ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনজিও ও সমিতির নামে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এনজিও ও সমিতির নামে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ১৬ সেপ্টেম্বর ॥ সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেন দরিদ্র মানুষ। আর এ অর্থ দিয়ে সংসারের চাহিদা মিটিয়ে কিছুটা হলেও আয় করতে চান সকলেই। তাই কষ্টের উপার্জিত জমানো অর্থ দিয়ে আরও অর্থ উপার্জনের লক্ষ্য থাকে তাদের। আর এসব সহজ-সরল ও দরিদ্র ঘরের মানুষকে এক শ্রেণীর প্রতারক দিনের পর দিন ঠকিয়ে যাচ্ছে। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতারকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে অনেকে মামলা-হামলা, হুমকি-ধামকির শিকার হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন নামে ভুয়া সমিতি ও এনজিওগুলোতে অর্থ জমা করেন শত শত দরিদ্র ও সহজ-সরল মানুষ। অর্ধ শতাধিক ভুয়া এনজিও ও সমিতি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে উধাও হয়ে গেছে। বিশেষ করে উপজেলার ভুলতা, গোলাকান্দাইল ও রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন এলাকায় প্রতারণার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। ঋণ প্রদানের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয় গ্রহণ ও অধিক লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে এখন এসব এনজিও ও সমিতি উধাও হয়ে গেছে। ভুয়া এনজিও ও সমিতির প্রতারণার কারণে প্রকৃত এনজিও ও সমিতি কর্তৃপক্ষ ও গ্রাহকরা আতঙ্কে থাকছে এবং বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের হিমালয় শ্রমজীবী, পূর্বাচল শ্রমজীবী, নবজাগরণ শ্রমজীবী, শ্যামল বাংলা শ্রমজীবী, মায়ের আচল শ্রমজীবীসহ আরও বেশ কয়েকটি সমবায় সমিতি শতভাগ কার্যক্রম চালু রাখছে। এসব সমিতির শতভাগ কার্যক্রম থাকলেও ভুয়া ও প্রতারক সমিতির কারণে তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি হতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সবুজ বাংলা মাল্টিপারপাস নামে সমিতিটির চেয়ারম্যান রুহুল আমিন গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গ্রাহকরা তাদের গচ্ছিত অর্থ চাইতে গেলেই দেয়া হয় মামলা-হামলার হুমকি। স্থানীয় কৃষকরা তাদের শেষ সম্বলটুকু এ সমিতিতে গচ্ছিত রেখে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাত করে রুহুল আমিন এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার করছে না। পুশী মানবিক উন্নয়ন সংস্থা রূপগঞ্জ শাখা নামে একটি এনজিও ভুলতা এলাকায় গড়ে তোলেন নবী হোসেন নামে এক ব্যক্তি। এরপর ধীরে ধীরে এর সদস্য সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৩শ’। প্রতিটি সদস্যের কাছ থেকে সঞ্চয় হিসেবে প্রায় ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া অধিক লাভ দেখিয়ে বেশ কয়েক সদস্যের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা জমা রাখেন। মাঝে মধ্যে জমাকৃত টাকার লাভের অংশ সদস্যদের দেয়া হতো। গত এক বছর আগে এই এনজিওটি হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়। এরপর সদস্যরা তাদের উপার্জিত জমা রাখা অর্থ হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়েও এনজিওটির কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। একই অভিযোগ মীর মার্কেটে অবস্থিত আদদীন মাল্টি-পারপাস নামে এনজিওর বিরুদ্ধে। এনজিওর ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান সদস্যদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। বরপা এলাকার প্রভাতী মাল্টিপারপাস নামে অপর একটি এনজিও শত শত সদস্যের অর্থ প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাত করেছে। সদস্যরা এনজিও কর্মকর্তাদের কাছে তাদের পাওনা চাইতে গেলে দেই দিচ্ছি করে মাসের পর মাস ঘুরিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, প্রতিটি এনজিও বা সমিতির সরকারী রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। যদি কোন প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করে বা সদস্যরা যদি প্রতারণার অভিযোগ করেন তাহলে আমরা তদন্ত করে রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ ব্যবস্থা নেব।
×