নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ২৬ সেপ্টেম্বর ॥ সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী নবজাতক গালিবা হায়াত সবাইকে কাঁদিয়ে আবার ফরিদপুরের মাটিকেই শেষ ঠিকানা হিসেবে বেছে নিয়েছে। যে আলীপুর কবরস্থানে তাকে চিকিৎসকরা জীবন্ত কবর দিতে পাঠিয়ে ছিল সেই কবরস্থানেই গালিবার মৃত অবস্থায় দাফনসম্পন্ন হলো সোমবার। রবিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মারা যায় ফরিদপুরের সেই নবজাতক গালিব হায়াত। জানাজা শেষে গর্ভধারিনী মাসহ স্বজনদের চোখের জলে তাকে চিরবিদায় জানানো হয়।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় শহরের কমলাপুর এলাকার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে গালিবার মৃতদেহ আলীপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশ নেন। ইমামতি করেন ঈদগাহ জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আদিলউদ্দিন। জানাজার আগে বক্তব্য দেন- দাদা আবুল কালাম মিয়া, বাবা নাজমুল হুদা মিঠু, স্বজন বেলাল ও অধ্যাপক এমএ সামাদ।
এর আগে বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে গালিবের কফিন বাড়িতে নিলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মা, বাবা, দাদা ও দাদিসহ আত্মীয়স্বজন। এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। সেখানে গালিবার গোসল শেষে তাকে কাফনের কাপড় পরানো হয়। পরে তার পিতা মিঠু প্রায় দেড় শ’ গজ দূরের ঈদগাহ ময়দানে জানাজার জন্য গালিবাকে কোলে করে নিয়ে যায়।
দাফনের সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে গালিবা হায়াতের দাদা আবুল কালাম মিয়া বলেন, আমাদের মন ভেঙ্গে গেছে। প্রথম নাতির মুখ দেখব বলে বড় আশা করেছিলাম। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমরা বাঁচাতে পারলাম না। হয়ত এটাই আল্লাহর নির্দেশ ছিল। তিনি গালিব হায়াতের চিকিৎসায় সহযোগিতা করার জন্য চিকিৎসক ও সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বিশেষ করে উন্নত চিকিৎসার জন্য গালিবাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিতে সহযোগিতার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের মোবারকবাদ জানিয়ে সকলকে গালিবার রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া কামনা করেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের প্রতি তার কোন রাগ নেই এবং তাদের অবহেলার বিষয়ে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা সেটা জানানো হবে।
গালিবার চাচা শামীমুল হক তালুকদার জানান, রবিবার রাতে মারা যাওয়ার পর সোমবার দুপুর ১২টায় ঢাকা স্কয়ার হাসপাতাল থেকে গালিবাকে নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা হই। এর আগে স্কয়ার হাসপাতালের পাওনা এক লাখ ২৪ হাজার টাকার মধ্যে স্কয়ার কর্তৃপক্ষ অর্ধেক মওকুফ করায় বাকি টাকা পারিবারিকভাবে পরিশোধ করা হয়।
এ ঘটনার জন্য শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ড. কেএম কামরুজ্জামান সোমবার বিকেলে জানান, এই কমিটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বেগম উম্মে সালমা তানজিয়ার কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব বলে আশাবাদী।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জনের কার্যালয় গঠিত তিন সদস্যের দ্বিতীয় তদন্ত দলের প্রধান ডাঃ ঊষারঞ্জন চক্রবর্তী জানান, আমাদের তদন্তও বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে এ কমিটির আরও সাতদিন সময় প্রয়োজন হবে।
এদিকে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ অরুন কান্তি বিশ্বাস জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ মোঃ আবুল কালাম আজাদের নির্দেশনায় এ ঘটনা তদন্তে রাজবাড়ী জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্সকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরও একটি তদন্ত দল গঠন করেছে। তিনি বলেন, ওই কমিটি শীঘ্রই তদন্ত কাজ শুরু করবে।
উল্লেখ্য, শহরের কুঠিবাড়ী কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা, জেলা ক্রিকেট দলের সাবেক সদস্য নাজমুল হুদা মিঠুর স্ত্রী নাজনীন আক্তার পপি প্রসব বেদনায় কাতর হলে গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্বজনরা তাকে শহরের ডাঃ জাহেদ মোমেরিয়াল শিশু হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গাইনী বিভাগে নিয়ে অনকল চিকিৎসক রিজিয়া আলম তাকে শয্যা সঙ্কটের কথা বলে ভর্তি নিতে চায়নি। এক পর্যায়ে পপি ওই চিকিৎসকের কক্ষে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। খবর দিলে অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে বেরিয়ে রিজিয়া আলম নবজাতককে দেখে নাড়ি না পেয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।