় লাখ মানুষের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন। যাদের অধিকাংশই এই সেবা থেকে বঞ্চিত। রোগটি এখনও জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অধ্যাপক ডাঃ নিজামুদ্দিন আহমেদ বলেন, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি কারণে দেশে ক্রমবর্ধমান ক্যান্সার ও অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধি প্যালিয়েটিভ কেয়ারের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলছে। প্যালিয়েটিভ কেয়ারে ব্যবহার করা হয় মরফিন জাতীয় ওষুধ। সব জায়গায় পাওয়া যায় না। এ রকম হলে প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিশ্চিত দুষ্কর। এজন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর প্রণীত আইন সংশোধন করতে হবে, ওষুধ কোম্পানিগুলোকে একই জাতীয় দামী ওষুধের পরিবর্তে কম দামে মরফিন প্রস্তুতে উৎসাহিত করা উচিত। প্রয়োজনে সরকারের এসেনসিয়েল ড্রাগস কোম্পানির মাধ্যমে মরফিন উৎপাদন ও বিতরণ নিশ্চিত করা যেতে পারে। বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সনাল বলেন, আরোগ্য অযোগ্য রোগীর কষ্ট-যন্ত্রণা লাগবে সকলের ভূমিকা আছে। চিকিৎসকদের ভূমিকা সর্বাগ্রে। আর তাই এসব রোগীর পাশে দাঁড়ানোর জন্যই বিএমএ এই বছর থেকে পৃথকভাবে বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।
×