ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজারহাটে চামড়ার বাজারে ধস

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রাজারহাটে চামড়ার বাজারে ধস

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মোকাম রাজারহাটে কোরবানি পরবর্তী প্রথম হাটেই চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। এ হাটে এসে হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। মাঠ পর্যায়ে বেশি দামে কিনে অস্বাভাবিক মূল্যের লবণ ব্যবহার করে হাটে এসে পানির দরে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। এ বছর লবণ ও পুঁজি সঙ্কটে বিপাকে পড়েছে যশোর অঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীরা। লবণের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ও ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা আদায় না হওয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। লবণ সঙ্কটে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তৃণমূলের ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে ট্যানারি মালিকরা যশোরের আড়তদারদের বকেয়া প্রায় ১০ কোটি টাকা পাওনা পরিশোধ করেনি। এজন্য তারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। এতে স্থানীয় চামড়া বাজারে ধস নেমেছে। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া ক্রয় ও বেশি দামে লবণ ক্রয় করে সংরক্ষণ করে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে চামড়ার দাম হ্রাস পাওয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় ও দেশের অন্যতম বৃহত্তম পশু চামড়ার হাট যশোরের রাজারহাটের ব্যবসায়ী এসব কথা জানিয়েছেন। ঢাকার পরে দেশের অন্যতম বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাট। সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। যশোর ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে হাজির হয় এই হাটে। রাজারহাটের এই চামড়াহাটকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান। দুই শতাধিক আড়ত রয়েছে এই মোকামে। প্রতি কোরবানির ঈদে রাজারহাটে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে। এবার ট্যানারি মালিকরা গরুর চামড়া বর্গফুট ৪০ টাকা আর ছাগলের দাম নির্ধারণ করেছেন ২০ টাকা হারে। তারা বলছেন, রাজারহাটে চলতি মাসে গরুর চামড়া ৬০ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ২৪ টাকা ফুট বিক্রি হয়েছে। চলতি বছর কোরবানিতে নির্ধারিত দামে কাঁচা চামড়া ক্রয় করতে পারেনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। শনিবার রাজাহারহাটের ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পেয়েছে লবণের। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করেছে। এরপর আবার লবণের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে চামড়ার খরচ বৃদ্ধি পেলেও বাজারে দাম বাড়েনি। আবার ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ না করায় আড়তদারও বিপাকে পড়েছেন। সাতক্ষীরা শ্যামনগরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চামড়া ব্যবসায়ী নিমাই দাস জানালেন, নির্ধারিত দামে তিনি চামড়া কিনতে পারেননি। চড়া দামে চামড়া ক্রয় করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে লবণের দামও বেশি। গরুর চামড়া প্রতি ২ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। তবে রাজারহাটে তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকার বেশি দাম পাননি। যশোর নিউ মার্কেট এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী সজীব দাস বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ক্রয় করা হয়েছে কাঁচা চামড়া। এই চামড়া সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ লবণ। সেই লবণের দাম আকাশ ছোঁয়া হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়েছে। গত বছর যে লবণ ৫৭০ টাকায় প্রতি বস্তা কিনেছি সেই লবণ এবার ১ হাজার ৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। চড়া দামে লবণ কিনে চামড়া সংরক্ষণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল মজিদ পলাশ বলেন, ট্যানারি মালিকরা বকেয়ার ২৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করেছেন। আড়তদারদের ৭৫ শতাংশ টাকা বকেয়া রয়েছে। পুঁজি সঙ্কটে আড়তদাররা চামড়া কিনতে পারছে না। এজন্য চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের কথা কল্পনা করা যায় না। চামড়া সংরক্ষণে লবণের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গতকাল প্রতি বস্তা ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে লবণ কিনেছি। বাড়তি দামে লবণ ক্রয় করায় চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দামে কাঁচা চামড়া ক্রয় করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বাড়তি টাকা ব্যয় করে চামড়া সংরক্ষণ করছেন। একই সঙ্গে ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ না করায় আড়তদাররা বিপাকে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজারহাটে চামড়ার মোকামে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এবার চামড়া পাচারের আশঙ্কা নেই।
×