ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

শিশুদের জন্য শাকিরা...

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৬ অক্টোবর ২০১৬

শিশুদের জন্য শাকিরা...

ল্যাটিন মিউজিকের সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করেছেন পপতারকা শাকিরা। জাদুকরী কণ্ঠ, নৃত্যকলা এবং সৌন্দর্যগুণে তিনি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তার ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গানটি এখনও সারা বিশ্বের তরুণদের মনে দোলা দিয়ে চলছে। ৩২ বছর বয়সী এই পপশিল্পী সম্প্রতি মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন। শাকিরা একাধারে গায়িকা, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক, সঙ্গীত প্রযোজক, নৃত্যশিল্পী এবং একজন মানবদরদী মানুষ। গান গাওয়ার পাশাপাশি তার রয়েছে গীটার, হারমোনিয়াম ও ড্রাম বাজানোর দক্ষতা। নব্বই দশকের শুরুর দিকে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। মাতৃভাষা স্প্যানিশ হলেও তিনি ইংরেজী, পর্তুগীজ ও ইতালিয়ান ভাষায় সমান পারদর্শী। ক্ল্যাসিকাল আরবী গানেও তার যথেষ্ট দক্ষতা রয়েছে। ৩২ বছর বয়সী এই গায়িকা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী তারকা হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। তবে তিনি তার অর্থ ভোগ-বিলাসে ব্যয় না করে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করছেন। গোলাপ ফুলের প্রেমে পড়ে মাত্র চার বছর বয়সে শাকিরা প্রথম কবিতা লেখেন। কবিতার নাম ‘লা রোজা ডে ক্রিস্টাল’ বা ‘দি ক্রিস্টাল রোজ।’ এক ক্রিসমাসে তার বাবা তাকে একটি টাইপরাইটার কিনে দেন। সাত বছর বয়স থেকে এই টাইপরাইটারের মাধ্যমেই তিনি কবিতাচর্চা চালিয়ে যান। পরবর্তী সময় তিনি এসব কবিতাই রূপান্তরিত করেছেন জগদ্বিখ্যাত সব গানে। বেলী ড্যান্সের মাধ্যমে নৃত্যশিল্পে শুরু হয় তার যাত্রা । তিনি মাত্র চার বছর বয়সে নৃত্যপ্রতিভা দিয়ে সবার মন জয় করে নেন। স্কুলজীবনে ‘বেলী ড্যান্সার গার্ল’ হিসেবে সহপাঠীদের কাছে বেশ পরিচিতি অর্জন করেছিলেন। পরবর্তীতে এই বেলী ড্যান্সই তাকে সারা বিশ্বে অদ্বিতীয় করে তোলে। শাকিরার ভাষ্যে, ‘শৈশব থেকেই আমি নৃত্য পরিবেশন করতে ভালবাসি। আমি জানতাম, আমার নিয়তি ‘পারফর্মিং আর্টস’র সঙ্গেই বাঁধা পড়েছে। আমার বিশ্বাস ছিল, এই গান এবং নাচই আমাকে তারকাখ্যাতি এনে দেবে।’ শৈশব থেকেই স্কুলে গানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন শাকিরা। কিন্তু সেই সময় তার কণ্ঠস্বর তেমন শ্রুতিমধুর ছিল না। এরপর বাবার সহযোগিতায় মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি সঙ্গীত জীবনে পা রাখেন। প্রথমে তিনি নিজের লেখা একটি গানে কণ্ঠ দেন। প্রথমদিকে তিনি গানের রেকর্ডিংয়ের জন্য পরিবারের সীমিত অর্থের ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন। কলম্বিয়ার এই গায়িকা অচিরেই সেই সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব আসরেও জায়গা করে নেন। ২০০১ সালে ‘হোয়েনএভার, হোয়ারএভার’ এই গানটি তাঁকে এনে দেয় ব্যাপক আন্তর্জাতিক খ্যাতি। তাঁর এ্যালবাম ‘লন্ড্রি সার্ভিস’ বিশ্বব্যাপী প্রায় এক কোটি তিরিশ লাখ কপি বিক্রি হয়, আন্তর্জাতিক পপ-রক সঙ্গীতাঙ্গনে শাকিরা হয়ে ওঠেন এক মধ্যমণি? দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ সালের বিশ্বকাপের নিজস্ব সঙ্গীতের জন্য ফিফা বেছে নিয়েছিল তাঁর ‘ওয়াকা ওয়াকা, দিস টাইম ফর আফ্রিকা’ গানটি। আজও বিশ্বের বহু দেশে হিট গানের তালিকায় স্থান পেয়ে আছে এই গান? সম্প্রতি স্প্যানিশ কণ্ঠশিল্পী এ্যালেসান্দ্রো স্যানজকে নিয়ে একটি অসাধারণ কাজে যুক্ত হয়েছেন তিনি। কী সেই কাজ! নতুন কোন গান? না, দুজনে যৌথভাবে একটি পুতুলের নকশা করেছেন, ন্যাড়া পুতুল। শিশুরা যেসব পুতুল নিয়ে খেলবে সে ধরনের। সারা দুনিয়া যখন কোলাবরেট মিউজিক করছে, শাকিরা ভিন ভাষার শিল্পীকে নিয়ে শিশুদের খেলনা পুতুলের নকশা করছেন! একটি এয়ারলাইনস ও আর্জেন্টিনার একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে পুতুলগুলো। দেশটির রাজধানী বুয়েনেস রেসের একটি ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের পুতুলগুলো দেয়া হয়েছে। এগুলোর নকশা করেছেন শাকিরা ও স্যানজ। স্পেনের বহু হাসপাতালে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছে এমন শিশুদেরও দেয়া হবে পুতুলগুলো। শুধুই মামুলি খেলনা নয়, এ পুতুলগুলো লাগানো হবে প্লে-থেরাপির কাজে, যা ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের যন্ত্রণা খানিকটা কমাবে। ইতোমধ্যে ৮০টি শিশুকে দেয়া হয়েছে ওই ন্যাড়া পুতুল। এক শিশু ওই পুতুল পেয়ে খুশি হয়ে তার মাকে বলেছে, ‘মা, দেখ, এটা দেখতে অবিকল আমারই মতো!’ কিছুদিন আগে ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছিল একজন মা ও তাঁর ক্যানসার-আক্রান্ত শিশুর একটি ছবি। তাতে দেখা গেছে ক্যানসারের চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শরীরের সব পশম পড়ে গেছে শিশুটির। নিজেকে দেখতে যেন সন্তানের মতো লাগে, সে জন্য সেই মা-ও তাঁর মাথার চুলগুলো ফেলে দিয়ে ন্যাড়া হয়ে গিয়েছিলেন।
×