ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘শ্রমিকদের বাঁচাও বাঁচাও আওয়াজ আর শোনা যায়নি’

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

‘শ্রমিকদের বাঁচাও বাঁচাও আওয়াজ আর শোনা যায়নি’

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ‘টাম্পাকো নামের ওই কারখানায় বিস্ফোরণের পর ওই ভবনের চার তলার জানালা দিয়ে কারখানার বেশ কিছু কর্মী বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকার করছিল। আমরা মই নিয়ে তাদের নামিয়ে আনতে গিয়েছিলামও, তবে প্রচ- তাপ ও ধোঁয়ার কারণে তাদের উদ্ধার করতে পারিনি। এক পর্যায়ে ওই শ্রমিকদের আওয়াজ আর শোনা যায়নি’। কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন (৩৫)। আটকেপড়াদের উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হন তিনি। টঙ্গী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জনকণ্ঠকে তিনি এসব কথা বলেন। নিজাম উদ্দিনের মতো স্থানীয় অনেকেই অংশ নিয়েছিলেন উদ্ধার কজে। টঙ্গীতে বিসিক শিল্পনগরী এলাকার টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে সৃষ্ট আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও কাজ করেছে। এর আগে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। দুর্ঘটনার সময়ের বর্ণনা দিয়ে ওই কারখানার শ্রমিক মনোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার সকাল ৬টার শিফটে কাজে যোগ দেয়ার জন্য কয়েক মিনিট আগেই কারখানায় প্রবেশ করি। ভেতরে ঢুকেই শুনি সিঁ সিঁ শব্দ। টিফিনবক্স আলমারিতে রেখে খাতায় সই দিয়া একজনকে জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে? সে বললো গ্যাস পাইপ লিকেজ। গ্যাস অফিসে জানানো হয়েছে, তখন কেউ ঠিক করতে আসেনি। এরপর ভয়ঙ্কর শব্দ, ধপাস করে পড়ে গেলাম। তিনি বলেন, মিলনকে বলি আমাকে বাঁচাও। মনোয়ার ওই কারখানার মেশিন অপারেটরের কাজ করেন। মনোয়ার হোসেন বলেন, রাতে ২০/২৫ জন কাজ করছিল। সকালের শিফটে আসা মিলে প্রায় দেড় শ’ জন তখন ভেতরে ছিল। যারা রাতে ডিউটি করছিল তারা ভেতরে ছিল। আর আমরা কেবল গেটের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকি। গ্যাস এমন ভয়ংকর হতে পারে তাতো কেউ জানতাম না, বলেন মনোয়ার। এ কারখানায় তিন শিফটে মোট সাড়ে চার শ’ কর্মী কাজ করেন বলে জানান তিনি। সকাল ৬টার শিফটে যোগ দেয়ার জন্য কয়েক মিনিট আগে প্রবেশ করেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বিজুল সরকারপাড়ার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সেলেটার-১১ ইউনিটে কাজ করতেন। তিনি বলেন, ‘ভেতরে ঢুকে নিচতলায় কেবল মেশিন পর্যন্ত গেছি, এরপর আর কিছুই কইতে পারি না।’ রাজ্জাকের ডান পা, বাম কাঁধে আঘাত লেগেছে বলে জানান চিকিৎসকরা। তিনিও কাজ করছেন গত ৬ বছর। রাতের শিফট শেষ করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আহত হয়েছেন সলভিন লেস সেকশনের কর্মী আরিফ ইসলাম। তিনি বলেন, গেটে বের হওয়ার সময় শুনি বিকট শব্দ, আগুন। আমার গায়ে কি যেন পড়লো। পরে আমার কলিগ মেডিক্যালে নেয়। শুনেছি বয়লার বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্যাকেজিং কারখানায় দাহ্যবস্তু থেকে বয়লার বিস্ফোরণের প্রাথমিক কারণটি জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ঘটনাস্থলের কাছে ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তথ্যবোর্ড থেকে জানা যায়, কেমিক্যাল এবং কেমিক্যাল জাতীয় দাহ্যবস্তু থাকায় এবং বিস্ফোরণের ফলে ভবনটির কিছু অংশ ধসে পড়েছে।
×