ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ ২ জিলহজ। জিলহজ মানে হজের প্রতীক মাস। বিশ্বজুড়ে এখন পবিত্র হজ অনুষ্ঠানমালার তোড়জোড়। পবিত্র হজের মাধ্যমে একটি নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ আবার সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। হজ একটি ফরজ ইবাদত। নামাজ, রোজা, যাকাত যেমন ফরজ ইবাদত, তেমনি সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য হজ একটি অন্যতম বরকতপূর্ণ অবধারিত কর্তব্য। হজ মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মান ও ইজ্জতের আসন দান করে, সৌভাগ্যের দরজা খুলে দেয় প্রকৃত হাজীর জীবনে। পবিত্র বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত শরীফের একটি হাদিসে আছে, আমাদের প্রিয়নবী হুজুর (স) ইরশাদ করেছেন, যখন তুমি হাজীদের সঙ্গে সাক্ষাত করবে, তখন তুমি তাকে সালাম করবে, মুসাফাহা করবে এবং তার বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে তাকে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুরোধ করবে। কেননা তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত। হযরত রাসূলে কারীম (স) এর হাদীস হতে একজন হাজী সাহেবের বড় ধরনের সামাজিক মর্যাদার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রকৃত হাজীদের ব্যবসা-বাণিজ্য, ওয়াজ-নসিহত, লেনদেন, কথাবার্তা মানুষ ভক্তির সঙ্গে গ্রহণ করে। একইভাবে সত্যিকারের হাজীদের জন্য আখিরাতে রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কারের সুসংবাদ। অনেক সামর্থ্যবান হাজী একবার ফরজ হজ সম্পাদন করা সত্ত্বেও পুনঃপুনঃ হজ ও উমরা করেন আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনে ও নবীপাক (স) এর মহব্বতে। আসলে মু’মিনদের মন-মানসিকতা এমন হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এর ব্যতিক্রম স্বভাবের মানুষও নিতান্ত কম নয়। যাদের আল্লাহ অশেষ অনুগ্রহ করেছেন, দিয়েছেন ধনদৌলত, টাকা-পয়সা, ব্যবসা-বাণিজ্য। এসবের পয়লা নম্বর দাবি হলো আল্লাহপাকের ঘরের জিয়ারত। কিন্তু দেখা যায়, এ ধন-সম্পত্তিই যেন তার জন্য কাল হয়েছে। তার চাহিদা এবং ব্যস্ততা এত বেড়ে গেছে যে, হজে যাওয়ার তার সময়-ই হয়ে উঠে না। আমার জানামতে, এমন অনেক দুর্ভাগা ধনী রয়েছে, যাদের আল্লাহতায়ালা কোটি কোটি টাকা দেয়া সত্ত্বেও জীবনে হজ নসিব হয়নি; কেউ কেউ যথেষ্ট বয়স পাওয়া ও দুনিয়াদারি করার সুযোগ ভোগ করা সত্ত্বেও হজের সুযোগ গ্রহণ না করে দুনিয়া হতে চিরবিদায় গ্রহণ করেছেন। শরীয়তের দৃষ্টিতে এ এক দুর্ভাগ্যের সংবাদ। ইখলাসের সঙ্গে যারা হজ করতে পারেন সেসব হাজীদের জন্য রয়েছে চারটি পুরস্কারÑ ক. গুনাহ মাফ : হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলে পাক (স) বলেছেন যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করল এবং ওই হজের জন্য খায়েশাত সংবলিত অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকল সে হজ থেকে এমন নিষ্পাপ হয়ে ফিরল যেন সে আজই তার মাতৃগর্ভ থেকে আগমন করল। খ. জান্নাতের সুসংবাদ : হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলে পাক (স) বলেছেন, এক উমরাহ অন্য আরেক উমরাহর মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ। আর হজের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত কিছুই হতে পারে না। গ. দারিদ্র্যতা দূর হওয়া : হযরত ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (স) বলেছেন হজ ও ওমরাহ গুনাহসমূহকে দূর করে দেয় ও ফকিরীকে মিটিয়ে দেয়। আগুনের ভাট্টি যেমন স্বর্ণ, রৌপ্য ও লোহার ময়লাকে দূর করে দেয়। ঘ. সাফায়াত : একজন আল্লাহতে মজনু হাজী চার শ’ লোককে সাফায়াত করে জান্নাতী করার সৌভাগ্য লাভ করে থাকে। পক্ষান্তরে, সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে হাজী যখন উক্ত চার পুরস্কার নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে, তখন চারজন শত্রু তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায় (১) নফস (২) শয়তান (৩) আত্মীয়-স্বজন (৪) বিবি-বাচ্চা। এ চার দুনিয়ামুখী ফ্যাসাদ থেকে বেঁচে থাকার কোশেশ ও সামর্থ্যই একজন হাজীর জন্য বড় কথা।
×