ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সবার আগে জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ অক্টোবর ২০১৬

সবার আগে জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার আগে দেশের জনগণের কল্যাণে চিন্তা করা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজিএস) অর্জনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সবার আগে জনগণের কল্যাণের কথাই সবাইকে চিন্তা করতে বলব, আমরা তাদের কতটুকু দিতে পারছি, দেশের কতটুকু উন্নয়ন করতে পারছি এবং দেশকে কতটুকু মর্যাদার আসনে নিয়ে যেতে পারছি।’ খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে তাঁর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের (এনএসডিসি) চতুর্থ বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তৃতায় এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী এবং এনএসডিসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে (এসডিজি) সংশ্লিষ্টদের একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে টেকসই এবং প্রকৃত উন্নয়ন কখনই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগের পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা সব সময়ই জনগণের জন্য আত্মনিবেদনে প্রস্তুত রয়েছি... ক্ষমতা কোন ভোগের বা নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের বিষয় নয়। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোই আমাদের লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাওয়াতেই আমরা সফলতা পাচ্ছি।’ জনগণকে আর একটু ভাল রাখাই তাঁর সরকারের সার্বক্ষণিক চিন্তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি জনগণের কথা না ভেবে শুধু নিজেদের চিন্তাই করতাম তাহলে হয়ত তাদের জন্য কিছুই করা সম্ভব হতো না... আমাদের চিন্তাতে সবসময় কেউ কোথাও অভুক্ত নেই তো এবং কর্মসংস্থান, সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বিশ্বকে প্রতিযোগিতামূলক আখ্যায়িত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়গুলোকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে কাজের গুণগতমান অক্ষুণœ রাখার মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে সচেষ্ট হবার আহ্বান জানান। তিনি বলেন. ‘আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমেই আমাদের আন্তর্জাতিক বিশ্বে এগিয়ে যেতে হবে... প্রতিটি মন্ত্রণালয় এবং দফতরকে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে।’ দেশের দ্রুত উন্নয়ন তথা মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশের সকল জনগণকে শিক্ষিত করে তুলতে চায়, যাতে করে যেকোন উন্নয়ন কর্মকা-ই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভবপর হয়। এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তাঁর সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে ২০০০ সালে এমডিজি এবং ২০১৫ সালে এসডিজি উভয় লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়নের সময়ই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর সেখানে উপস্থিত থাকার সুযোগ হওয়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এগুলোতে বিভিন্ন মতামত দেয়ারও সুযোগ হয়েছিল। এ কারণেই দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের করণীয়, কৌশল ও পরিকল্পনা কি হবে সে বিষয়গুলোও চিন্তা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প প্রণয়নে দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তাঁর সরকার সারাদেশে যে বিশেষ এক শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেসব জায়গায় বিদেশী বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগও বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের বিভিন্ন বাস্তবধর্মী পদক্ষেপের ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে উল্লেখ করে একে দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্জন বলেও উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পরিকল্পনার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন এবং তাঁর সরকারও সেই পরিকল্পনানুযায়ী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের কর্মকা-ে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে তাদের নিজেদের মাঝে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে নিজেদের মেধাকে ব্যবহার করে তাঁরা এখন নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে সচেষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দক্ষ জনশক্তি রফতানির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা জনশক্তিও রফতানি করি। সেখানেও আমরা মনে করি, আগে যেমন ধরে বেঁধে পাঠানো হতো। সেটা না, আমরা দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে চাই’ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম, মুখ্য সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং সংশ্লিষ্ট সচিববৃন্দ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং এনএসডিসি মহাসচিব মিখাইল সিপার বৈঠকে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন।
×