ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

এসডিজি বাস্তবায়নে ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সহযোগিতা চায় সরকার

দেশীয় সম্পদ থেকে অর্থ ব্যয় ৮০ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩ অক্টোবর ২০১৬

দেশীয় সম্পদ থেকে অর্থ  ব্যয় ৮০ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে ৮০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে দেশীয় সম্পদ থেকে। তাই আমাদের রাজস্ব বাড়াতে হবে। এজন্য ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সহযোগিতা চেয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বেসরকারী খাত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। তাই বেসরকারী খাতের অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকার এসডিজি বাস্তবায়ন করতে চায়। ব্যবসায়ী-নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সবাই একসঙ্গে কাজ করব। রবিবার রাজধানীর মতিঝিল এমসিসিআই মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে বেসরকারী খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সহযোগিতায় এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ সেমিনারের আয়োজন করে। এমসিসিআই সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও নিউএজ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগে আমাদের জাতীয় বাজেট বিদেশী অনুদান নির্ভর ছিল। এখন সেই দিন নেই। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক অনুদান এক শতাংশের নিচে। এসডিজি বাস্তবায়নে ৮০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে দেশীয় সম্পদ থেকে। তাই আমাদের রাজস্ব বাড়াতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা। এসডিজি অর্জন করতে হলে আমাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গবেষণা করতে হবে উল্লেখ করে এম এ মান্নান বলেন, এজন্য সবার আগে প্রয়োজন তথ্য। তাই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি সঠিক তথ্য-উপাত্ত পেতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সহযোগিতায় আগামী অর্থবছরেই নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে বলে তিনি জানান। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রয়োজন। বেসরকারী খাত সরকারকে সহযোগিতা করতে চায়। তবে সেই সহযোগিতার ক্ষেত্র সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। ড. দেবপ্রিয় বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে প্রয়োজন সবার অংশগ্রহণ। এক্ষেত্রে বেসরকারী খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে সামাজিক নিরাপত্তায় জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করছে, এসডিজি অর্জনে এ খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। একইভাবে শিক্ষায় ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে জিডিপির ৬ থেকে ৭ শতাংশ, নারী উন্নয়নে ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করতে হবে। শিল্প ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারী ও বেসরকারী খাতের সমন্বয় ছাড়া এসডিজি অর্জন সম্ভব নয়। তাই এসডিজি অর্জনে বেসরকারী খাত প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে বলে জানান তিনি। দেবপ্রিয় বলেন, বেসরকারী খাতকে এসডিজি অর্জনে অন্তর্ভুক্ত করতে গেলে সরকারকে অবশ্যই ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আর ব্যবসায়ীদের সামাজিক দায়বদ্ধতার পাশাপাশি ব্যবসায়িক নৈতিকতার ওপর জোর দিতে হবে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অন্য দেশগুলো কীভাবে এসডিজি বাস্তবায়ন করছে তা আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়াও দেশে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিং দরকার। সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বে আমাদের এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হবে। যদিও অবকাঠামো সঙ্কট, সুশাসনের অভাব ও রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন, শিশুপুষ্টি, প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ, শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা, শিশু মৃত্যু কমানো, এক বছরের কম বয়সীদের শিশুদের প্রতিষেধক দেয়া, এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থায় অনেক এগিয়ে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধে আসিফ ইব্রাহিম বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসডিজি অর্জনে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা প্রধান চ্যালেঞ্জ, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেসরকারী খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সবার আগে সরকারী সহায়তা প্রয়োজন।
×