ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজি

হাতি-

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

হাতি-

সমুদ্র হক ॥ তাহলে হাতিটি কার! কোন্ বনের এই হাতি! লোকালয়ে এসেছে কোথা থেকে! এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে একটি হাতিকে ঘিরে। কিছুদিন আগে বন্যার পানিতে ভেসে আসা ভারতীয় এক হাতিকে নিয়ে কিই না তোলপাড়। দীর্ঘ সময় পানির মধ্যে ছিল। সহজে ডাঙ্গায় তোলা যায়নি। শেষ পর্যন্ত শিকল বেঁধে যদিও বা ডাঙ্গায় তোলা গেল তখন বাঁচানো গেল না। তবে এই হাতি ডাঙ্গায় চলাফেরা করছে। ঘুরছে শহরে বন্দরে। আজ এক শহর কাল আরেক শহর। বিভিন্ন জেলাতেও যায়। বগুড়া অঞ্চলে এই হাতি এসেছে অনেকদিন আগে। তা তো বছর কয়েক হবেই। গ্রামে মানুষের বাগানের কলা গাছ খায়। দুই তিনজন মাউত হাতিকে পোষ মানিয়েছে। তারাই হাতির পিঠে চড়ে মাথায় ত্রিশূল খঁচিয়ে যা নির্দেশ করে হাতিও তাই করে। কোন প্রতিষ্ঠান ও দোকানের সামনে হাতি শুঁড় উঁচিয়ে কিছু চায়। আসলে হাতি কিছু চায় না, চায় মাউত। এই শুঁড়ে টাকা গছিয়ে না দিলে শুঁড় নামায় না। তা সামান্য টাকা হলে হবে না। বেশি দিতে হয়। ছোট দোকান হলে ১০ টাকার নিচে নয়। বড় দোকানের হাতির শুঁড়ের ‘চাওয়ার’ দর বেশি। টাকা না পেলে শুঁড় নামায় না। কৌতূহলী লোকজন ভয়ও পায় কিছুটা। তারপরও বিনোদন পায়। মহাসড়কে এই হাতির রাজত্ব আরও বেশি। যত গাড়ি যায় প্রায় গাড়িকেই শুঁড় উঁচিয়ে থামায়। বাস, প্রাইভেটকার, মিনিবাস, ট্রাক কিছুই বাদ যায় না। হাতিকে টাকা না দিলে কখনও ভাংচুরও করে। গত ২৭ আগস্ট শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা ও নেপালের একটি প্রতিনিধিদল মাইক্রোবাস যোগে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে যাওয়ার সময় হাতির কবলে পড়ে। গাড়িতে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষক দেশের বরেণ্য নৃত্যশিল্পী তামান্না রহমান ও নেপালের চর্যা নৃত্য শিক্ষক চন্দ্রমান মুনিকরসহ ৭ জন। তারা এসেছিলেন আগামীতে মহাস্থানগড় যে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হতে যাচ্ছে সেই বিষয়ে সাইট দেখতে। হঠাৎ এই হাতি মাইক্রোবাসের সামনে দাঁড়িয়ে শুঁড় উঁচিয়ে টাকা দাবি করে। তারপর শুঁড় দিয়ে আঘাত করে গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙ্গে দিয়ে গাড়িতে আঘাত করে। গাড়ির আরোহীরা শিবগঞ্জ থানার সহযোগিতা চান। পুলিশ গিয়ে হাতির মাউতকে ধরে থানায় আনে। মাউত জানান, এই হাতি বুলবুল সার্কাস পার্টির। পুলিশ বুলবুল সার্কাস পার্টির মালিক শাহীনূর রহমানকে হাতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এই হাতি বুলবুল সার্কাস পার্টির নয়। প্রশ্ন ওঠে তাহলে এই হাতি কার! পুলিশও এই হাতি কার তা নিয়ে খোঁজ করেনি। এখন পর্যন্ত এই হাতি কার তার সঠিক খবর মেলেনি। মহাস্থান এলাকার লোকজন জানান, হাতিটি বুলবুল সার্কাস পার্টিরই। বিপাকে পড়লে সার্কাস পার্টির মালিক তা স্বীকার করেন না। এই হাতিকে দিয়েই মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন এবং শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। চাঁদার অর্থ ভাগাভাগি করে নেয় সার্কাস পার্টির লোকজন ও হাতির মাউতরা। হাতির মাউত বলেন, এই অর্থে হাতির খাবার যোগাড় করা হয়। এলাকার লোকজন জানান, বছর কয়েক আগে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মহাস্থান এলাকায় পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজির গাড়ি গতিরোধ করে এই হাতি। পরে মাউত হাতিকে পুকুরে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান। তারপর হাতি নিজেই রাস্তায় ওঠে। কিছুদিন হাতি একাকী থাকার পর মাউতেরা ফিরে আসে। মহাস্থানগড়ের লোকজন জানান, হাতিটি ঐতিহাসিক স্থান জিয়ত কূপের কাছে থাকে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চাঁদা তুলে ১০/১২ দিন পর পর ফিরে আসে। বগুড়া শহরে মাঝে মধ্যেই এই হাতিকে শুঁড় উঁচিয়ে টাকা আদায় করতে দেখা যায়। কৌতূহলী মানুষের প্রশ্নÑ এই হাতি কার? কেন চিড়িয়াখানায় না রেখে শহরে মহাসড়কে ঘোরানো হচ্ছে!
×