ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম ফেজে ১৮ কোটি টাকার কাজ হচ্ছে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় চলছে উন্নয়নের জোয়ার

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৮ অক্টোবর ২০১৬

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় চলছে উন্নয়নের জোয়ার

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর অবহেলা আর অযতেœর খরা কাটিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা ফিরে আসছে তার আপন রূপে। এই জেলা শহরের রাস্তাঘাট আর ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা করে রেখে বিদায় নিয়েছিল এক বিএনপি সমর্থক চেয়ারম্যান। তার সময় পুরো শহর ও শহরতলীর প্রতিটি সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়লেও কোন উদ্যোগ ছিল না উন্নয়ন করার। এমনকি ড্রেনেজ অবস্থারও বেহাল দশা হওয়ার কারণে বহু সড়ক উপচে ময়লা মাটি ও কাদা পানিতে ভরে উঠেছিল প্রায় প্রতিটি সড়ক। এক কথায় পৌরসভার ১৫ ওয়ার্ডের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নামতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ত। কারণ রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা ও খানা-খন্দে পড়ে পা-হাত হারানোর সম্ভাবনা ছিল খুবই বেশি। ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন রাস্তায় বের হওয়া মাত্র দুর্ঘটনায় পড়া নিত্যদিনের সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। এক কথায় যানবাহন দূরে থাক হেঁটেও রাস্তায় চলার পরিবেশ ছিল না। আর বর্ষা-বাদলের দিনে অধিকাংশ রাস্তা পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে এসব সড়ক বন্ধ হয়ে থাকত দীর্ঘ সময়। সব মিলয়ে ৮.৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট পৌরসভার এ বেহাল দশার কারণে জনসাধারণ দুঃখ ও ক্ষোভে মুখ ফিরিয়ে নিলে বিএনপি প্রার্থী পুনরায় ভোটে নেমে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। পৌরসভা প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসলে সদর আসনের এমপি জননেতা আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস নতুন চেয়ারম্যানকে নিয়ে ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম শ্রেণীর পৌরসভাটির উন্নয়নে বড় ধরনের উদ্যোগ নিলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাতে সাড়া দেয়। এগিয়ে আসে এডিবি ও এফআইডিসহ নগর পরিকল্পনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন বিভাগ। তারা কিছু শর্ত দিয়ে দ্রুত তা পূরণে পৌরসভার উন্নয়নে এগিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিলে পৌর কর্তৃপক্ষ তা পূরণে সক্ষম হয়। প্রথম ফেজেই বরাদ্দ আসে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। পৌর কর্তৃপক্ষ টাকা পাওয়া মাত্র নেমে পড়ে উন্নয়ন কর্মকা-ে। তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ সেক্টর প্রকল্পে রাস্তা ড্রেন নির্মাণে প্যাকেজ ঘোষণা করে। দ্রুত দরপত্রের কাজ সেরে কাজ শুরু করে রোজার পরপরই। বিশেষ করে শহরের মধ্যমণি হিসেবে পরিচিত ব্যস্ততম খুবই জনবহুল এলাকা পুরাতন বাজার থেকে পৌরসভা ভবন পর্যন্ত সড়কটি। পুরাতন বাজার রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শান্তির মোড় টু পুরাতন বাজার প্রশস্তকরণসহ ১২০৫ মিটার, মহিলা কলেজ রাস্তা ২০৭ মিটার, কাঁঠালবাগিচা সংযোগ সড়ক ২৩০ মিটার, সর্বমোট ১৬৪২ মিটার সড়কের কাজ শুরু করে। তার মধ্যে পুরাতন বাজার প্রশস্তকরণ সড়কটির (১২০৫ মিটার) কাজ অর্থাৎ সিমেন্ট রড দিয়ে ঢালাই কাজ সম্পন্ন হলে চলাচলে উন্মুক্ত করা হয়েছে। ফলে সড়কটিতে এখন কোন ধরনের বাধা-বিপত্তি নেই চলাচলে। এমনকি অধিক প্রশস্তকরণের কারণে নেই যানজটের ঝামেলা। পুরো জেলার কাঁচাবাজার বা শাকসবজির পাইকারি বাজার বসে এ রাস্তার ওপর থানার সামনেসহ হাসপাতাল পর্যন্ত। সকালের দিকে এ এলাকার সড়কটিতে অস্বাভাবিক ভিড় থাকে। ভরে যায় সাধারণ যানবাহনে। বেলা ১২টার মধ্যে এই কাঁচাবাজারের সমাপ্তি ঘটে। কয়েক বছর ধরে এ সড়ক ব্যবহারে জেলার মানুষ দারুণভাবে ভোগান্তির শিকার হয়ে নানান ধরনের দুর্ভোগ পোহাত। সেই দুর্ভোগের অবসান ঘটেছে। নতুন করে পুরাতন বাজারমুখী প্রশস্ত কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণের ফলে। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কংক্রিটের সড়ক নির্মাণে উৎসাহিত করার কারণে এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাস্তাঘাটের পুরান পিচঢালা পথ ভেঙ্গে বা গুঁড়িয়ে নতুন অবকাঠামোতে এবার নির্মাণ করা হচ্ছে কংক্রিটের সড়ক। পুরাতন বাজারসহ এখানকার তিনটি রাস্তা নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৯ টাকা। এছাড়াও ইতোমধ্যেই ঝিলিম ও পাঠানপাড়া রোড (বাক্সপট্টি) ১৪৮৭ মিটার ঢালাই কাজে ব্যয় হয়েছে ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ৫৩৬ টাকা। এ ছাড়াও শহরের প্রধান সড়ক নবাবগঞ্জ-রাজশাহী রাস্তা হতে নবাবগঞ্জ কলেজ পর্যন্ত ৪৭২ মিটার, লাখেরাজপাড়া সংযোগ সড়ক ২২০ মিটার, আলিনগর ডালিমবাড়িয়া হাজীর মোড় হতে মিল্কী বাগানপাড়া ও আলীনগর ডালিম বাড়িয়ার বাগানপাড়া ১১৫৫ মিটার, দ্বরিয়াপুর মোড় হতে চৌহদ্দিটোলা কালভার্ট পর্যন্ত, চোহদ্দীটোলা হাই স্কুল লিংক রোড ১১২৬ মিটার, হরিপুর বোর্ডঘর রাস্তা ও গাঙ্গিনা সড়ক ৬৭৩ মিটার, নামোরাজরামপুর-নিমগাছি রাস্তা (মালোপাড়া হয়ে) ১৫১৫ মিটার, ব্যাংডুবিপাড়া থেকে রাজারামপুর হাসিনা স্কুল মোড় ৫৮৩ মিটার, নামোশংকরবাটী ঘোষপাড়া হয়ে শেখ হাসিনা ব্রিজ রাস্তা ৪০০ মিটার, নামোশংকরবাটী-চানহাজিপাড়া রাস্তা ও বিকাশনি ক্লাব থেকে দক্ষিণ মাওড়ি, মোল্লাপাড়া-মাওড়ি সড়ক ৭৪২ মিটার, মাইটালাপাড়া, ধাপাপাড়া হতে আব্দুল খালেক বাড়ি পর্যন্ত ৩৭৫ মিটার, নামোশংকরবাটি-ঘাইটালপাড়া ও নামোশংকরবাটী-সুন্দরপুর সংযোগ সড়ক ৫২২ মিটার, মোহনপুর উন্নয়ন আদর্শ মোড় হতে রেজাউল বাড়ি ৫২৮ মিটার, চরমোহনপুর হাই স্কুল হয়ে চরমোহনপুর ব্রিজ ৫০০ মিটার (লট দ্বিতীয়) রাস্তা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়ে তার ওপর খুয়া ডোলার কাজ শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা কংক্রিটের ঢালাই কোজ করার। এসব সড়কের উন্নয়ন কাজে ব্যয় হবে ৫ কোটি ৯৫ লাখ ২৭ হাজার ৯২৮ টাকা। এ ছাড়াও একই প্রকল্পের আওতায় পাওয়ার হাউস মোড় থেকে বাতেন খাঁর মোড় ১৮৫৬ মিটার নয়াগোলা-মহাডাঙ্গা সড়ক এক হাজার মিটার, মহাডাঙ্গার ইব্রাহিমের বাড়ি থেকে আলহাজ বিয়াজউদ্দিন মাদ্রাসা ১২৯০ মিটার, ওয়ালটোন মোড় হতে ফুড অফিস মোড় (পাঠানপাড়া লিংক) ৬৩৭ মিটার, বেলেপুকুর-আনসার ক্যাম্প, আলীনগর মুন্সিপাড়া পর্যন্ত সিসি উন্নয়ন ৮২৫ ও ১৩০ মিটার, দ্বারিয়াপুর ঈদগাহ পর্যন্ত ৫৫১ মিটার, উপরাজারামপুর কুমারপাড়া, ম-লপাড়া ও সিদ্দিকপাড়া ১৪৫২ মিটার, জোড়গাছি-মাঝপাড়া, জয়নাল-আবেদিন বাড়ি হতে (পুরাতন) সোনার মোড় পর্যন্ত ৫১৫ মিটার, নামো রাজারামপুর নামোপাড়া ঈদগাহ পর্যন্ত ৫১৬ মিটার, রাজারামপুর কুড়াপাড়া, হাসিনা উচ্চ বিদ্যালয়-লাভলুর বাড়ি পর্যন্ত ৪০৫ মিটার, ভবানীপুর মসজিদ-শেখ হাসিনা ব্রিজ রাস্তা ও ভবানীপুর ঈদগাহ সংযোগ ও জান্নাতপাড়া সংযোগ ১০৫৪ মিটার, নয়ানশুকা-আঙ্গারিয়াপাড়া ৫৫৫ মিটার, নামোশংকরবাটী চৌমহনী হতে আশা রাইস মিল ৬১৫ মিটার, নতুনহাট প্রধান রাস্তা (সিরাজ ম-লপাড়া) নামোশংকরবাটী মীরপাড়া ৩৪০ মিটার, মহানন্দা ব্রিজ থেকে রেহাইচর মোড় ৮৩৫ মিটার, শিবতলা-আঙ্গারিয়াপাড়া ৬০০ মিটার, ভেলুর মোড় থেকে সাত্তারের বাড়ি ৫৫৯ মিটার, বাতেন খাঁর মোড় টু পিটিআই মোড়, বালুবাগান সংযোগ সড়ক, আরামবাগ সংযোগ সড়ক ৮১৬ মিটারÑ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬৩০৩২৭৪.০০ টাকা। সব মিলিয়ে ৩২টি সড়কে রাত-দিন কাজ হচ্ছে। কংক্রিট ঢালাইয়ের পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু সড়কে ইতোমধ্যেই ঢালাই কাজ শেষ করেছে। এর পাশাপাশি রাস্তা সংরক্ষণে নতুন ড্রেন নির্মাণ ও পুরাতন ড্রেন সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে পাঠানপাড়া-ওয়ালটন মোড় থেকে ফুড অফিস পর্যন্ত ৪০০ মিটার, রাজারামপুর-গুড়াপাড়া ৩৭৫ মিটার, নামোশংকরবাটি-ভবানীপুর রোড সাইড ড্রেন ১৫০ মিটার, চরমোহনপুর দক্ষিণ মাথার ড্রেন ৫৭০ মিটার, রেহাইচরে ৪৪৫ মিটার, নামোরাজারামপুর নামোপাড়া আরসিসি পাইপ ড্রেন ১৪৯ মিটার, রাজারামপুর প্রাইমারী স্কুল রাস্তার পার্শ্বে ১৫০ মিটার, সিদ্দিকপাড়া রোড হতে গোদাগাড়ী রোড পর্যন্ত আরসিসি পাইপ ড্রেন নির্মাণ কাজে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ২৮ হাজার ১৪০ টাকা। একইভাবে আরও তিনটি ড্রেন নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৭ লাখ ২৫ হাজার ৩৭৭ টাকা। এগুলো হচ্ছে শিয়ালাকলোনী রাস্তার ধারে আরসিসি পাইপ ড্রেন ২১০ মিটার, হরিপুর বোর্ডঘর রাস্তার পাশে আরসিসি ড্রেন নির্মাণ ৫৭ মিটার ও বটতলাহ হাট তালতলা রাস্তার ধারে আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হবে ৩৩০ মিটার। পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী সাদেকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, একই সাথে এসব প্রকল্পের কাজে হাত দেয়ার কারণে পৌরসভা নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করছে। এসব চলমান প্রকল্পের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হলে পুরো পৌরসভার চেহারা পাল্টে যাবে। এসব প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়া মাত্র ভবিষ্যতের জন্য আরও নতুন কিছু প্রকল্প ধরা হবে। যার অর্থ যোগান দেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বিদেশী সংস্থা। এক দশকের অধিক সময় ধরে পুরো পৌরসভায় উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন না হওয়ার কারণে পুরো পৌরসভা একটি অস্থিতিশীল বেহাল অবস্থার মধ্যে পড়েছিল। বেড়েছিল জনগণের দুর্ভোগ। দ্রুত এসব দুর্ভোগ থেকে বের হয়ে আসার জন্য সদর এমপি সহযোগিতা দিচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়রকে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ আসা শুরু হয়েছে। শেষপর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ একটি মডেল টাউনে রূপান্তরিত হবে, যা পুরো দেশের বিভিন্ন পৌরসভার কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তবে পৌর এলাকাজুড়ে উন্নয়নের জোয়ারের কারণে জনগণের চলাফেরায় কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। এজন্য ভারপ্রাপ্ত মেয়র সাইদুর রহমান পৌরবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা চেয়েছেন। এ ধরনের উন্নয়ন যে কোন সময়ের উন্নয়ন রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
×