ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য

পায়রা বন্দর নির্মাণে চীন ও ভারত অংশীদার হতে পারে

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পায়রা বন্দর নির্মাণে চীন ও ভারত অংশীদার হতে পারে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের যৌক্তিক ফি নির্ধারণ না করলে তা কার্যকর হবে না। আর দুই দেশের মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়াতে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য ব্যবহারকারী ভারতের উন্নয়ন অংশীদারিত্ব বেশি প্রয়োজন। এছাড়া কানেকটিভিটি বাড়াতে হলে অবকাঠামো উন্নয়নে প্রাধান্য দিতে হবে। শনিবার রাজধানীতে ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’-শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, পায়রা সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে ভারত ও চীন একযোগে অংশীদার হতে পারে। ডেইলি স্টার সেন্টারে এই সেমিনারের আয়োজন করে ইংরেজী দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার এবং ইনস্টিটিউট অব পলিসি এ্যাডভোকেসি ও গবর্নেন্স। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান। সেমিনারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, পটুয়াখালীর পায়রায় সরকার একটি যুগোপযোগী সমুদ্রবন্দর গড়ে তুলতে চায়। এই সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে ভারত ও চীন একযোগে অংশীদার হতে পারে। তিনি আরও বলেন, পায়রা সমুদ্রবন্দর হবে আধুনিক একটি বন্দর। ভারত ও চীন একযোগে সেখানে বিনিয়োগ করতে পারে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে দরিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসছে। ২০৩০ সালের আগেই ২০২৪ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে দাঁড়াবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে সীমান্তহাট রয়েছে, তার পরিধি আপাতত আর বাড়বে না। তবে নতুন সীমান্তহাট চালুর বিষয়ে আরও চিন্তা ভাবনা করে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, ভারতে বাংলাদেশী চ্যানেল দেখানো হয় না। সেখানে ভারতীয়রা বাংলাদেশী চ্যানেলগুলো দেখতে পারেন না। এটা একটি হতাশাজনক দিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, অনেকে সমালোচনা করেন ট্রানজিটের ফি নিয়ে। তারা বলেন, শুল্ক অনেক কম ধরা হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি ট্রানজিট ফি বেশি ধরি তাহলে কি ট্রানজিট কার্যকর হবে? ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের যৌক্তিক ফি নির্ধারণ করা না হলে তা কার্যকর হবে না। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও কখনও খারাপ দৃষ্টিতে দেখা ঠিক নয়।সেমিনারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান বলেন, ভারতকে নৌ-ট্রানজিটের সুযোগ দেয়া হলেও আশুগঞ্জ নৌ বন্দর এখনও জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। দু’দেশের কানেকটিভিটি বাড়াতে হলে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যবহাকারী দেশের অংশীদারিত্ব থাকতে হবে। সেমিনারে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের জন্যই সম্পর্ক উন্নয়ন প্রয়োজন। নিরাপত্তা দু’দেশের প্রাথমিক গুরুত্ব হলেও পানি বণ্টন একটি চ্যালেঞ্জ। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনার ড. আদর্শ সোয়াইকা বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতীয় ঋণের প্রথম অংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। দ্বিতীয় অংশ তথ্যপ্রযুক্তিসহ জনশক্তির সক্ষমতার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্বও বাড়ছে। আগামীতে এই অংশীদারিত্ব আরও জোরদার হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। অতীতের চেয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বতর্মানে সবচেয়ে বেশি কার্যকর সময় পার করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সেমিনারের বিভিন্ন পর্বের আলোচনায় বক্তারা বলেন, ভারতের মতো প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও সহযোগিতাকে গুঁড়িয়ে ফেলা উচিত নয়। দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক গড়তে পারলে উভয়েই লাভবান হবে। দুই দেশেরই উচিত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আরও উচ্চ মাত্রায় পৌঁছানো। এ লক্ষ্যে একযোগে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত, সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার ড. রজিত মিত্তার, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম, কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য পঙ্কজ ট্যান্ডন, ভারতের দি হিন্দু পত্রিকার কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিভাগের সম্পাদক সুহাসিনী হায়দার প্রমুখ। রামপাল প্রকল্প বাতিল হলে কোন লাভ হবে না ॥ প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, বিরোধিতাকারীদের প্রচারের কারণে রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ বাতিল হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। বরং খুলনা-যশোরের দরিদ্রতা কমানোর সুযোগ হাতছাড়া হবে। ডেইলি স্টার আয়োজিত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শীর্ষক সেমিনার শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ড. মসিউর রহমান আরও বলেন, রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্রের বিরোধিতাকারীদের উচিত বিচ্ছিন্নভাবে প্রচার না চালিয়ে তাদের বৈজ্ঞানিক যুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা, যা সরকার বিবেচনা করতে পারে, আদো এই প্রকল্প সুন্দরবনের ক্ষতি করবে কি না।
×