ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে টাকা দিচ্ছে ধনাঢ্য রোহিঙ্গারা

জঙ্গীদের ছাড়িয়ে নিতে দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৬ অক্টোবর ২০১৬

জঙ্গীদের ছাড়িয়ে নিতে দৌড়ঝাঁপ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বিদেশী নাগরিকসহ গোপন বৈঠককালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে আটক আরএসও’র সাবেক সামরিক কমান্ডার হাফেজ ছলাহুল ইসলামসহ তিনজন জেলহাজতে থাকলেও বিজিবির দায়েরকৃত মামলার তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে পলাতক আসামিরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। রোহিঙ্গা জঙ্গীর নাম চার্জশীটে যেন না আসে, এ লক্ষ্যে এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরাও সৌদি আরবে অবস্থানকারী ধনাঢ্য রোহিঙ্গাদের পাঠানো অঢেল টাকায় তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের (আরএসও) প্রথম সারির নেতা মাস্টার আয়ুবসহ ৮ পলাতক ও তিনজনকে গোপন বৈঠকস্থল থেকে ধরে ১১আসামির বিরুদ্ধে বিজিবি হাবিলদার বাবুল মিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন টেকনাফ থানায়। জানা যায়, গত ৩০ জুলাই বিকেলে টেকনাফ শামলাপুর গ্রামে মৌলভী ছৈয়দ করিমের বাড়িতে পার্শ্ববতী দেশের (মিয়ানমার) কিছু নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের নেতাকর্মীর সঙ্গে টেকনাফ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক ও তার সহোদর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজসহ কয়েক ব্যক্তি গোপন বৈঠক করছিল। তারা বাংলাদেশের অখ-তা, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশে হত্যা, গুরুতর জখম ও অপহরণসহ রাষ্ট্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধন তথা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য গোপনে ষড়যন্ত্রমূলক ওই বৈঠকে মিলিত হয়। খবর পেয়ে বিজিবি ও পুলিশ যৌথ অভিযানে নামে। গোপন বৈঠক থেকে আরএসও’র সাবেক সামরিক কমান্ডারখ্যাত হাফেজ ছলাহুল ইসলাম, মৌলভী ছৈযদ করিম ও ইব্রাহিমকে আটক করে যৌথ বাহিনী। এদিকে বিজিবির দায়েরকৃত মামলায় ৮ পলাতক আসামির মধ্যে আরএসও’র চিহ্নিত জঙ্গী নেতাদের পিতার নাম ও ঠিকানা উল্লেখ না থাকায় রোহিঙ্গা জঙ্গীরা মামলা থেকে নিজেদের দায়মুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মোটা অঙ্কের টাকার মিশন নিয়ে দু’হাতে খরচ করছে। টেকনাফ থানার ওসি আবদুল মজিদ জানান, মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলছে। অপরাধী যেই হোক, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে কেউ রেহাই পাবে না। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) বাংলাদেশের সমন্বয়কারী কুখ্যাত রোহিঙ্গা জঙ্গী কথিত মাস্টার আয়ুব ১৯৯১সাল থেকে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। সিরিজ বোমা থেকে শুরু করে বিএনপি খালেদা জিয়ার সরকার বিরোধী ৯৩দিনের নিষ্ফল আন্দোলনে পেট্রোলবোমা ও নাশকতামূলক কর্মকা-ে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে মাস্টার আয়ুব। তার পরিচালনাধীন লামা-আলী কদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন অরণ্যে (মিয়ানমার অভ্যন্তরে) একাধিক অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে বলে জানা গেছে। ঘাঁটি দেখভাল করে থাকে তার ভাইজি জামাতা আবু বক্কর। ৪৫ বছর বয়সের ভয়ঙ্কর এ রোহিঙ্গা জঙ্গীর শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রামের হালিশহরে হলেও অবস্থান করে থাকে ঢাকার গুলশান এলাকায়। দুর্ধর্ষ প্রকৃতির রোহিঙ্গা জঙ্গী আয়ুবের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও সৌদি আরবে বসবাসকারী আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠীর। আড়ালে-অবডালে জামায়াত নেতাদের সহযোগিতায় জঙ্গীপনার কাজ চালিয়ে গেলেও কতিপয় অসৎ পুলিশের সঙ্গে সখ্য থাকায় এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা জঙ্গী আয়ুব মাস্টারের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। সূত্র মতে, বর্তমানে তার পক্ষে বিশ্বস্ত প্রতিনিধি হিসেবে জামায়াতী কানেকশনসহ জঙ্গীপনার যাবতীয় কাজ করে চলছে কক্সবাজার শহরের রোমালিয়ারছড়া এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাসকারী মৌলভী নুর হোসেন। সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টেকনাফ থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে বিজিবির দায়েরকৃত মামলার ৮ পলাতক আসামির মধ্যে আরএসও প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ডাঃ ইউনুছ দুবাইতে অবস্থান করলেও অপর ৭জন এদেশে ঘাপটি মেরে রয়েছে। এদের কেউ টেকনাফ, রোহিঙ্গা ক্যাম্প, কেউ ঢাকা ও চট্টগ্রামে আত্মগোপনে রয়েছে। ডাঃ ইউনুছ হচ্ছে আরএসও’র প্রতিষ্ঠাতা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর অত্যন্ত আস্থাভাজন। যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মামলায় লড়তে বিদেশী লবিস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে আরএসও জঙ্গী ডাঃ ইউনুছের সহযোগিতা ছিল বলে সূত্র আভাস দিয়েছে। ওসি আবদুল মজিদ জনকণ্ঠকে বলেন, বিজিবির দায়েরকৃত মামলার তদন্ত মতে প্রচলিত আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
×