ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ হ্যাক- ম্যানিলায় জব্দ দেড় কোটি ডলার শীঘ্রই পাওয়া যাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রিজার্ভ হ্যাক- ম্যানিলায় জব্দ দেড় কোটি ডলার শীঘ্রই পাওয়া যাবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে যে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করা হয়েছে, তা বাংলাদেশকে ফেরত দেয়ার আদেশ জারি করেছে ফিলিপিন্সের একটি আদালত। সোমবার দেশটির রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট শুনানি শেষে এ অর্থ ফিরিয়ে দিতে এই আদেশ জারি করা হয়েছে। দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে) জানিয়েছে, ওই অর্থের আইনসম্মত মালিক এখন বাংলাদেশ। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আদালতের এ রায়ের মধ্য দিয়ে ম্যানিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের যে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার মালিকানা নিয়ে আর কোন বিতর্ক থাকল না। আদালতের আদেশের ফলে খুব শীঘ্রই দেড় কোটি ডলার ফেরত পাওয়া যাবে। বাকি অর্থ পুরোপুরি ফেরত পাওয়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ সরানো হয়েছিল ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে (আরসিবিসি)। ওই ঘটনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে ফিলিপিন্স সরকার তৎপর হলে দেড় কোটি ডলারের সন্ধান মেলে। এরপর তা জব্দ করা হয়। রাখা হয় ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই অর্থের মালিকানা দাবি করে ফিলিপিন্সের আদালতে আবেদন করা হয়। ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগের প্রধান কৌঁসুলি রিকার্দো পারাস সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বাংলাদেশ এ অর্থের প্রকৃত মালিক বলে আদালতের আদেশে বলা হয়েছে। ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংকো সেন্ট্রাল পিলিপিনাসকে (বিএসপি)’ বলা হয়েছে, এ অর্থ বাংলাদেশকে হস্তান্তরের পদক্ষেপ নিতে। এ অর্থ এখন বিএসপির ভল্টে রয়েছে। গত মে মাসে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটির তদন্তের সময় এক ‘ক্যাসিনো জাংকেট’ এই দেড় কোটি ডলার ফেরত দেয়; যদিও তার জুয়ার আখড়ায় বাংলাদেশের রিজার্ভের সাড়ে ৩ কোটি ডলার গিয়েছিল বলে মনে করা হয়। আট কোটি ১০ লাখ ডলারের বাকি অর্থ কোথায় গেছে, তার হদিস এখনও মেলেনি। ফিলিপিন্স সরকার জুয়ার আখড়ার আরও আড়াই কোটি ডলার জব্দ করেছে, ওই অর্থেরও দাবি বাংলাদেশ করলেও তার সুরাহা এখনও হয়নি। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, আদালতের এ রায়ের মধ্য দিয়ে ফিলিপিন্সে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের যে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার মালিকানা নিয়ে আর কোন বিতর্ক থাকল না। এখন একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেয়া হবে বলেও জানায়। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিউনিকেশন এ্যান্ড পাবলিকেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মুখপাত্র মোকাম্মেল হক বলেন, ফিলিপিন্সের রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট তাদের শুনানি শেষে বাজেয়াফতকৃত ও ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রক্ষিত ৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার ও ৪৮৮ দশমিক ২৮ মিলিয়ন পেসো বাংলাদেশের অনুকূলে অবমুক্ত করার আদেশ জারি করেছে। এ সময় আদালতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে)। বাকি টাকা কবে বা কিভাবে আসবে সে বিষয়ে তিনি বলেন, অবশিষ্ট অর্থ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশাবাদী চুরি যাওয়া অর্থের পুরোটাই আমরা আদায় করতে পারব। এছাড়া ফিলিপিন্স সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফিলিপিন্সে বাংলাদেশ দূতাবাসকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেছে বলেও জানান তিনি। এ সময় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, ফিলিপিনো সরকারের কাছ থেকে টাকাটা অফিসিয়ালি যখন তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যাবে তখনই তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করবে। আর এ রায়ের মাধ্যমে এটা প্রতিষ্ঠিত হলো চুরি যাওয়া যে অর্থ ফিলিপিন্সে গেছে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরবর্তীতে বাকি অর্থ ফেরত আনার জন্য। জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার চুরি করার চেষ্টা চালায় হ্যাকাররা। কিন্তু তারা ম্যানিলায় রিজাল ব্যাংকের ৪ এ্যাকাউন্টে ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠাতে সক্ষম হয়। গত মে মাসে ফিলিপিন্সের সিনেট শুনানিতে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী চুরি যাওয়া রিজার্ভের মধ্যে ৩৫ মিলিয়ন ডলার আছে বলে জানান। কিন্তু তিনি মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত দেন। বাকি অর্থের হদিস এখনও জানা যায়নি। উদ্ধার হওয়া এ অর্থ ফেরত পেতে ফিলিপিন্সের আদালতে বাংলাদেশের একটি আবেদন বিচারাধীন ছিল। চুরির ঘটনাটি বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, তাও ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবর প্রকাশের পর। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গবর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়েও বড় ধরনের রদবদল আনা হয়। ওই ঘটনা তদন্তে সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি গত ৩০ মে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। প্রতিবেদনটি আগামী বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
×