ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতবিক্ষত খাদিজাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন ইমরান

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৭ অক্টোবর ২০১৬

ক্ষতবিক্ষত খাদিজাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন ইমরান

বাংলানিউজ ॥ ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম যখন সিলেটের এমসি কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার নার্গিসের ওপর চাপাতি নিয়ে হামলে পড়েছিল তখন তাকে বাঁচাতে একজন ছাড়া কেউ এগিয়ে আসেনি। বহুলোকের উপস্থিতিতে এই নৃশংস কাজটি করছিল বদরুল। কেউ কেউ সে দৃশ্য ভিডিও করতে ব্যস্ত ছিল। যে সাহসী তরুণ নার্গিসকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিল তার নাম ইমরান কবির। লিকলিকে গড়নের তরুণ ইমরান। সিলেটের টিলাগড়ের বাসিন্দা। নার্গিসকে তিনি তুলে নেন নিজের কোলে। রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায় তার শরীর। ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ কথাটিকে ভ্রƒকুটি করে সবাই যখন আত্মরক্ষার চিন্তায় মগ্ন তখন ঝুঁকি নিয়ে নার্গিসকে বাঁচাতে যান ইমরান। শুধু তাই নয়, ওষুধ থেকে শুরু করে নিজের রক্ত দিয়েও তাকে সহায়তা করেন। বুধবার রাতে ইমরানের সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীরা যোগাযোগ করেন। সেদিনের ঘটনা তিনি তাদের কাছে তুলে ধরেন। সিলেটের টিলাগড়ের বাসিন্দা হলেও ইমরান কবির থাকেন স্থানীয় কোম্পানিগঞ্জে একটি মেসে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন। সোমবার বিকেল ৫টার দিকে এমসি কলেজের রসায়ন বিভাগে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ হৈচৈ শুনে এগিয়ে যান। দেখেন সবাই দৌড়ে পালাচ্ছে। ঘাতক বখাটে বদরুলও ততক্ষণে পালিয়ে গেছে। দেখতে পেলেন রক্তাক্ত অবস্থায় একটি মেয়ে পড়ে আছে। তার কপালে, মাথায়, শরীরে অসংখ্য কোপের আঘাত। ইমরান বলছেন, ‘প্রথমে মাথায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে তাকে মাটি থেকে ওঠানোর চেষ্টা করি। লোকজনকে ডেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা এনে দিতে বলি। মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কেউ সাড়া দিচ্ছিল না। আমার আকুতিতে দুজন এগিয়ে আসেন। এরপর আমরা নার্গিস আপুকে ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাই। ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটায় সময় বিকেল সাড়ে ৫টা।’ ইমরান কবির বলতে থাকেন, ‘হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসকরা ওষুধপত্র লিখে দিলেন। তখন দ্রুত ওষুধপত্র কিনে নিয়ে আসি। জরুরী রক্ত দরকার ছিল। আমার রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়ায় আমি এক ব্যাগ রক্ত দেই। ঘণ্টা পাঁচেক হাসপাতালে থেকে মেসে ফিরে আসি।’ ইমরানের এ বিষয়টি প্রথম ফেসবুকে তুলে ধরেন তার বন্ধু রিফাত রহমান। পরদিন ইমরান নিজেই আবার একটি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি চাইলে সবই পার। তোমার কাছে একটাই চাওয়া, আপুটাকে তুমি বাঁচিয়ে দাও।’ এরপর গত তিনদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলছেন ইমরান। ইমরান বলেন, ‘আমি কোন রাজনীতি করি না। মানবিক এ শিক্ষা পরিবার থেকেই পেয়েছি। আপুর জীবন রক্ষা হলেই আমি শান্তি পাব। আমার ওজন মাত্র ৪৪ কেজি। কিন্তু আমি এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছি। বাবা-মা এজন্য খুব খুশি হয়েছেন।’
×