ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হান্নান শাহর লাশ এসেছে, কাল দাফন

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

হান্নান শাহর লাশ এসেছে, কাল দাফন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহর মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আনা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তাঁর মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। রাতে মহাখালী ডিওএইচএস-এর বাসা থেকে মরদেহবাহী কফিন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরে রাখা হয়। শুক্রবার গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় আরও কয়েক দফা জানাজা শেষে কাপাসিয়ার নিজ গ্রামে দাফন করা হবে। জানা যায়, আজ সকাল ১০টায় মহাখালী ডিওএইচএস-এর বাসার কাছের মসজিদে, বেলা সাড়ে ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়, জোহরের নামাজের পর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং বাদ আসর মহাখালী গাউসুল আজম মসজিদে হান্নান শাহর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাঁর মরদেহ আবার সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হবে। শুক্রবার সকালে হান্নান শাহর মরদেহ সড়ক পথে গাজীপুর নিয়ে যাওয়া হবে। সকাল ৯টায় জয়দেবপুর রাজবাড়ী মাঠে, সাড়ে ১০টায় কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এবং জুমার নামাজের পর চালা বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে নিজ গ্রাম ঘাগটিয়ায় বাবার করবের পাশে তাকে দাফন করা হবে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় হান্নান শাহর মরদেহবাহী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। মরদেহ গ্রহণের জন্য সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সায়েদুল আলম বাবুল প্রমুখ। বিমানবন্দরে হান্নান শাহর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন তার বড় ছেলে শাহ রেজাউল হান্নান, নাতি ইরফা হান্নানসহ নিকটতম আত্মীয়স্বজন। বিমানবন্দরে হান্নান শাহর কফিন দেখেই তার ছেলে ও স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। উপস্থিত বিএনপি নেতাকর্মীদেরও অশ্রুসজল দেখা গেছে। এ সময় সাংবাদিকদের কাছে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা এই জাতীয় নেতার মৃত্যুতে শোকাহত। তিনি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তার মৃত্যুতে আমাদের যে শোক, সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে স্বৈরাচার সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করব। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পরিবারের সদস্য ও বিএনপি নেতাকর্মীরা তাঁর মরদেহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাঁর মহাখালী ডিওএইচএস-এর বাসায় নিয়ে যান। এ সময় তাঁর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। খবর পেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সেখানে গিয়ে তাঁর মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টায় সিঙ্গাপুরের র‌্যাফেলস হার্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হান্নান শাহ মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। হান্নান শাহর প্রথম জানাজা মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বাদ এশা সিঙ্গাপুরের ছেরাঙ্গন রোডের অ্যাঙ্গলিয়া জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। হান্নান শাহর মৃত্যুতে বিএনপির ৪ দিনের শোক কর্মসূচীর দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ৭৭ বছর বয়সী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহকে রাজধানীর সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। হাসপাতালে ভর্তির ২ দিন পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও ১০ সেপ্টেম্বর আবারও তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করেন চিকিৎসকরা। ১১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে করে হান্নান শাহকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সেখানে র‌্যাফেলস হার্ট সেন্টারে তাঁকে ভর্তি করা হয়। তার ছোট ছেলে রিয়াজুল হান্নান ও একমাত্র মেয়ে শারমিন হান্নান সুমি তার সঙ্গে যান। ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে সিঙ্গাপুরের র‌্যাফেলস হার্ট সেন্টারের ডাক্তার অ্যালভিন এনজির নেতৃত্বে তাঁর সফল অস্ত্রোপচার হয়। হৃদযন্ত্রের ধমনীতে যে ক’টি ব্লক ধরা পড়েছিল, সেখানে চারটি রিং বসানো (এনজিওপ্লাস্টিক) হয়। পরে অবস্থার উন্নতি হওয়ায় খুলে দেয়া হয় লাইফ সাপোর্ট। অস্ত্রোপচারের ১৩ দিনের মাথায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হান্নান শাহ।
×